আগরতলা, ৩০ সেপ্টেম্বর (হি. স.) : ন্যায়ালয়ের ভূমিকা প্রেসার কুকারে থাকা প্রেসার বাল্বের মতো। বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে বা কোনও মামলা নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে যে কোনও এক পক্ষ নিরাশ থাকেন। আজ অমরপুর মহকুমা আদালতের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এ এ কুরেশী। তাঁর কথায়, সঠিক পথে মানুষের ন্যায় সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাকে অটুট রাখতে হবে। ন্যায় প্রার্থী সমস্ত অংশের মানুষের সমস্যাকে সমান প্রাধান্য দিয়ে সমাধানের পথ নির্দেশ করতে হবে। তাঁর মতে, আদালত ভবন বিচার ব্যবস্থারই একটি অঙ্গ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই নতুন আদালত ভবনটি একটি আদর্শ ন্যায় মন্দির হিসেবে মানুষের ছোট বড় সমস্যা সমাধানে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করবে। তার পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন আদালত এবং কর্মচারীদের আবাসনের সংস্কার, পরিকাঠামো উন্নয়ন ও বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
এদিন ওই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ত্রিপুরায় অপরাধ সংক্রান্ত গ্রাফ নিম্নমুখী। এনসিআরবি রিপোর্ট অনুসারে ত্রিপুরায় কমেছে মহিলা সংক্রান্ত অপরাধের সংখ্যা। বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোনও অঞ্চলের কতটা সুরক্ষিত এবং নিরাপদ তা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মহিলারা সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা নির্ণায়কের একটি অন্যতম সূচক। সেই নিরিখে ত্রিপুরায় মহিলাদের উপর অপরাধ প্রবণতা কমে আসাই যথেষ্ট নয়। সেই সংখ্যাটিকে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। ত্রিপুরার মানুষকে ন্যায় প্রদানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন উচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি সহ অন্যান্য বিচারপতিগণ। প্রসঙ্গত, আদালত ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে মোট ৬৯৪.০০ লক্ষ টাকা।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সমস্ত অংশের মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়িত হচ্ছে। ১৮ অনূর্ধ্ব ছেলেমেয়েদের জন্য এখনও কোভিড টিকা প্রস্তুত হয়নি। কোভিড় সংক্রমণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে এই বয়সসীমার ছেলেমেয়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষার লক্ষ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব ও সুস্থ কৈশোর প্রকল্প। তার পাশাপাশি ত্রিপুরার পর্যটন কেন্দ্রের বিকাশ, প্রচার ও প্রসারে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করছে সরকার। অধিক সংখ্যায় পর্যটকদের ত্রিপুরামুখী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। যা ত্রিপুরাকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করবে। নিজস্বতাকে চাপিয়ে না দিয়ে অতিথি দেব ভব মানসিকতায় পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যকে গুরুত্ব দিতে তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পর্যটকদের সংখ্যা বাড়লেই চাঙ্গা হবে রাজ্যের অর্থনীতি। তার জন্য প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রয়াস ও অতিথিপরায়ণ মানসিকতা। তিনি বলেন, ত্রিপুরার বিভিন্ন আদালত ভবন ও কর্মী আবাসের সংস্কার ও পরিকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টি সরকার সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিবেচনা করবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা উচ্চ আদালতের বিচারপতি শুভাশিস তলাপাত্র, বিচারপতি অরিন্দম লোধ, বিচারপতি সত্যগোপাল চ্যাটার্জি, আইন সচিব বি পালিত, ত্রিপুরা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল দাতামোহন জমাতিয়া, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সিদ্ধার্থ শঙ্কর দে প্রমুখ।