BRAKING NEWS

ভাষা শহীদদের স্মরণ করল ভারত – বাংলাদেশ, রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/সাব্রুম, ২১ ফেব্রুয়ারি৷৷ ভারত – বাংলা দু’দেশ এক সঙ্গে স্মরণ করল ২১ শে ভাষা শহীদদের৷

মঙ্গলবার আগরতলায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়৷ নিজস্ব ছবি৷

ভারত – বাংলাদেশ সীমান্তের সাব্রুম মহকুমার শ্রীনগর-ছাগলনাইয়া সীমান্ত হাটে আজ দু’দেশের উদ্যোগে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়৷ ভারতের পক্ষে সাংসদ জীতেন্দ্র চৌধুরী এবং বাংলাদেসের পক্ষে সাংসদ সিরিন আক্তার ও নিজামুদ্দিন হাজারী সহ বিশিষ্ট জনেরা শহীদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন৷ গাওয়া হয় দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত৷

সাংসদ জীতেন্দ্র চৌধুরী তাঁর ভাষণে দু’দেশের মানুষের মধ্যেকার বন্ধুত্বকে আরও সুদৃঢ় করে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করে বক্তব্য রাখেন৷ তিনি বলেন, ক্ষুধা, দারিদ্র, অশিক্ষা, কু-সংস্কার ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে দুদেশ এক সঙ্গে লড়াই করে দু’দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে৷

সাংসদ সিরিন আক্তার বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, শুধু ২১শে ফেব্রুয়ারী নয়, ১লা বৈশাখ, পৌষ পার্বণ ও স্বাধীনতা দিবসেও আমরা দুদেশ এক সঙ্গে মিলিত হতে পারি৷ শিক্ষা, সংসৃকতি ও বাণিজ্যিক উন্নয়নে দু’দেশকে এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি৷ সাংসদ নিজামুদ্দিন হাজারী তাঁর ভাষণে বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে ভারত যেভাবে দাঁড়িয়েছে তা চিরদিন মনে রাখবে বাংলাদেশের জনগণ৷ অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিধায়ক রীতা কর মজুমদার, জেলা শাসক সি কে জমাতিয়া৷ উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক প্রভাত চৌধুরী, দক্ষিণ ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি হিমাংশু রায়৷ স্বাগত ভাষণ দেন বাংলাদেশের ফেণী জেলার জেলা প্রশাসক আমিনুল আহসান৷ সভাপতিত্ব করেন পোয়াংবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান বাবুল সেন এবং ছাগলনাইয়া উপ জেলার চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী৷ ভারত-বাংলাদেশের শিল্পীরা নাচে গানে ভাষা শহীদদের স্মরণ করেন৷ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উভয় দেশের মানুষের উপস্থিতিতে সীমান্ত হাট মিলন মেলায় পরিণত হয়৷

সারা বিশ্বের সাথে আজ রাজ্যেও নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অমর একুশে ফেব্রুয়ারী ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়৷ এই উপলক্ষ্যে বিকেলে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে অমর একুশে স্মরণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়৷ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের উদ্যোগে এবং রাজ্য সরকারের বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর এবং তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের যৌথ সহযোগিতায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের সূচনা করে বিদ্যালয়শিক্ষা মন্ত্রী তপন চক্রবর্তী বাংলাদেশে তৎকালীন সময়ে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও ঐতিহাসিক স্মরণীয় ঘটনাগুলির উল্লেক করে বলেন, সেই ১৯৫২ সালে বাংলাদেসে নিজের মাতৃভাষার কথা বলার অধিকারের জন্য যে আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল, পরবর্তীতে তার স্বীকৃতি স্বরূপ ইউনেসকো আজকের ২১ ফেব্রুয়ারী দিনটিকে প্রতিবছর বিশ্ব জুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছে৷ তিনি বলেন, আধুনিকতার ছোঁয়াতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ছোট ছোট জাতি গোষ্ঠীর নিজস্ব মাতৃভাষাগুলি প্রতি নিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে৷ এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, রাজ্য সরকার রাজ্যে বসবাসকারী ১৯টি উপজাতি গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা, কৃষ্টি ও সংসৃকতি বিকাশের লক্ষ্যে ১৯৭৮ সাল থেকেই কাজ করে আসছে৷ বিশেষ করে ককবরক ভাষার উন্নয়নে৷ পাশাপাশি অন্যান্য জাতি গোষ্ঠী হালাম, কুকি, চাকমা, মণিপুরী ভাষার উন্নয়নেও সমান ভাবে কাজ করছে৷ যাতে করে সকল জাতি গোষ্ঠীর ভাষা সামন ভাবে মর্যাদা পায়৷ এজন্য খোলা হয়েছে পৃথক দপ্তর৷ তিনি বলেন, ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তপশিলে ককবরক ভাষাকে স্বীকৃতির জন্য রাজ্য সরকারের লড়াই জারি রয়েছে৷ যাতে করে এই ভাষাকে আরও বিকশিত করে তোলা যায়৷ অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে তথ্য ও সংসৃকতি মন্ত্রী ভানুলাল সাহা সকল জাতি গোষ্ঠীর ভাষার সমান মর্যাদা দেওয়ার উপর গুরতারোপ করে বলেন, মাতৃভাষা ছাড়া মনের ভাব প্রকাশ করা যায় না৷ বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে ভাষা ভিত্তিক একটি রাষ্ট্র স্থাপিত হয়ে গেলো৷ এটি ভাষা নিয়ে আন্দোলনের একটি স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক মুহুর্ত৷ তিনি বলেন, এবারেই প্রথম বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনের সাথে রাজ্য সরকার যৌথভাবে এই ধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে৷ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সহকারী হাই কমিশনার মোঃ সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, আজকের দিনটি বাংলাদেশের জন্য গর্বের৷ এ দিবসটি বিশ্বের ২০০ টিরও বেশি দেশে সমান মর্যাদায় পালিত হচ্ছে৷ তিনি এ দিবস উদযাপনের প্রেক্ষাপটের উল্লেখ করে বাংলাদেশের সাথে যৌথ ভাবে এই ধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য ত্রিপুরা সরকারকে ধন্যবাদ জানান৷ তিনি বলেন, এই ধরণের অনুষ্ঠান ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মৈত্রীর বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে৷ অনুষ্ঠানে এম বি বি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম কুমার বসু, বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা এম কে নাথ, ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মিহির দেব ও এস সি ই আর টি আর অধিকর্তা রতিশ মজুমদার এই দিবস উদযাপনের তাৎপর্য উল্লেখ করে আলোচনা করেন৷ অনুষ্ঠানের শুরুতে মন্ত্রী তপন চক্রবর্তী, মন্ত্রী ভানুলাল সাহা সহ উপস্থিত অন্যান্য অতিথিগণ শহীদ বেদীতে পূষ্পার্ঘ অর্পণ করে ভাষা শহীদদের স্মরণ করেণ৷

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার শিল্পীদের অংশ গ্রহণে মনোজ্ঞ সাংসৃকতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়৷ এদিকে এ দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে সকালে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, সাংসৃকতিক ব্যক্তিত্ব বুদ্ধিজীবীদের অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়ে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়৷ শোভাযাত্রাটি উমাকান্ত একাডেমী প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে এসে শেষ হয়৷ এখানে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তথ্য ও সংসৃকতি মন্ত্রী ভানুলাল সাহা, বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সহকারী হাই কমিশনার মোঃ সাখাওয়াৎ হোসেন, তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের সচিব এম এল দে, অধিকর্তা এম কে নাথ প্রমুথ৷ অনুষ্ঠানে স্থানীয় ও বাংলাদেশের শিল্পীরা সাংসৃকতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন৷

বক্সনগর সংযোজনঃ সোনামুড়া মহকুমার অধীন বক্সনগর সীমান্তবর্তী গ্রামটি হল রহিমপুর৷ যা সীমান্তের এপাড়ে এবং ওপারে সোনার বাংলা৷ এখানে শুধুমাত্র মাঝখানে একটি কাঁটাতারের বেড়া৷ আজকের দিনটি ছিল মহান অমর একুশে৷ অর্থাৎ ভাষা শহীদ দিব,৷ একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস৷ রহীমপুর গ্রাম পঞ্চায়েত ও এলাকাবাসীর যৌথ উদ্যোগে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ভাষা শহীদ দিবস পালন করে আসছে৷ এই বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷ এদিন সকাল সাতটায় রহিমপুর দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে একটি র্যালী বের হয়৷ র্যালিটি রহিমপুরের বিভিন্ন এলাকার পরিক্রমা করে৷ শেষ শহীদ স্মৃতিতে পুষ্পার্ঘ নিবেদন করে শহীদদের সম্মান জানানো হয়৷ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রাড়ী মন্ত্রী সহিদ চৌধুরী৷ তাছাড়া উপস্থিত ছিলেন এলাকার প্রবীন নাগরিকরা৷ মন্ত্রী সহিদ চৌধুরী সহ প্রত্যেক বক্তাই দিনটির তাৎপর্য্য ব্যাখ্যা করেছেন৷ পরে বিকালে শুরু হয় সাংসৃকতিক অনুষ্ঠান৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *