BRAKING NEWS

বনধের প্রাক্কালেই অগ্ণিগর্ভ গন্ডাছড়া, সাত জওয়ানকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠাল আইপিএফটি সমর্থকরা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৫ ফেব্রুয়ারী৷৷ ৪৮ ঘন্টার গন্ডাছড়া বনধের আগেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ঐ প্রত্যন্ত মহকুমা এলাকা৷ বন্ধ আহ্বানকারী আইপিএফটির যুব ব্রিগেডের সাথে সংঘর্ষে রক্তাক্ত হয়েছেন সাতজন নিরাপত্তা কর্মী৷ গুরুতর জখম দুই টিএসআর জওয়ানকে গন্ডাছড়া হাসপাতাল থেকে রাজধানী আগরতলায় জি বি হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে৷ অন্য পাঁচজনের চিকিৎসা চলছে গন্ডছড়া মহকুমা হাসপাতালে৷ এদিকে, সংঘর্ষের ঘটনার পর গোটা মহকুমায় তীব্র উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ পুলিশের পদস্থ আধিকারীকরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন৷ পরিস্থিতির উপর নজরদারী চালাচ্ছে আরক্ষা প্রশাসন৷

সংবাদে প্রকাশ, পৃথক রাজ্যের দাবীদার তথা আঞ্চলিক দল আইপিএফটির যুব সংগঠন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আটচল্লিশ ঘন্টার গন্ডাছড়া মহকুমা বনধ আহ্বান করে৷ তাদের দাবী গত আট ফেব্রুয়ারী ত্রিদলীয় ফোরামের ডাকা বনধে সিপিএম ক্যাডারদের হামলায় আইপিএফটির বেশ কয়েকজন কর্মী সমর্থক যারা গুরুতর আহত হয়েছে তাদেরকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে৷ এই দাবী প্রশাসনের কাছে রাখা হয়েছিল যুব সংগঠনটির তরফ থেকে৷ সেইসাথে হুমকি দেওয়া হয়েছিল যদি দাবী না মানা হয় তাহালে ষোল ফেব্রুয়ারী থেকে আটচল্লিশ ঘন্টার গন্ডাছড়া বনধ পালন করা হবে৷

সেই মোতাবেক, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হতে চলা বনধকে সর্বাত্মক সফল করার জন্য মহকুমার বাইরে থেকে প্রচুর সংখ্যায় কর্মী সমর্থক গন্ডাছড়ায় আসতে থাকে বুধবার সকাল থেকেই৷ এদিকে, আরক্ষা প্রশাসনের তরফ থেকে বহিরাগতদের আগমন প্রতিরোধ করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে৷ পুলিশ প্রশাসনের ইনস্পেক্টর জেনারেল (আইন শৃঙ্খলা) কে ভি শ্রীজেস, ধলাইয়ের পুলিশ সুপার জল সিং মিনা, এসডিপিও জওহর দেববর্মা সহ পদস্থ পুলিশ অফিসাররা গন্ডাছড়ায় চলে গিয়েছেন বুধবার দুপুরের আগেই৷ এই বনধকে ঘিরে যাতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য প্রায় বারোশ নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে গোটা মহকুমায়৷ এর মধ্যে রয়েছে টিএসআর ও পুলিশ৷ তাছাড়া অতিরিক্ত রিজার্ভ হিসেবে রাখা হয়েছে ৬৫০ জন টিএসআর জওয়ান এবং এক প্ল্যাটুন সিআরপিএফ জওয়ান৷ পুলিশ প্রশাসনের এতো আয়োজনের মধ্যেই বনধ শুরু হওয়ার আগেই এদিন বিকালে ঘটে গিয়েছে অপ্রীতিকর ঘটনা৷

জানা গিয়েছে, সকাল থেকে আশেপাশের মহকুমাগুলি থেকে কাতারে কাতারে আইপিএফটি সমর্থক গন্ডাছড়ায় পৌঁছতে শুরু করে৷ প্রচুর সংখ্যায় বনধ সমর্থক গন্ডাছড়ায় আসতে দেখে পুলিশ প্রশাসন রীতিমতো উদ্বেগের মধ্যে পড়ে যায়৷ তাই বাধ্য হয়ে বুধবার বিকাল দুইটা থেকে ১৪৪ ধারা জারী করে দেয় প্রশাসন৷ এই ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে শনিবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত৷ পাশাপাশি গন্ডাছড়া যাওয়ার দুটি সড়কের পৃথক স্থানে দুটি অস্থায়ী চেকপোস্ট গড়ে তোলা হয়৷ এগুলি হল অমরপুর-গন্ডাছড়া সড়কের বাবুসারি টিএসআর ক্যাম্প এবং আমবাসা-গন্ডাছড়া সড়কের বড়বাড়ি এলাকায়৷ তাছাড়া কালাঝারিতে একটি চেকপোস্ট আগেই ছিল৷ সেখানেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়৷

গন্ডাছড়া মহকুমা থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কালাঝাড়ি চেকপোস্টের সামনে দিয়ে প্রচুর সংখ্যায় আইপিএফটি সমর্থক গাড়ি ভর্তি হয়ে গন্ডাছড়ার দিকে আসতে শুরু করে৷ বাবুসাহি চেকপোস্টের সামনে গাড়িগুলিকে আটকে দেয় নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানরা৷ তারপর আইপিএফটি সমর্থকরা পায়ে হেটে কালাঝাড়ি চেকপোস্টে পৌঁছে৷ সেখানে পৌঁছতেই টিএসআর জওয়ানদের সাথে আইপিএফটি সমর্থকদের তীব্র বাদানুবাদ হয়৷ একসময় উত্তেজিত হয় শত শত আইপিএফটি কর্মীরা সেখানে কর্তব্যরত টিএসআর জওয়ানদের উপর হামলা চালায়৷ তাতে সাতজন টিএসআর জওয়ান ও পুলিশ কর্মী গুরুতর জখম হন৷ আহতরা হলেন, সুবাষ দাস (৩৮), পার্থ দেবনাথ (২৭), বিকাশ দাস (৩৪), পলাশ দাস (২৮), রাজেশ দাস (২৯), বিজন চন্দ (৩৬) এবং লক্ষ্মণ দেবনাথ (৩৬)৷ বিজন চন্দও লক্ষ্মণ দেবনাথ টিএসআর জওয়ান৷ বাকিরা পুলিশ কর্মী৷ আহতদের মধ্যে দুইজনকে জি বি হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে৷

এদিকে, এই ঘটনার খবর পেয়ে আইজি (আইন শৃঙ্খলা), জেলার পুলিশ সুপার সহ পদস্থ পুলিশ অফিসাররা কালাঝাড়ি চেকপোস্টে ছুটে গিয়েছেন৷ বিশাল সংখ্যায় নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে৷ বিভিন্ন এলাকা থেকে চার শতাধিক আইপিএফটি কর্মী সমর্থককে আটক করা হয়েছে এবং তাদের কালাঝাড়ি কমিউনিটি হলে রাখা হয়েছে৷ অন্যদিকে, প্রশাসনের তরফ থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে শুরু হওয়া আটচল্লিশ ঘন্টার বন্ধের প্রেক্ষিতে গন্ডাছড়া হাসাপাতলের সমস্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবাও যাতে স্বাভাবিক রাখা যায় তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *