নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৬ সেপ্টেম্বর ।। ধনপুরে শক্তি প্রদর্শন কার্যত সন্ত্রাসের রূপ নিয়েছিল। অবশ্য আজ কাঠালিয়া ব্লকে সিপিএমের ডেপুটেশনকে ঘিরে ধনপুরে লাল সন্ত্রাসে শাসক দল বিজেপিই সুযোগ করে দিয়েছিল। এদিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতাকে বিজেপি কর্মীদের কালো পতাকা দেখানোর ঘটনাকে ঘিরে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল। সিপিএম কর্মীদের মারমুখী আক্রমনে বিজেপি কর্মীরা পালিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন। তবে, হাতের কাছে একটি বাইক পেয়ে সিপিএম কর্মীরা সমস্ত রাগ ওই দ্বিচক্রি যানের উপর মিটিয়েছে। বিজেপির বুথ অফিস ভাংচুর, দলীয় পতাকা পুড়িয়ে দেওয়া সহ সিপিএম কর্মীরা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিকের ফ্লেক্স ছিড়েও থেমে থাকেননি। বেশ কয়েকটি দোকানেও তাঁরা এদিন ভাংচুর করেছেন। তবে সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল, পুলিশ রীতিমত আত্মসমর্পণ করেছিল। অবশ্য, বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার নিজে দাঁড়িয়ে সিপিএম কর্মীদের উৎশৃঙ্খলতা থামিয়েছেন।
এদিকে, পরবর্তী সময়ে পুলিশ মানিক সরকারকে কাঠালিয়া যেতে বাধা দিলে সিপিএম কর্মীরা ব্যারিকেড করে পায়ে হেঁটে তাঁকে সেখানে নিয়ে যান। যাওয়ার সময়ে পথে তারা পুলিশের সামনেই তান্ডব করেছেন। ততক্ষণে বিজেপি কর্মীরা মাঠ ছেড়ে পালিয়েছেন। বিজেপির অভিযোগ, ১২ জন দলীয় কর্মী সিপিএমের মারে গুরুতর আহত হয়েছেন। ওই ঘটনায় ১১ জন সিপিএম কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। রাতে আহত দলীয় কর্মীদের খোজ নিতে ছুটে গেছেন পরিবহন মন্ত্রী প্রণজিত সিংহ রায় এবং তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী।
পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার সোমবার দুপুরে ধনপুরে গিয়েছিলেন৷ সেখানে যাওয়ার পথে বাঁশপুকুর এলাকায় মানিক সরকারের কনভয় আটকে কালো পতাকা দেখানো হয়েছিল৷ অভিযোগ বিজেপি কর্মীরা ওই কালো পতাকা প্রদর্শন করেছেন৷ তাতেই এলাকার সিপিএম কর্মী সমর্থকরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন৷ শতশত সিপিএম কর্মী সমর্থক সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন৷ শাসক দলের কর্মীদের উপর লাঠি সোটা নিয়ে হামলা চালায় তারা৷ দীর্ঘ সময় ধরে সিপিএম কর্মীরা প্রকাশ্যে তান্ডব চালিয়েছেন৷ উত্তেজনা দেখে ধনপুর বাজারে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন৷ কয়েকটি দোকানেও সিপিএম কর্মীরা এদিন হামলা চালিয়েছেন৷ টিআর০৭বি৮২১২ নম্বরের একটি ভেঙ্গে চুরমার করেছেন তাঁরা৷
আজ লাল ঝান্ডা হাতে সিপিএম কর্মীদের রুদ্ররূপ মনে করিয়ে দিয়েছে, এবার শুধুই পাল্টা মার দিতে তাঁরা প্রস্তুত হয়ে রয়েছেন৷ কারণ, সকলের হাতেই লাল ঝান্ডা অস্ত্র হিসেবে কাজ করেছে৷ পুলিশকে এদিন সিপিএম কর্মীদের সামনে ভীষণ অসহায় বলে মনে হয়েছে৷ কারণ, হামলা-হুজ্জুতি, ভাংচুর সবই চলেছে পুলিশের সামনে৷ এই পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছে, শান্তি রক্ষায় পুলিশ আত্মসমর্পণ করেছে৷
এদিকে, পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে দেখে বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার সিপিএম কর্মীদের উৎশৃঙ্খলতা থামিয়েছেন। নিজে গাড়ি থেকে থেমে সকলকে শান্ত করেছেন এবং ঘটনাস্থল থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। দলের প্রবীণ নেতার আদেশে সিপিএম কর্মীরা অনেকটা শান্ত হলেও, পুলিশের তাঁকে আটকে দেওয়ার ঘটনায় আবারও উত্তেজিত হয়ে উঠেন কর্মী-সমর্থকরা। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সিপিএম কর্মীরা ব্যারিকেড করে মানিক সরকারকে কাঠালিয়া ব্লকে নিয়ে গেছেন। পথে অবশ্য পুলিশের সামনেই বিজেপির বুথ অফিস তারা ভাংচুর করেছেন। এদিন প্রায় ৫ কিমি পথ পায়ে হেঁটে কাঠালিয়া ব্লকে যান মানিক সরকার।