BRAKING NEWS

কাঁকসার বাঁশকোপা টোলপ্লাজায় ৬ হাজার ফেনসিডিল উদ্ধার, ধৃত ৪

দুর্গাপুর, ২০ ফেব্রুয়ারি (হি. স.) উত্তরপ্রদেশ টু বাংলাদেশ সীমান্ত মুর্শিদাবাদ। মাদক পাচারকারীদের কি করিডর আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল? কার্যত সেই প্রশ্ন আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠল রাজ্যজুড়ে। বেআইনিভাবে পাচারের আগে কাঁকসার বাঁশকোপা টোলপ্লাজায় এসটিএফের জালে ধরা পড়ল প্রচুর নিষিদ্ধ কফ সিরাফ। ঘটনায় দুই লিফটার সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করল রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। ধৃত ৪ জনের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের মুরাদাবাদের বাসিন্দা গুরমিত সিং, বরেলির বাসিন্দা গৌরব শর্মা, মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা রুবেল শেখ ও আলামিন শেখ। সোমবার ধৃতদের মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের জামিন খারিজ করে দেন।

ঘটনায় জানা গেছে, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রবিবার সকালে ১৯ নং জাতীয় সড়কের ওপর কাঁকসার টোলপ্লাজায় হানা দেয় এসটিএফ দল। ওইসময় উত্তরপ্রদেশের বারেলি থেকে কলকাতাগামী একটি পণ্য বোঝাই লরি আটক করে। তাতে সাইকেলের টায়ারের বান্ডিলের মাঝে নিষিদ্ধ কফ সিরাপের বেশ কিছু কার্টুন বস্তার মোড়ক করে লুকিয়ে রাখা ছিল। তল্লাশী চালাতেই সেগুলি উদ্ধার করে এসটিএফ। বস্তার মোড়ক খুলে ৬ হাজার ফেনসিডিল বাজেয়াপ্ত করে এসটিএফ। জানা গেছে, ওইসব ফেনসিডিল মুর্শিদাবাদ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ওই কফ সিরাপ নেশা করার কাজে ব্যবহার হওয়ায় নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে আমাদের দেশে। তবে বাংলাদেশে ওই কফ সিরাপের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। এদিন বাঁশকোপা টোলপ্লাজার কাছে বাসিন্দা রুবেল শেখ ও আলামিন শেখ নামে দুই পাচারকারী লিফটার কেও গ্রেফতার করে। এবং তাদর গাড়ীও আটক করে।
প্রশ্ন উঠেছে, আসানসোল, দুর্গাপুর, পানাগড়কে আন্তঃরাজ্য মাদক পাচারকারীদের কি করিডর হিসাবে ব্যাবহৃত করছে?
প্রসঙ্গত, গত ১৮ জানুয়ারী বাঁশকোপা টোলপ্লাজায় পাচারের আগেই এসটিএফের জালে ধরা পড়ে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ব্রাউন সুগার তৈরীর সামগ্রীসহ পাচার চক্র। এদিন উত্তরপ্রদেশের বারেলি থেকে কলকাতা গামী একটি পণ্যবাহী লরি আটক করে এসটিএফ বাহিনী। লরি থেকে চার বস্তা মাদক তৈরীর পাউডার। যার সব মিলিয়ে ওজন প্রায় ১ কুইন্টাল। এছাড়াও ২ ব্যারেল ব্রাউন সুগার তৈরীর লিক্যুইড আসিটিক অ্যানাহাইড্রেড। যার ওজন প্রায় ১ কুইন্টাল ১০ কেজি। সব মিলিয়ে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ব্রাউন সুগার তৈরীর কাঁচামাল আটক হয়েছে। লরিটিকেও আটক করে এসটিএফ। ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করে। জানা গেছে, মাদক তৈরীর ওইসব সামগ্রী বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী নদিয়ার পলাশিপাড়া যাচ্ছিল। জাতীয় সড়কের ওপর ডানকুনি এলাকায় হস্তান্তর হওয়ার কথা ছিল। তারজন্য আগাম দুজন মাদক পাচারকারী একটি ছোটো চারচাকা গাড়ীতে বাঁশকোপা টোল গেট এলাকায় হাজির ছিল। এসটিএফ লরির চালক খালাসি সহ মোট ৪ জনকে আটক করে পুলিশের হাত তুলে দেয়। পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। যার মধ্যে ছোটো চার চাকা গাড়ীর দুজন নদীয়ার বাসিন্দা মাদক তৈরীর কাঁচামালের লিফটার। তারও আগে ২০১৮ সালের২২ জানুয়ারী পাচারের আগে কাঁকসার পানাগড়ে লরিভর্তি ফেনসিডিল আটক হয় এসটিএফের জালে। প্রায় ২ হাজার কফসিরাপ ফেনসিডিল বাজেয়াপ্ত করল পুলিশ। ওই লরিটি উত্তরপ্রদেশ থেকে কলকাতা যাচ্ছিল। ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর পাচারের আগে ১৯ জাতীয় সড়কের ওপর একটি লরি থেকে প্রায় ১৩ হাজার ফেনসিডিল উদ্ধার হয়।
জানা গেছে, পন্য বোঝাই একটি লরি বেনারস থেকে কলকাতা যাচ্ছিল। ওইসময় রাজবাঁধ এলাকায় জাতীয় সড়কের পাশে হোটেল ও পার্কিং থাকাকালীন এসটিএফ হানা দেয়। তল্লাশী চালিয়ে নিষিদ্ধ ওই কফ সিরাফ উদ্ধার হয়। ২০২২ সালে ৩০ জুন ১৯ জাতীয় সড়কের অন্ডালের ভাদুর মোড়ে এসটিএফের তল্লাশীতে উদ্ধার হয় প্রচুর নিষিদ্ধ কফ সিরাপ। ঘটনায় গাড়ীর চালক সহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গোপনসুত্রে খবর পেয়ে এসটিএফ জাতীয় সড়কে তল্লাশী অভিযান শুরু করে। অন্ডালের ভাদুর মোড় সংলগ্ন পেট্রোল পাম্পের কাছে একটি লরিতে তল্লাশীর সময় উদ্ধার হয় ১০ হাজার বোতল ফেনসিডিল সিরাপ। ট্রাকের মধ্যে ১০০ টি পেটিতে ওই সিরাপ গুলি ছিল। জানা গেছে, উত্তর প্রদেশ থেকে আগ্রা থেকে বনগাঁ হয়ে বাংলাদেশে পাচার করার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ওই কফ সিরাপ গুলি। এদিন পাচারের কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ গাড়ীর চালক সহ তিনজনকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের নাম ভানু প্রতাপ সিং, ধীরেন্দ্র প্রতাপ সিং ও দীপ সিং। শুক্রবার ধৃতদের আসানসোল জেলা আদালতে তোলা হয়। এছাড়াও ওইবছরই ৮ ফেব্রুয়ারী যাত্রীবাহি ট্রেনে জিআরপি পুলিশের তৎপরতায় বাজেয়াপ্ত হয় ১৯৯ বোতল কাফসিরাপ। ঘটনায় সাদ্দাম হোসেন ও মান্নান আলী নামে দুজন গ্রেফতার হয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, মাদকপাচারকারীরা কি শিল্পাঞ্চলকে করিডর হিসাবে ব্যাবহার করছে? যদিও পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের হেপাজতে নেওয়া হয়েছে। কোথায় পাচার হচ্ছিল, তার তদন্ত শুরু হয়েছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *