নয়াদিল্লি, ৮ মে : উত্তর, পশ্চিম ও মধ্য ভারতের মোট ২৭টি বিমানবন্দর আগামী ১০ মে ভোর ৫:২৯ মিনিট পর্যন্ত বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচলের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। এর ফলে দেশজুড়ে বিমানে যাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। শুধুমাত্র বৃহস্পতিবারেই ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলিকে ৪৩০টি বিমান বাতিল করতে হয়েছে, যা দেশের মোট নির্ধারিত ফ্লাইটের প্রায় ৩ শতাংশ। পাকিস্তানেও বড় প্রভাব পড়েছে। সেখানে ১৪৭টির বেশি বিমান বাতিল হয়েছে, যা দৈনিক সূচির প্রায় ১৭ শতাংশ।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার পাকিস্তান ও ভারতের পশ্চিম অংশ—কাশ্মীর থেকে গুজরাট পর্যন্ত—বেসামরিক বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে কার্যত ফাঁকা ছিল। কাশ্মীর থেকে গুজরাট পর্যন্ত ভারতের পশ্চিম সীমান্ত এবং পাকিস্তানের আকাশসীমায় কোনো বেসামরিক উড়ান ছিল না। এই অঞ্চলের সংবেদনশীল পরিস্থিতির কারণে বিমান সংস্থাগুলি এই রুট এড়িয়ে চলেছে।
শ্রীনগর, জম্মু, লেহ, চণ্ডীগড়, অমৃতসর, লুধিয়ানা, পাতিয়ালা, বাথিন্ডা, হালওয়ারা, পাঠানকোট, ভুনতার, শিমলা, গাগগাল, ধর্মশালা, কিশনগড়, জয়সালমের, জোধপুর, বিকানের, মুন্দ্রা, জামনগর, রাজকোট, পোরবন্দর, কাণ্ডলা, কেশোদ, ভূজ, গোয়ালিয়র এবং হিন্দন বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়েছে। এসব বিমানবন্দরের বেশিরভাগই সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত বিমান উঠা-নামায় ব্যবহৃত হয়।
এরই মধ্যে বিভিন্ন বিমান সংস্থা পরিষেবা সংক্রান্ত বিবৃতি জারি করেছে। ইন্ডিগো জানিয়েছে, শ্রীনগর, জম্মু, অমৃতসর, লেহ, চণ্ডীগড় ও ধর্মশালা** থেকে তাদের ফ্লাইট পরিষেবা প্রভাবিত হয়েছে। যাত্রীদের বিমানবন্দরে রওনা হওয়ার আগে ফ্লাইটের বর্তমান অবস্থা যাচাই করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এক্স-এ একটি পোস্টে সংস্থাটি জানায়, “শ্রীনগরগামী ও শ্রীনগর থেকে যাত্রার সমস্ত ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ২২ মে ২০২৫ পর্যন্ত বুকিং করা টিকিটের জন্য পরিবর্তন ও বাতিল ফি সম্পূর্ণ মুকুব করা হয়েছে।”
এয়ার ইন্ডিয়া বিবৃতিতে জানিয়েছে, জম্মু, শ্রীনগর, লেহ, জোধপুর, অমৃতসর, ভূজ, জামনগর, চণ্ডীগড় ও রাজকোটগামী সমস্ত ফ্লাইট ৭ মে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া, দুইটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট যা অমৃতসরগামী ছিল, তা দিল্লিতে অবতরণে বাধ্য হয়েছে।
স্পাইসজেট বিবৃতিতে বলেছে, ধর্মশালা, লেহ, জম্মু, শ্রীনগর ও অমৃতসরগামী ফ্লাইট পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, শুধুমাত্র প্রধান ফ্লাইট নয়, এসবের সঙ্গে সংযুক্ত অন্যান্য ট্রানজিট ফ্লাইটও প্রভাবিত হবে। এদিকে, আকাশা এয়ার যদিও নির্দিষ্ট রুটের নাম প্রকাশ করেনি। তবে জানিয়েছে, তাদের উত্তরের বেশ কয়েকটি শহর যেমন শ্রীনগর ও চণ্ডীগড়গামী রুটে বড় প্রভাব পড়েছে। যাত্রীদের তাদের বুকিং নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করতে এবং সংস্থার ওয়েবসাইট বা হেল্পলাইন থেকে আপডেট নিতে বলা হয়েছে।
‘অপারেশন সিন্দুর’-এর অংশ হিসেবে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পরেই বুধবার থেকে বিমান চলাচলে এই বিশাল প্রভাব দেখা যায়। এই মুহূর্তে জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখ, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লি এনসিআর-এর কিছু অংশে বিমানবন্দর পরিষেবা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন বিমান সংস্থা যাত্রীদের বিমানবন্দরে যাওয়ার আগে ফ্লাইট স্ট্যাটাস পরীক্ষা করার অনুরোধ জানিয়েছে।