BRAKING NEWS

রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের বঞ্চনা নিয়ে বিরোধীদের তোপে বেসামাল অর্থমন্ত্রী, হৈ হট্টগোল, মুলতুবি

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ ফেব্রুয়ারি ৷৷ সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাস নিয়ে বিরোধীদের হৈ

সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাস নিয়ে মঙ্গলবার বিধানসভায় হৈ চৈ করেন বিরোধীরা৷ ছবি নিজস্ব৷

চৈ সত্বেও ঝেড়ে কাশলেন না অর্থমন্ত্রী ভানুলাল সাহা৷ কেবল জানালেন, বাজেটে বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাসে ৬০০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে৷ সময়মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং সেটা বিধানসভাকে জানানো হবে৷ বিরোধীদের প্রশ্ণ বাণে একসময় অর্থমন্ত্রী ভানুলালকে বেসামাল হতে দেখা যায়৷ কিভাবে মেটানো হবে সরকারী কর্মচারীদের বঞ্চনা৷ ৬০০ কোটি দিয়ে তো কর্মচারীদের বঞ্চনার সামান্যও মিটবে না৷ বিরোধীদের চাপে কার্য্যত কোনঠাসা অর্থমন্ত্রীকে বাঁচিয়ে দেন অধ্যক্ষ রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ৷ তিনি এই বিষয়ে আলোচনার জন্য সময় দেওয়া হবে না বলে থামিয়ে দিলে বিরোধীরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করেন৷ প্রচন্ড হৈ হট্টগোলের মাঝে তখন ১০ মিনিটের জন্য সভা মুলতুবি ঘোষণা করেন অধ্যক্ষ৷

মঙ্গলবার বিধানসভায় কংগ্রেস বিধায়ক রতন লাল নাথ এবং তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক আশীষ কুমার সাহা সম্মিলিতভাবে প্রশ্ণ আনেন রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের ও সরকার অধিগৃহিত সংস্থা সমূহের বেতনভাতা পুনর্বিন্যাসের জন্য পে কমিশন গঠন করা হবে কি না৷ এর জবাবে অর্থমন্ত্রী ভানুলাল সাহা জানান, এব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি৷ আরো একটি প্রশ্ণে জানতে চাওয়া হয়, কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণের জন্য সরকার কি ব্যবস্থা অবলম্বন করেছে৷ এর জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, অর্থ কমিশন ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থের দাবী জানানো হয়েছিল৷ কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া যায়নি৷

তাতে, তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক অতিরিক্ত প্রশ্ণ উত্থাপন করে বলেন, পাশ্ববর্তী রাজ্য আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গ বেতন কমিশন গঠন করেছে এবং অন্তবর্তীকালীন সুযোগ সুবিধা প্রদানের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে৷ রাজ্যে এবারের বাজেটে বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাসের নামে ৬০০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে৷ কিন্তু, বিস্তারিতভাবে কিছুই বলা হয়নি কিভাবে সেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷ তিনি আরো যোগ করেন, গত তিন বছর ধরে বিরাট অর্থ অব্যয়িত থাকা সত্বেও সরকার কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য দূর করতে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না কেন৷ এর জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থ কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতেই বেতন, পেনশন, ঋণের সুদ ইত্যাদি খরচ বিবেচনা করে অর্থ কমিশন টাকা দিয়ে থাকে৷ কিন্তু রাজ্যের দাবি অনুযায়ী টাকা অর্থ কমিশন দেয়নি৷ এবিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের কাছে বেতন খাতে ৩৭৪৮২ কোটি টাকা, পেনশন খাতে ৭৫০০ কোটি টাকা, ঋণের সুদ মেটাতে ৩৭৮৪ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ৯৬০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল৷ তাতে মোট চাওয়া হয়েছিল ৫৮৩৯৯ কোটি টাকা৷ কিন্তু, দেখা গেছে অর্থ কমিশন মাত্র ৩০৫০১ কোটি টাকা দিয়েছে৷ অর্থাৎ রাজ্যের মোট চাহিদার ৫৩ শতাংশ টাকা দিয়েছে অর্থ কমিশন৷ ফলে, বর্দ্ধিত খরচের দায়ভার নেওয়া অসুবিধাজনক হয়ে যাবে৷ তার সাথে তিনি আরো যোগ করে বলেন, অর্থ কমিশন গ্র্যান্ট’র টাকা ঠিকমতো দিচ্ছে না৷ ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৪৮১৫ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু দিয়েছে মাত্র ৪৩৫৫ কোটি টাকা৷ এখন ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৩৮৮ কোটি টাকার বদলে ৫২৭৯ কোটি টাকা মার্চ মাসে রাজ্যের কাছে পৌছবে৷ তাই রসিকতা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, কর্মচারীদের বেতনভাতা মিটিয়ে দিতে সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলাচ্ছে না৷

কিন্তু তাতেও অর্থমন্ত্রীর সাথে একমত হতে পারেননি কংগ্রেস বিধায়ক রতন লাল নাথ৷ তাঁর বক্তব্য, দশ বছর পর পর বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাস হয় প্রত্যেক রাজ্যেই৷ এটা কর্মচারীদের অধিকার৷ কিন্তু, দেখা যাচ্ছে শেষবার ২০০৬ সালে কর্মচারীদের বেতন কাঠামো পুনবির্ন্যাস হয়েছিল, তাও কার্যকর দেখানো হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে৷ স্বাভাবিকভাবেই এখন বেতন কাঠামো পুনবির্ন্যাসের সময় হয়ে গেছে৷ ফলে, বেতন কমিশন করার নিয়ম যেখানে সারা দেশেই রয়েছে, সেখানে এরাজ্যে না করার পিছনে কারণ কি, প্রশ্ণ তুলেন রতনবাবু৷

জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, পঞ্চম বেতন কমিশন পর্যন্ত রাজ্যে রাজ্যে বেতন কমিশন ছিল, কেন্দ্রেও ছিল৷ ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু হওয়ার পর অধিকাংশ রাজ্য সেটা অনুসরণ করেছে, আমরাও করেছি৷ তবে, পে স্কেলের ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য ছিল, কিন্তু ধাপে ধাপে তা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে সমস্ত কিছু মিটিয়ে দেওয়া হয়৷ কেবল মহার্ঘ্য ভাতা পুরোটা মিটিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি৷ কারণ, অর্থের সংস্থান ছিল না৷ এখন সপ্তম বেতন কমিশন চালু হয়েছে৷ বিভিন্ন রাজ্য তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী দিচ্ছে, সে মোতাবেক আমরাও এবারের বাজেটে ৬০০ কোটি টাকার সংস্থান রেখেছি বর্দ্ধিত সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্য, বলেন অর্থমন্ত্রী৷ তাঁর বক্তব্য, ক্ষমতা অনুযায়ী যতটা দেওয়া সম্ভব হবে, ততটাই দেওয়া হবে৷

কিন্তু, তাতেও আশ্বস্থ হতে পারেননি রতনবাবু৷ তাঁর বক্তব্য, বাজেটে যে টাকা রাখা হয়েছে তাতে বকেয়া মহার্ঘ্য ভাতা মিটিয়ে দেওয়াও সম্ভব হবে না৷ কারণ, ১ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা মিটিয়ে দিতে প্রয়োজন ২৪.৩০ কোটি টাকা৷ সেক্ষেত্রে ২৪ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা মিটিয়ে দেওয়াও সম্ভব হবে না বলে দাবি করেন তিনি৷ তাই তিনি অর্থমন্ত্রীকে বিধানসভাতেই ঘোষণা দিতে জোর দেন৷ তাতে, অর্থমন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য, বেতন ও পেনশন সংশোধন করা হবে৷

তখন, তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনও আলোচনা করার জন্য যোগ দেন৷ রাজ্য সরকার ৬০০ কোটি টাকা দিয়ে কর্মচারীদের বেতন ও পেনশন কিভাবে দেবে তা নিয়ে ভেবে উঠতে পারছে না, তোপ দাগেন তিনি৷ তাই তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, যদি বেতন কমিশন কার্যকর করা হয় তাহলে সেটা ০১-০১-২০১৬ ধরে কার্যকর করুন৷ তাতে, অর্থমন্ত্রী বিরোধীদের উদ্দেশ্যে বলেন, পদ্ধতি মেনে সমস্ত কিছু করা হবে৷ রাজ্য সরকারের উপর আস্থা রাখুন৷ কিন্তু, অর্থমন্ত্রীর আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারেননি সুদীপবাবুও৷ বরং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চরিয়ে বলেন, যেখানে বকেয়া মহার্ঘ্য ভাতা মিটিয়ে দেওয়াই সম্ভব হবে না, সেখানে সংশোধিত কাঠামোর নাম করে কর্মচারীদের ঠকানো হচ্ছে৷ এই কথায় অর্থমন্ত্রী বলেন, অযথা রাগ করবেন না৷ যখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তখন বিধানসভাকে অবগত করানো হবে৷ কিন্তু, তাতে বিরোধীরা নিজেদের দাবিতেই অনঢ় থাকেন, বিধানসভায় সিদ্ধান্ত জানাতে হবে৷ তখনই অধ্যক্ষ ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন৷ এবিষয়ে আলোচনা আর দীর্ঘায়িত করার সুযোগ না দিয়ে প্রশ্ণোত্তর পর্বের পরবর্তী প্রশ্ণ উত্থাপনের জন্য বলেন৷ অধ্যক্ষের এই ভূমিকায় বিরোধীরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন৷ প্রচন্ড হৈ হট্টগোলের মাঝে অধ্যক্ষ তখন ১০ মিনিটের জন্য সভা মুলতুবি ঘোষণা করেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *