নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৫ জানুয়ারি৷৷ রাজ্যের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার ওপর সওয়াল করলেন কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েতীরাজ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী নিহাল চান্দ৷ পাশাপাশি সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা রূপায়ণের মাধ্যমেই গ্রামপঞ্চায়েতগুলি আত্মনির্ভর হয়ে ওঠা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেছেন৷ মঙ্গলবার রাজ্য সফরে এসে আগরতলায় প্রজ্ঞা ভবনে রাজ্যের পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠান এবং ষষ্ঠ তপশিল এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত দপ্তরের আধিকারিকদের সাথে মত বিনিময় সভায় গ্রামের উন্নতি হলেই দেশের বিকাশ ত্বরান্বিত হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন৷
এদিন মত বিনিময় সভায় রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী মানিক দে, গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রী নরেশ চন্দ্র জমাতিয়া, প্রধান সচিব ড জি এস জি আয়েঙ্গাঁর, এ ডি সি-র সি ই ও অভিষেক সিং, জেলা পরিষদের সভাধিপতিগণ, পঞ্চায়েত সমিতি ও বি এ সি-র চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত ছিলেন৷ কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েতীরাজ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী নিহাল চান্দ মত বিনিময় সভায় বলেন, গ্রামের বিকাশ নির্ভর করে একটা গ্রাম পঞ্চায়েত কতটা আত্মনির্ভর হল তার উপর৷ গ্রাম পঞ্চায়েত সমৃদ্ধ হলেই পরিকল্পনা গ্রহণ ও রূপায়ন সম্ভব৷ গ্রামের বিকাশ হলেই দেশের বিকাশ ত্বরান্বিত হবে৷ তিনি আরো বলেন, ভারত সরকার চাইছে একটি পঞ্চায়েত ৫ বছরে কি করবে তা নিয়ে পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে৷ এবিষে জন প্রতিনিধিদেরও ক্ষমতায়ণ করতে হবে৷ তা হলেই জন প্রতিনিধিগণ পরিকল্পনা তৈরী করতে সক্ষম হবেন৷ উন্নয়নে সঠিক পথ দেখাতে পারবেন৷ এ জন্য জন প্রতিনিধিদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে৷ এক্ষেত্রে ভারত সরকার সবরকম সহায়তা দেবে৷ মত বিনিময় সভায় তিনি জানান, উন্নয়নের প্রশ্ণে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে এক সাথে চলতে হবে৷ তিনি জানান ৬ষ্ঠ তপশিল এলাকার অর্থ প্রস্তাব নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ তাছাড়া ত্রিপুরায় ইন্দিরা আবাসন যোজনায় গৃহ বরাদ্দ আরও বেশী করা যায় নি না তা খতিয়ে দেখা হবে৷
মত বিনিময় সভায় পঞ্চায়েত মন্ত্রী মানিক দে রাজ্যের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা নিয়ে আলোকপাত করেন৷ তিনি ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের জন প্রতিনিধিদের ক্ষমতায়ণ বাড়াতে প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন৷ গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রী নরেশ চন্দ্র জমাতিয়া এস জি এন রেগায় অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং রাজ্যের যে সমস্ত জুমিয়ারা এখনও টংঘরে বসবাস করচেন তাদের ইন্দিরা আবাসন যোজনায় যাতে ঘর তৈরী করে দেওয়া যায় তার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷ কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েতীরাজ মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব ডি কে শর্মা বলেন, ত্রিপুরার গ্রাম উন্নয়নে রাজ্যে সরকারের একটা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আছে৷ এখানকার ই-পঞ্চায়েত ব্যবস্থা খুব উন্নত৷ আরও কিছু বিষয় সংযোজন করতে হবে৷ তিনি বলেন, আগামী ১৫ জানুয়ারী গুয়াহাটিতে ৬ষ্ঠ তপশিল এলাকা নিয়ে একটি সভা হবে৷ মত বিনিময় সভায় প্রধান সচিব ড জি এস জি আয়েঙ্গাঁর, গ্রাঙ্খম উন্নয়ন দপ্তরের যুগ্ম সচিব টি কে দেবনাথ, পঞ্চায়েত দপ্তরের অধিকর্তা প্রমথ রঞ্জন ভট্টাচার্য্য এংব এ ডি সি-র সি ই ও অভিষেক সিং আলোচনা করেন৷ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পঞ্চায়েত দপ্তরের যুগ্ম অধিকর্তা রাখী বিশ্বাস৷ এদিকে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সাথেও মহাকরণে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন৷ আগামীকাল তিনি রাজ্যের বেশ কয়েকটি স্থানে রেগা প্রকল্পের কাজকর্ম খতিয়ে দেখবেন এবং বিকালের বিমানে রাজ্যত্যাগ করবেন৷
রাজ্য সফরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, পূর্বোত্তরে পৃথক শিল্পনীতি পুনরায় চালুর দাবী জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৫ জানুয়ারি৷৷ উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির জন্য যে পৃথক শিল্প নীতি প্রত্যাহার করা হয়েছে তা পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়েছে রাজ্য সরকার৷ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ রাজ্য সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তাঁর কাছে এই দাবি জানানো হয়েছে৷ মূলত, শিল্পনীতি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ত্রিপুরা সহ সমগ্র উত্তরপূর্বাঞ্চল ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জানান মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন, এই অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে এনইআইআইপিপি (নর্থইস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনভেস্টম্যান্ট প্রমোশন পলিসি) অতিসত্বর চালু করা আবশ্যিক৷ মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যের বিভিন্ন দাবি সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ৷ এদিন এই বৈঠকে রাজ্য শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী তপন চক্রবর্তীও উপস্থিত ছিলেন৷
তিনি আরো জানান, রাজ্য আন্তর্জাতিক শিল্প ও বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সহায়তার আর্জি রেখেছে৷ পাশাপাশি আগরতলা বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অতিসত্বর রূপান্তরের দাবি জানিয়েছে৷ তাতে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সাথে বিমানপথে যোগাযোগ সম্ভব হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে বলেছেন৷ এদিন বৈঠকে শ্রীমতী সীতারমণ মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন এবিষয়ে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রকের সাথে আলোচনা করবেন৷
এদিকে, চতুদর্শ অর্থ কমিশন যে অর্থ বরাদ্দ করেছে তাতে রাজ্যের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জানিয়েছেন৷ রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্যক্ষেত্রে উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার যাতে অর্থ বরাদ্দ সঠিকভাবে করে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছে রাজ্য৷ এদিকে, মিথেন গ্যাস ব্যবহার করে সার কারখানা গঠন করার বিষয়েও তাঁর হস্তক্ষেপ দাবি করেছে রাজ্য সরকার৷
এদিন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দিল্লি ফিরে গিয়ে রাজ্যের সমস্ত দাবি দাওয়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের গোচরে নেবেন৷ রাজ্যের উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার যাতে আরো আন্তরিকতার সাথে সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখেন সে বিষয়েও তিনি সুপারিশ করবেন বলে জানিয়েছেন৷