BRAKING NEWS

ধন্বন্তরী সেবা যাত্রা’র মাধ্যমে রাষ্ট্রভক্ত ডাক্তাররা উত্তরপূর্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে যে পরিষেবা দিচ্ছেন তা প্রশংসার ঊর্ধ্বে, বলেছেন অসম বি-সভার অধ্যক্ষ দৈমারিঅসমের অন্য সব ডাক্তারকে নিঃস্বার্থ নাগরিক পরিষেবায় নিয়োজিত হওয়ার আহ্বান মন্ত্রী বিমল বরার

গুয়াহাটি, ১৯ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : সেবা ভারতী পূর্বাঞ্চল এবং ন্যাশনাল মেডিকোজ অর্গানাইজেশন (এনএমও)-এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত আটদিনের ‘ধন্বন্তরী সেবা যাত্রা’র মাধ্যমে রাষ্ট্রভক্ত ডাক্তাররা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে যে পরিষেবা দিচ্ছেন তা প্রশংসার ঊর্ধ্বে। সমাজ সেবা, মানে আমরা যাঁরা সামাজিক জীব তাঁরা পরস্পর পরস্পরের দেখভাল করা, কেউ বিপদে পড়লে তাঁর কাছে গিয়ে সামর্থ অনুযায়ী সাহায্য করাই-তো ভারতীয় পরম্পরা। বলেছেন অসম বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ দৈমারি।
গুয়াহাটির মালিগাঁওয়ে আদিংগিরিতে অবস্থিত সেবা ভারতী জনজাতি ছাত্রাবাসে আজ ১৯ ফেব্রুয়ারি আট দিবসীয় ‘২০-তম ধন্বন্তরী সেবা যাত্রা-২৩’-এর সমাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে কথাগুলি বলছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ দৈমারি। অনুষ্ঠানমঞ্চে বিশিষ্ট অতিথি রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক পরিক্ৰমা দফতরের মন্ত্রী বিমল বরা, সম্মানিত অতিথি এইমস-গুয়াহাটির এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. অশোক পুরানিক, এনএমও-র প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি তথা বর্তমান উপদেষ্টা তথা গুজরাট মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মনুভাই প্যাটেল, অসমের সার্জিক্যাল অনকোলজি (ক্যানসার সার্জন) ডা. যদুনাথ বুঢ়াগোহাঁই, সেবাভারতী পূর্বাঞ্চল-এর সভাপতি রমেন শর্মা, ‘২০-তম ধন্বন্তরী সেবা যাত্রা’র অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি রাজকুমার মোরকে পাশে বসিয়ে প্রধান অতিথি বিশ্বজিৎ দৈমারি বলেন, উত্তরপূর্বের পাহাড়ি জনপদে গিয়ে গরিব, আধুনিক পৃথিবীর আলো থেকে বঞ্চিত, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন মানুষজনকে নিঃস্বার্থে, নিজের বিলাসী দৈনন্দিন জীবনযাপন ছেড়ে টানা আাট দিন চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সহজ কথা নয়। মহৎ এই কাজে যে সকল ডাক্তার মিজোরামের বাংলাদেশ এবং অরুণাচল প্রদেশের চিন সীমান্তে গিয়ে নিঃস্বার্থে চিকিৎসা পরিষেবার পাশাপাশি তাঁদের স্বচ্ছতার বিষয়ে সচেতন করেছেন তাঁরা ধন্যবাদের পাত্র। তাঁরা প্রকৃত দেশভক্ত। দেশ এবং রাজ্যের নানা প্রান্তের বিশেষজ্ঞ, সাধারণ এবং শিক্ষানবিশ ডাক্তাররা মায়েদের গর্ভকালীন এবং প্রসবকালীন গৃহীত ব্যবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কেও পাহাড়ি এলাকার প্রসূতিদের সচেতন করেছেন, সে জন্যও তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন ডাক্তারদের।
কোকরাঝাড়ে তাঁর উদ্যোগে একটি ৩০ শয্যার হাসপাতাল চালু হয়েছিল। বিবেকানন্দ কেন্দ্র পরিচালিত ওই হাসপাতালে দুবার বিদেশ থেকে ডাক্তাররা এসে বিনামূল্যে শল্য ও সাধারণ চিকিৎসা পরিষেবা দিয়েছেন, তার বর্ণনা করেছেন দৈমারি। তখন থেকে এ ধরনের ভালো কাজে নিজেকে জড়াতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান এবং ধন্য বলে মনে করেন, বলেন বক্তা। বলেন, ভালো কাজে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখলে পরে আফশোস হয়। তাই আজ এখানে এসে অসম সহ দেশের ডাক্তাররা, বিশেষ করে যুব-ডাক্তারদের সামাজিক কাজে জড়িত দেখে তাঁর খুব আনন্দ হচ্ছে বলে তাঁর উপলব্ধির কথা বলেছেন তিনি। আজকের বক্তৃতায় কয়েকবার সংঘের ক্ষেত্র প্রচারক উলহাস কুলকর্নি সহ সংঘের প্রচারক ও কার্যকর্তাদের দেশের কাজে নিবেদিত কর্মকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন দৈমারি।
‘ধন্বন্তরী’ ঈশ্বরের অবতার ছিলেন। একসময় অসমে নরকাসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ অসুস্থ হলে ‘ধন্বন্তরী’ তাঁর চিকিৎসা করে সুস্থ করেছিলেন। ‘ধন্বন্তরী’র চিকিৎসায় দেবতারা যেভাবে সুস্থ জীবন কাটাচ্ছেন, সেভাবে আজ এই সেবাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী ‘ধন্বন্তরী’দের মতো সমাজের সকল চিকিৎসকরা যদি দিনের কিছু সময় দেশের জন্য নিজেদের সমর্পন করতেন, তা-হলে সমাজ থেকে রোগব্যাধি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত, বলেন অসম বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ দৈমারি। তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীর দেশবাসীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যও আজ তুলে ধরেছেন।
বিশিষ্ট অতিথি রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক পরিক্ৰমা দফতরের মন্ত্রী বিমল বরা বলেন, গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুষ্ঠিত ‘ধন্বন্তরী সেবাযাত্ৰা’র কার্যকলাপ তিনি তাঁর নির্বাচন ক্ষেত্র টিংখঙের একটি গ্রামে গিয়ে দেখেছেন। চারদিন আগে ওই গ্রামের একটি নামঘরে আয়োজিত শিবিরে গিয়ে দেখেছেন, উত্তরপ্রদেশ থেকে আগত যুব-চিকিৎসকরা অত্যন্ত নিষ্ঠা ও যত্ন সহকারে গ্রামের গরিব রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছেন, নানা বিষয়ে তাঁদের সচেতন করছেন। তিনি শিবিরে অংশগ্রহণকারী ডাক্তারদের সঙ্গে বহুক্ষণ অবস্থান করে তাঁদের ডেডিকেশন ও আন্তরিকতা দেখে কতটা আপ্লুত হয়েছেন, তা আজ বর্ণনা করেছেন মন্ত্রী বরা। এ ধরনের কার্যে অসমের সব ডাক্তারকে নিয়োজিত হওয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী বিমল। এছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজনের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নাগরিকদের সঙ্গে যে আত্মীয়তা গড়ার প্রচেষ্টা সেবা ভারতী ও এনএমও করছে, তার জন্য মন্ত্রী বিমল বরা সংশ্লিষ্ট আয়োজক এবং আগত চিকিৎসকদের তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি কী পরিস্থিতিতে সংঘের শীর্ষ প্রচারক কৃষ্ণ গোপালজি ‘ধন্বন্তরী সেবা যাত্রা’-র প্রচলন করেছিলেন, সে সম্পর্কেও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করেছেন।
‘২০-তম ধন্বন্তরী সেবা যাত্রা-২৩’-এর সমাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করেছেন সম্মানিত অতিথি এইমস-গুয়াহাটির এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অধ্যাপক অশোক পুরানিক, এনএমও-র প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি তথা বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মনুভাই প্যাটেল, প্লাস্টিক সার্জন (লন্ডন) ডা. সাপাতনেকার বিশ্বপ, ক্যানসার সার্জন ডা. যদুনাথ বুঢ়াগোহাঁই প্রমুখ।
২০০৫ সাল থেকে এবারের ২০-তম ‘ধন্বন্তরী সেবা যাত্রা’ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য কী, সে সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন সেবা ভারতী পূর্বাঞ্চলের সাংগঠনিক সম্পাদক সুরেন্দ্র তেলখেদকর। তিনি বলেন, ‘ধন্বন্তরী সেবা যাত্রা’র উদ্দেশ্যে কেবল চিকিৎসা সেবা নয়, এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সাংস্কৃতিক বিনিময়। দেশের অন্য প্রান্তের ডাক্তাররা এসে প্রত্যন্ত গ্রামের স্থানীয়দের বাড়িঘরে অবস্থান করে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে এতদঞ্চলের আত্মীয়তা গড়ার যে প্রচেষ্টা সেবা ভারতী পূৰ্বাঞ্চল করছে। অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটেছে সেবাভারতী পূর্বাঞ্চল-এর সভাপতি রমেন শর্মার ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে। ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্যে তিনি জানান, ‘ধন্বন্তরী সেবা যাত্ৰা’কে ‘অ্যাক্ট-ইস্ট পলিসি’-র অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা করছে সেবা ভারতী পূর্বাঞ্চল। এদিন ‘ধন্বন্তরী’ শীর্ষক একটি স্মরণিকাও উন্মোচন করেছেন অতিথিরা।
ডা. মমতা দেবী জানান, এ বছর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ড বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ওই তিন রাজ্যে ‘২০-তম ধন্বন্তরী সেবা যাত্রা-২৩’-র কোনও স্বাস্থ্যশিবিরের আয়োজন করা হয়নি। খুব শীঘ্রই ওই তিন রাজ্যে অনুরূপ স্বাস্থ্যশিবিরের আয়োজন করা হবে। অসম সহ বাকি রাজ্যগুলিতে অনুষ্ঠিত ১৭৬টি ক্যাম্পে ৩৩ ভাগে বিভক্ত ২১১ জন ডাক্তার ও মেডিক্যালের ছাত্র-দল চিকিৎসা পরিষেবা দিয়েছেন। পরিসংখ্যান দিয়ে ডা. মমতা জানান, ওই শিবিরগুলিতে মোট ৩,৫০০টি শিশু, ১,১৮৬ জন উচ্চ রক্তচাপ রোগী, ডায়াবেটিক ৬৫০, ক্যানসার রোগী ১১৯, রক্তাল্পতায় আক্রান্ত রোগী ১,২৬৫ জন এবং ১,১৮৮ জন চোখের ছানিজনিত রোগী শনাক্ত সহ মোট ২১ হাজার (পুরুষ ৭.৬০০ এবং মহিলা ১০,০০০) রোগীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান করেছেন সংশ্লিষ্ট ডাক্তাররা।
উল্লেখ্য, গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের বিদ্যুৎ, কো-অপারেশন, খনি ও খনিজাত সম্পদ এবং আদিবাসী ও উপজাতীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতি দফতরের মন্ত্রী নন্দিতা গারলোসার উপস্থিতিতে অর্থ, মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী অজন্তা নেওগ ‘২০-তম ধন্বন্তরী সেবা যাত্রা-২৩’-র উদ্বোধন করেছিলেন। বিভিন্ন রাজ্যের ডাক্তার ও মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বিভিন্ন রোগের ওষুধপত্র এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সঙ্গে নিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চারটি রাজ্য যথাক্রমে অসম, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ এবং মিজোরামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলেন।
আজকের সমারোপ অনুষ্ঠানে অন্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অসম ক্ষেত্ৰ প্ৰচারক উলহাস কুলকর্নি প্রমুখ বিশিষ্টজনের সঙ্গে অসম সহ দেশ-বিদেশের ডাক্তার ও মেডিক্যালের ছাত্রছাত্রী। কয়েকটি সেশনে আজকের সমাপন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। সকাল সাড়ে ১১টায় সংগঠন মন্ত্রের মাধ্যমে সমাপন অনুষ্ঠান শুরু হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *