BRAKING NEWS

বাংলাদেশে পাক গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা বৃদ্ধি! শঙ্কিত বুদ্ধিজীবী মহল

ঢাকা, ২০ সেপ্টেম্বর (হি.স.): খুব বেশি দিন হয়নি আফগানিস্তান নিজেদের দখলে নিয়েছে তালিবানরা। আফগানিস্তান তালিবানের দখলে চলে যাওয়ার পর থেকেই, এবার বাংলাদেশে তৎপরতা বাড়িয়েছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই, এমনটাই মনে করছেন বাংলাদেশের বিশিষ্টজন, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের। বাংলাদেশে আইএসআই-এর তৎপরতা বৃদ্ধিতে শঙ্কিত সকলেই। বিশিষ্টদের মতে, বাংলাদেশ-সহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে পাকিস্তান নিজেদের প্রভাব বাড়াতে ‘ইসলামপন্থী’ দলগুলিকে কাজে লাগাতে চাইছে। স্বাভাবিকভাবেই নতুন জীবন পেয়েছে বাংলাদেশের বিএনপি, জামাত-সহ ইসলামপন্থী দলগুলি। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আইএসআই নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করছে।

৭১-এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি তথা লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়র কবির বলেছেন, “আইএসআই সরাসরি বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলিকে মদত দিচ্ছে। পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সহায়তায় তালিবান আফগানিস্তান দখলের পরে, এখন বাংলাদেশ দখলের কাজ করছে ইসলামপন্থী দলগুলি।” শাহরিয়র কবিরের মতে, “ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, শিক্ষাবিদ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের নিয়ে একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ চালু করেছে। ইউটিউবের মাধ্যমে নানা ধরনের মিথ্যে তথ্য প্রচার করছে। মূলত আইএসআই নেপথ্যে থেকে ওই গ্রুপের মাধ্যমে ধর্মকে পুঁজি করে প্রতিনিয়ত নানা প্রচার চালাচ্ছে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাটি কিছু স্বার্থপূরণের উদ্দেশ্যে ভুল তথ্য প্রচার করছে। অতীতেও আইএসআই বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে ভারতের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর অপচেষ্টা করেছিল। মুম্বইয়ে তাজ হোটেলে হামলা, সেভেন সিস্টার্সে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ সব কিছুই আইএসআই বাংলাদেশ থেকে পরিচালনা করেছে। বাংলাদেশের বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ভিতরে থেকেও আইএসআই-এর হয়ে কাজ করার চেষ্টা চলছে। সরকারের মধ্যে কারা আইএসআই-এর সঙ্গে জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করতে না পারলে ভয়াবহ মূল্য দিতে হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে।”

শাহরিয়র কবির আরও বলেন, “বিশেষ করে জঙ্গি–সম্পৃক্ততার অভিযোগে ২০১৫ সালে ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশন থেকে দ্বিতীয় সচিব ফারিনা আরশাদ এবং ২০১৬ সালে জঙ্গি সংগঠন জেএমবি-র সঙ্গে লেনদেনের সময় আটক ভিসা কর্মকর্তা মাযহার খানকে প্রত্যাহারের পর আইএসআই নিজেদের লাগাম টেনে ধরেছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় আইএসআই এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেও কাজে লাগাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মতো আইএসআই এবার ঢাকায় বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।”

আইএসআই-এর তৎপরতায় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক লায়েকুজ্জামান বলেছেন, “তালিবানকে ক্ষমতায় আনার পর আইএসআই এখন বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জঙ্গি সংগঠনগুলিকে মাঠে নামানোর তৎপরতা চালাতে চাইছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাকিস্তানী মানসিকতার লোকজনকে নিয়ে গ্রুপ করে তারা মতবিনিময় ও বার্তা আদান প্রদান করছে। এসব গ্রুপে বর্তমান সরকার বিরোধী লোকজন যুক্ত রয়েছেন। বিপুল পরিমান অর্থ খরচ করা হচ্ছে।” তিনি বলেন, “আইএসআই সব সময় সক্রিয়। কিন্তু, তালিবান আফগান দখলের পর থেকে আরও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠছে। আইএসআই তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের অবদান, পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগা, বিএসএফ-এর হাতে চোরাচালানীদের হতাহত, বাণিজ্য বৈসম্য, ফারাক্কা-তিস্তা বাঁধ ও ভারতে মুসলিমদের উপরে নির্যাতনের বিষয় নিয়ে মিথ্যে তথ্য প্রচার করছে।”

তিনি বলেন, “গত মার্চে (২০২১) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময় ইসলামপন্থী বিক্ষোভে মদত ও সংগঠিত করার সঙ্গে পাকিস্তানের নাম জড়িয়েছে। সন্ত্রাসী ও নৈরাজ্যবাদীদের যোগসাজশে রাজধানী ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা চালানো হয়। ওই নাশকতায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার বিষয়ে প্রচার রয়েছে। নাশকতার ওই ঘটনার তদন্তে হেফাজতে ইসলামের একাধিক নেতার সঙ্গে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠনগুলির ঘনিষ্ঠ যোগসাজশের বিষয় প্রকাশ্যে এসেছে।”

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাক্তন মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের মতো মহামারী মোকাবিলায় গোটা বিশ্ব যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যে প্রচার উদ্বেগের। সম্মিলিতভাবে মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় যে কোনও ধরনের ভুল তথ্য, মিথ্যা তথ্যের প্রচার বন্ধুদেশগুলির মধ্যে দূরত্ব ও বিভাজন তৈরি করতে পারে, যা চূড়ান্তভাবে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য মঙ্গলজনক নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *