BRAKING NEWS

অসমে আরও কমল কোভিড-কারফিউয়ের সময়সীমা, জারি নয়া এসওপি, চলবে আন্তঃজেলা সব ধরনের যান, ৬ সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পঠন-পাঠন

গুয়াহাটি১ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : আরও উন্নত হয়েছে কোভিড পরিস্থিতি। তাই অসমে জারি করা হয়েছে নয়া স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিজিওর (এসওপি)। আজ বুধবার ১ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টা থেকে বলবৎযোগ্য নয়া এসওপি আজ জনতা ভবনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেশব মহন্ত। এর পরই নয়া এসওপি-র বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন অসম রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ।

নয়া এসওপি অনুযায়ী বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নয়া এসওপি ঘোষণা করে জানান, গোটা রাজ্যে আরও একঘণ্টা শিথিল করা হয়েছে কোভিড-কারফিউ। সে অনুযায়ী সব জেলায় পূর্ববর্তী ৭:০০টার বদলে রাত ৯:০০টা থেকে ভোর ৫:০০টা পৰ্যন্ত বলবৎ হবে কারফিউ। মন্ত্রী বলেন, পূর্ববর্তী ৬:০০টার পরিবর্তে নয়া এসওপি অনুযায়ী রাত ৮:০০টা পৰ্যন্ত কৰ্মক্ষেত্ৰ, হোটেল-রেস্টুরেন্ট-ধাবা, ব্যবসায়িক-বাণিজ্যিক প্ৰতিষ্ঠান, বিক্ৰয় কেন্দ্ৰ, শোরুম, মুদি দোকান, ফলমূল ও শাক-সবজির দোকান খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে, সাপ্তাহিক হাটগুলিকে সৰ্বাধিক ৬ ঘণ্টার ব্যবধানে শিফটিং ব্যবস্থায় খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে অবশ্য সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্ৰশাসন সময়সূচি এবং আনুষঙ্গিক নিয়মবালি নিৰ্ধারণ করবে, জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

মন্ত্রী জানান, আন্তঃজেলা যাতায়তের ক্ষেত্ৰেও চলমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। সে অনুয়ায়ী গুয়াহাটি তথা কামরূপ মহানগর জেলা সহ অন্য সব জেলায় আজ থেকে গণ-পরিবহণের সরকারি-বেসরকারি যানবাহন ১০০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে। কিন্তু কোনও যাত্ৰীবাহী গাড়ি আসন সংখ্যার অতিরিক্ত যাত্ৰী, যেমন দাঁড় করিয়ে কাউকে নিতে পারবে না। দাঁড় করিয়ে যাত্ৰী নিয়ে চলাচলকারী গাড়ি যদি ধরা পড়ে, তা-হলে দাঁড়ানো যাত্ৰীর কাছ থেকে বৰ্ধিত হারে জরিমানা আদায়ের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট গাড়ি এবং চালকের যথাক্রমে রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এ ব্যাপারে যানবাহনের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতে সংশ্লিষ্ট দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহন্ত।

এ প্রসঙ্গে আরও জানান, ন্যূনতম কয়েকটি আবশ্যক শৰ্তসাপেক্ষে রাজ্যে আন্তঃজেলা যাতায়াতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সে অনুয়ায়ী কোভিড ভ্যাকসিনের কমপক্ষে এক ডোজ গ্রহণকারী যাত্রী আন্তঃজেলা যাতায়াত করতে পারবেন। তবে চালক, খালাসি, কন্ডাকটর ও যাত্রীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। এছাড়া অটোরিকশা, প্যাডেল রিকশা, টেকসির ক্ষেত্ৰেও ১০০ শতাংশ আসনে যাত্ৰী পরিবহণ করা যাবে। এ-ক্ষেত্রেও এক ডোজ কোভিড প্ৰতিষেধক নেওয়া এবং মাস্ক পরিধান করা যাত্ৰী ও চালকের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অন্যদিকে মোটর বাইকে কোভিডের অন্তত এক ডোজ প্ৰতিষেধক গ্রহণকারী দুই আরোহীকে চলাচলের অনুমতি দিয়ে দুজনকেই মাস্ক পরার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে নয়া এসওপিতে। মন্ত্রী আরও জানান, ব্যক্তিগত লঘু যানবাহনে যাত্ৰা করলেও সব আরোহীকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। গাড়িতে কেবলমাত্র একজন আরোহী থাকলেও তাঁকেও পরতে হবে মাস্ক। মন্ত্রী জানান, নৈশ কারফিউয়ের মধ্যেও যাত্রীবাহী নাইটসুপার চলাচলে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, প্রকাশ্য স্থানে আয়োজিত সভা-সমিতি, সামাজিক / সর্বজনীন অনুষ্ঠানে কোভিড ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহীতা সর্বাধিক ৫০ জন অংশগ্রহণ করতে পারবেন। অবশ্য সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকের অনুমতিক্রমে সভা-সমিতি ইত্যাদি যে কোনও অনুষ্ঠানে কোভিড প্রতিষেধকের কমপক্ষে প্রথম ডোজ গ্রহীতা সৰ্বাধিক ২০০ জন অংশগ্ৰহণ করতে পারবেন। তবে সভা-সমিতি বা কোনও অনুষ্ঠান করতে হলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের (থানা কর্তৃপক্ষ) কাছ থেকেও অগ্রিম অনুমতি নিতে হবে। তছাড়া প্ৰেক্ষাগৃহ বা সর্বজনীন সভাগৃহ ইদ্যাদি বন্ধ কক্ষে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে মোট আসনের ৫০ শতাংশ মানুষকে অংশগ্ৰহণে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে কোভিড ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ যাঁরা নিয়েছেন তাঁরা এ ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্ৰহণ করতে পারবেন। বিবাহ ইত্যাদি ঘরুয়া মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন সৰ্বাধিক ৫০ জন। এক্ষেত্রেও কোভিড ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিতে হবে অংশগ্রহণকারীদের। এদেক অন্তিম সৎকার ও শ্ৰাদ্ধানুষ্ঠানে কোভিড প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ গ্রহণকারী সৰ্বাধিক ৫০ জনকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে নয়া এসওপিতে।

এভাবে রাজ্যের বিখ্যাত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি যেমন কামাখ্যা মন্দির, শিবসাগরের শিবদৌল, আজানপির দরগাহ, হাজোর পোয়ামক্কা ইত্যাদিতে প্ৰতি ঘণ্টায় সৰ্বাধিক ৪০ জনকে দৰ্শনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দুই ডোজ কোভিড ভ্যাকসিন-প্রাপ্তরা পাবেন মন্দির চত্বরে প্রবেশের সুযোগ। একই পদ্ধতিতে অন্যান্য ধৰ্মীয় স্থানে সৰ্বাধিক ২০ জন অংশগ্ৰহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রেও কোভিড প্ৰতিষেধকের প্রথম ডোজ গ্রহীতাদের ধৰ্মীয় প্রতিষ্ঠান চত্বরে প্ৰবেশের সুযোগ দেওয়া হবে।

সরকারি কর্মচারীদের প্রসঙ্গে মন্ত্রী কেশব জানান, এখনও বহু কর্মচারী কোভিড ভ্যাকসিনের কেবল দ্বিতীয় ডোজই নয়, প্রথম ডোজই নেননি। যাঁরা দ্বিতীয় ডোজ নেননি, তাঁদের এবং প্রথম ডোজ-ছুটদের আগামী তিনদিনের মধ্যে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট প্রতিষেধক নিয়ে নিতে বলেছেন মন্ত্রী। প্রসঙ্গক্রমে জানান, প্ৰত্যেক সরকারি কাৰ্যালয়ের প্রধান আধিকারিককে নিজ নিজ কাৰ্যালয়ের আধিকারিক ও কৰ্মচারীদের মধ্যে কে কে প্রথম এবং দ্বিতীয় কোভিড ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাঁদের তালিকা তৈরি করতে হবে। সে অনুযায়ী প্ৰতিষেধকের প্রথম ডোজ যাঁরা নেননি তাঁদের আগামী তিনদিনের মধ্যে তা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কার্যালয়-প্রধান সুনিশ্চিত করবেন। পাশাপাশি আরও জানান, সকল আধিকারিক ও কর্মচারীকে আজ থেকে নিয়মিত নিজের নিজের দফতরে আসতে হবে। তাছাড়া যে সকল মহিলার ৩ বছরের নীচে শিশু রয়েছে, তাঁরা নিজেদের বাড়ি থেকে কাজ করবেন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নয়া এসওপির তথ্য দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেশব মহন্ত জানান, আগামী সোমবার ৬ সেপ্টেম্বর থেকে স্নাতকোত্তর বা সমপৰ্যায়ের পাঠ্যক্ৰম, স্নাতক বা সমপৰ্যায়ের পাঠ্যক্ৰম এবং উচ্চ মাধ্যমিকের চূড়ান্ত বৰ্ষের ছাত্রছাত্রীদের সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এভং স্কুলের শ্ৰেণিকক্ষে পাঠদান পৰ্ব শুরু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে একেকটি শ্ৰেণিকক্ষে সৰ্বাধিক ৩০ জন ছাত্ৰছাত্ৰী এক সঙ্গে বসে পাঠগ্ৰহণ করতে পারবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা ছাত্ৰছাত্ৰীর সংখ্যা অনুযায়ী প্ৰয়োজনবোধে অতিরিক্ত শ্ৰেণিকক্ষের ব্যবস্থা করবেন। এক্ষেত্রে সব ছাত্ৰছাত্ৰীকে কোভিড প্ৰতিষেধকের নিদেন পক্ষে প্রথম ডোজ গ্ৰহণ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকের চূড়ান্ত বৰ্ষের ক্ষেত্ৰে ১৮-অনুর্ধ্ব ছাত্ৰছাত্ৰীরা কোভিড প্ৰতিষেধক ছাড়াই নির্ধারিত সংখ্যায় শ্ৰেণিকক্ষে বসে পাঠগ্ৰহণ করতে পারবেন। তবে ইতিমধ্যে ১৮ বছরের ঊর্ধ্ব উচ্চ মাধ্যমিক চূড়ান্ত বৰ্ষের যে সকল ছাত্ৰছাত্ৰী প্রথম ডোজ কোভিড ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাঁরা আসতে পারবেন তাঁদের শ্ৰেণিকক্ষে।

মন্ত্রী জানান, আগামী ৬ সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে শুরু হবে পঠন-পাঠন। এর আগে আগামীকাল থেকে তিনদিন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক-শিক্ষক, কৰ্মচারী এবং ১৮-ঊর্ধ্ব ছাত্ৰছাত্ৰীদের কোভিড প্ৰতিষেধক গ্ৰহণ করার বিষয় সংশ্লিষ্ট কৰ্তৃপক্ষকে সুনিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চত্বর এবং শ্ৰেণিকক্ষকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি আরও জানান, স্নাতকোত্তর বা সমপৰ্যায়ের পাঠ্যক্ৰমের চূড়ান্ত বৰ্ষ, স্নাতক বা সমপৰ্যায়ের পাঠ্যক্ৰমের চূড়ান্ত বৰ্ষ এবং উচ্চ মাধ্যমিকের চূড়ান্ত বৰ্ষের ছাত্রছাত্রীদের হোস্টেল খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে কেবলমাত্র কোভিড প্ৰতিষেধকের দুটি ডোজই নিয়েছেন সেই সকল ছাত্ৰছাত্ৰী থাকতে পারবেন হোস্টেলে।

বিমানবন্দরে দুই ডোজ কোভিড ভ্যাকসিন গ্রহণকারী বিমানযাত্ৰীরা পাবেন কোভিড টেস্ট থেকে রেহাই। তবে প্রথম ডোজগ্রহীতা এবং একটি ডোজও নেননি এমন যাত্রীদের বিমানবন্দরে বাধ্যতামূলকভাবে করাতে হবে কোভিড টেস্ট। অবশ্য এ ধরনের যাত্রীদের বিমানবন্দরে ২৫০ টাকার রেহাই মূল্যে আরটি-পিসিআর কোভিড টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব শেষে রাজ্যকে কোভিড সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে সর্বস্তরের জনতাকে সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধান, হ্যান্ড সেনিটাইজার ব্যবহার এবং দূরত্ব বজায় রাখতে আবেদন জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেশব মহন্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *