BRAKING NEWS

জাতীয় সড়ক নির্মাণে লাগামহীন দুর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিনিধি, চুড়াইবাড়ি, ৯ অক্টোবর ।। সময়ের কাজ সময়েই শেষ করতে হবে, নির্দেশ ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। যদিও ভারত সরকারের প্রজেক্টে নব নির্মিত বিকল্প জাতীয় সড়ক। কিন্তু তদারকির দায়িত্ব রয়েছে রাজ্য সরকারের। এই মহাসড়কের কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। তাছাড়া মন্থর গতিতে চলছে কাজও। যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ২০২৩ সালের নির্বাচনের পূর্বেই রাজ্যবাসীকে উপহার দিতে চেয়েছিলেন এই মহা সড়কের ত্রিপুরা রাজ্যের অংশটুকু। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এই স্বপ্ন কতটুকু বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।


প্রসঙ্গত, নবনির্মিত এই বিকল্প জাতীয় সড়কের কৈলাশহর থেকে কুর্তি প্যাকেজ নাম্বার ১ এবং ২ এর কাজের বরাত পেয়েছে এএমসি কোম্পানি। কৈলাশহর থেকে কুর্তি প্যাকেজ নাম্বার ৩ এর অর্থাৎ ত্রিপুরা অসম সীমান্ত ঝেরঝেরী থেকে ধর্মনগরের রাঘনা পর্যন্ত ১১.২৫০ কিমি কাজের বরাত পেয়েছে একেসিসি কোম্পানি। কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রজেক্ট হেড ম্যানেজার তাপস হাজরাকে। এখানেও একটা বিশাল জালিয়াতি করা হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রের খবর। কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রজেক্ট গুলোতে কাজগুলো অধিকাংশ কোম্পানিই করে থাকে। তাই একেসিসি নির্মাণ সংস্থা তাপস হাজরাকে প্রজেক্ট হেড বানিয়ে ৩ নং প্যাকেজের দায়িত্ব দিয়েছে। সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ১৮ মাসের। পরে যদিও ছয় মাস বৃদ্ধি করা হয় বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে। মোট কথা, দু’বছরের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবার ছিল। কাজটি যথারীতি শুরু হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে। কিন্তু তাপস হাজরার কাছে প্রায় ৮৩ কোটি টাকার কাজ সঠিক সময়ে সম্পন্ন করার মত নেই কোন নির্মাণ সামগ্রী। নেই কোন ধরনের মেশিনারিজও। শুধুমাত্র বিকল হওয়া একটি জলের গাড়ি এবং দু-তিনজন সাইট ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া একটি বাইকও নেই তাদের কাছে বলে অভিযোগ।


শূন্য হাতে ত্রিপুরায় এসে কাজ করতে গিয়ে যা যা প্রয়োজন তা এনেছেন স্থানীয়দের কাছ থেকে। তাও আবার সময় মত মাসিক ভাড়া না মেটাতে পেরে থানা পুলিশের ভয় দেখাতে থাকেন বলেও অনেকেই জানিয়েছেন। কারণ তারা তাদের ন্যায্য পাওনা টাকা পাওয়ার আশায় ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে পারছেন না। এমনকি স্থানীয় কিছু ঠিকাদারদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন, যাদের এসব কাজের কোন অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। তাও আবার কিছুদিন কাজ করানোর পর এক ঠিকেদারকে ছেড়ে দিয়ে অন্য ঠিকেদার ধরেছেন তাপস হাজরা, এমনটা অভিযোগ। কিছুদিন কাজ করার পর ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের মেশিনারিজ তুলে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়রা। তাতেও আবার হুমকির শিকার হতে হয় স্থানীয়দের।


অপরদিকে এএমসি কোম্পানি তাদের থেকেও বড় কাজ পেয়ে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে দিবারাত্র দ্রুতগতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তুলনায় তাদের দশভাগের একভাগও কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়নি একেসিসি। শুধু তাই নয়,কাজের গুণগত মান নিয়ে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ জানালে তাদেরকে আইনের বেড়াজালে ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কিছুদিন পূর্বে স্থানীয় এলাকাবাসী কাজের গুনমান এবং তাদের যাতায়াতের রাস্তা নিয়ে অভিযোগ করতে এসে তাপস হাজরার পেশী শক্তির শিকার হতে হয়েছে। এমনকি মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে কদমতলা থানায় মামলাও করা হয়েছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর।


শুধু তাই নয়, ২৮২১৭ এবং ২৮৬২৫ নং চ্যানেলের মিনি দুটি ব্রিজের কাজ দেখে সকলের চক্ষু চড়কগাছ হবে। উইং ওয়ালের স্ট্রাকচার না বসিয়ে দুপাশের দুটি মেইন স্ট্রাকচার বসিয়ে নিচের আরসিসি-তে কোন প্রকার বালু ফিলিং কিংবা বেইস এর নিচে আরসিসি ঢালাই না করে কাদা মাখানো জলের মধ্যে একটি জালি বসিয়ে উপরের অংশটা ঢালাই করে নিচ্ছেন। তাও আউটসাইডের মাটির ধস পড়ে সম্পূর্ণ এলাইনমেন্ট ছত্রভঙ্গ হয়ে যাচ্ছে। সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো, তাপস হাজরার সহযোগীরা কোন মিকচার মেশিন ব্যবহার না করে প্রতিটি আরসিসি অর্থাৎ ঢালাইয়ের কাজ রাতের অন্ধকারে ম্যানুয়ালি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। একটি জাতীয় সড়কের কাজে এভাবে লাগামহীন দুর্নীতি হলে কাজের ভবিষ্যৎ কি হতে পারে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে হাজারো প্রশ্ন। পাশাপাশি ভারত সরকারের অধীনস্থ এনএইচআইডিসিএল-র মত স্বনামধন্য সংস্থাটিও বদনাম হবে।


এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ পেয়ে সংবাদকর্মীরা রাস্তার কাজটি পরিদর্শন করতে গেলে তাঁদের দেখেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন তাপস হাজরা ও তাঁর সহযোগীরা। তারা এ-বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলতে চাইছেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *