কলকাতা, ২৭ ফেব্রুয়ারি (হি. স.) : কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের কনভয়ে হামলার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। রবিবার সন্ধ্যায় রাজভবন থেকে জারি হয়েছে কড়া বিবৃতি। ঠিক তার পরদিন তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’য় রাজ্যপালের কড়া সমালোচনা।
বাংলার রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের সঙ্গে শাসকদলের মধুচন্দ্রিমা শেষের পথে। কোচবিহারের দিনহাটায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের উপর হামলা নিয়ে রাজ্যপালের বিবৃতির কড়া সমালোচনা করল তৃণমূল। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, রাজ্যপাল একতরফা বিবৃতি দিয়েছেন। উনি নিশীথ প্রামাণিকের সঙ্গে কথা বলে বিজেপির এজেন্ডা অনুযায়ী বিবৃতি দিলেন।
কুণালের পরামর্শ, বিজেপির দূত না হয়ে বাংলার মানুষের দূত হয়ে নিরপেক্ষ ভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করবেন রাজ্যপাল, এটাই আশা করি। সোমবার তৃণমূলের দৈনিক মুখপত্রে প্রথম পাতায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়েছে রাজ্যপালকে নিয়ে কুণালের বক্তব্য। বিজেপির নয়, বাংলা দূত হন রাজ্যপাল, শীর্ষক এক লম্বা প্রতিবেদনে কুণালের যে মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে, তাতে রাজ্যপাল সম্পর্কে কড়া কড়া কথা বলা হয়। মুখপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, জগদীপ ধনকরের পথ অনুসরণ করেছেন সি ভি আনন্দ বোস। তবে কি ফের ধনকর জমানার মতো রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের সম্পর্কের অবনতি শুরু হল, উঠছে প্রশ্ন।
সোমবার ‘জাগো বাংলা’র সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, “রাজ্যপাল যে আসলে বিজেপিরই গোপন নীতি বাস্তবায়িত করার প্রতিনিধি তা প্রমাণ করেছিলেন জগদীপ ধনকর। প্রাক্তন রাজ্যপালের পথ দ্রুত অনুসরণ করার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন বর্তমান রাজ্যপাল।” রাজ্যপাল একতরফা বিজেপির কথা শুনে বিবৃতি দিয়েছেন বলেও দাবি করা হয় সম্পাদকীয়তে।
এছাড়া বিএসএফের পদস্থ আধিকারিকের বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণের অভিযোগের প্রসঙ্গও এদিনের সম্পাদকীয়তে উঠে এসেছে। কেন রাজ্যপাল এ ব্যাপারে একেবারে নিশ্চুপ, সে প্রশ্নও তোলা হয়েছে।দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছিলেন প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। রাজভবন এবং নবান্নের সঙ্গে সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটে। কখনও শিক্ষাক্ষেত্র আবার কখনও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অস্বচ্ছতার অভিযোগে অতীতে বারবার সরব হতে দেখা গিয়েছে প্রাক্তন রাজ্যপালকে। রাজভবন-নবান্নের মধ্যে চিঠি চালাচালি, টুইট-পালটা টুইট লেগেই থাকত সেই সময়। তবে রাজ্যের বর্তমান রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সে সমস্যা দূর হয়েছিল অনেকটাই।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দরাজ প্রশংসাও শোনা গিয়েছিল বর্তমান রাজ্যপালের গলায়। রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে রাজ্যপালের উদ্বোধনী ভাষণ নিয়েও কম জলঘোলা হয়নি। তবে তারপর দিল্লি সফর থেকে ফিরে রাজ্যপাল তাঁর প্রধান সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীকে সরিয়ে দেন। আর তারপর দিনহাটা কাণ্ডে কড়া বিবৃতি। একের পর এক ঘটনা ধনকর জমানার স্মৃতি ফেরাচ্ছে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।