নয়াদিল্লি, ৮ মে: ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর ‘ এর আওতায় পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি ও লঞ্চপ্যাডে ভোররাতে এয়ারস্ট্রাইক চালানোর পর দেশজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এর জেরে পাঞ্জাব, রাজস্থান ও গুজরাটের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সমস্ত সরকারি অনুষ্ঠান, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে সীমান্ত অঞ্চলে।
এই হামলা এসেছে জম্মু-কাশ্মীরের পাহেলগামে ২৬ জন নিহত হওয়ার ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঠিক দুই সপ্তাহ পর। লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে জৈশ-ই-মোহাম্মদ এবং মুরিদকেতে লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গি সংগঠনের ঘাঁটি।
৫৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমান্ত থাকা পাঞ্জাব রাজ্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। রাজ্যের মন্ত্রী অমান অরোরা জানান, সমস্ত সীমান্ত জেলা হাই অ্যালার্টে রয়েছে এবং সব ধরনের জনসমাবেশ ও সরকারি অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।
তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই প্রত্যাঘাতের প্রশংসা করেন এবং বলেন, “দেশের অখণ্ডতা বিপন্ন হলে পাঞ্জাববাসী কখনও পিছু হটেন না। প্রয়োজনে প্রাণ দিতেও প্রস্তুত।” মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান তার নির্ধারিত অ্যান্টি-ড্রাগ প্রোগ্রাম বাতিল করেন। পুলিশকে ‘সেকেন্ড লাইন অফ ডিফেন্স’ হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং সেনার সঙ্গে সমন্বয়ে চলছে সতর্কতা ব্যবস্থা।
রাজস্থানে ১০৩৭ কিমি দীর্ঘ সীমান্ত ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিশনগড় ও জোধপুরের বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়েছে ১০ মে পর্যন্ত। সীমান্তরক্ষী বাহিনী (BSF) টহল বাড়িয়েছে এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিট অ্যাক্টিভ করা হয়েছে।
বারমের, জয়সলমের, জোধপুর, বিকানের এবং শ্রীগঙ্গানগরের সমস্ত স্কুল, আঙ্গনওয়াড়ি এবং কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হয়েছে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত। ৮ মে-র পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন নির্দেশ দিয়েছে জরুরি ওষুধ, রক্ত ও জ্বালানির পর্যাপ্ত মজুদ রাখতে। কিছু এলাকায় ব্ল্যাকআউটও করা হয়েছে (রাত ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত)।
গুজরাটের কচ্ছ জেলাসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় ভয়াবহ সতর্কতা জারি হয়েছে। ভূজ ও রাজকোট বিমানবন্দর থেকে সব বেসামরিক বিমান পরিষেবা তিন দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে এবং এখন শুধুমাত্র সামরিক বিমান ব্যবহার করছে এই এয়ারবেসগুলি।
জামনগর, হালার সৈকত এবং অন্যান্য উপকূলীয় এলাকায় মেরিন পুলিশ, স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ , টাস্ক ফোর্স কমান্ডোদের মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তা তল্লাশি চলছে প্রতিটি স্পর্শকাতর এলাকায়।
অন্যদিকে, আহমেদাবাদ রেল স্টেশনেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স , সরকারি রেল পুলিশ এবং কুইক রিঅ্যাকশন টিম যৌথ টহল দিচ্ছে। লাগেজ স্ক্রিনিং, অ্যান্টি-সাবোটাজ ড্রিল এবং ফ্ল্যাগ মার্চ চালানো হয়েছে।
‘অপারেশন সিঁদুর ‘ ভারতের একটি কৌশলগত সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে, তবে এর জেরে দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে চরম সতর্কতা বজায় রাখা হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার।