BRAKING NEWS

Extremist business no longer : ত্রিপুরায় উগ্রপন্থার ব্যবসা এখন আর সম্ভব নয় : মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ২৪ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : উগ্রপন্থার ব্যবসা এখন আর ত্রিপুরায় চলবে না৷ উগ্রপন্থীদের হাতিয়ার করে রাজনীতি করাও যাবেনা৷ কারণ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন৷ রোজগারের পাশাপাশি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সুযোগ-সুবিধা পৌছে দেওয়া হয়েছে৷ তাই, ত্রিপুরায় উগ্রপন্থা ফিরে আসবে, অযথা ভীত সন্ত্রস্থ হবেন না৷ আজ বিধানসভায় ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য আশীষ কুমার সাহার উত্থাপিত বেসরকারী প্রস্তাবের জবাবে এভাবেই অভয় দিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ সাথে তিনি আশ্বস্ত করেন, ত্রিপুরায় উগ্রপন্থী হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়-বিচারের জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে নিয়োগ করে তদন্ত কমিশন গঠনের বিষয়টির সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে বিবেচনা করা হবে৷


আজ বিধানসভায় ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য আশীষ কুমার সাহা বেসরকারী প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেন, দীর্ঘ সাড়ে চার দশক ধরে চলে আসা নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থীদের দ্বারা ত্রিপুরায় খুন, সন্ত্রাস ও অপহরণের মত ঘৃণ্য ঘটনাগুলির পিছনে কোন রাজনৈতিক দল, সংস্থা কিংবা ব্যক্তির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদত ছিল বা এখনো রয়েছে, তা জনসম্মুখে তোলে ধরার উদ্দেশ্যে উচ্চ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে শীঘ্রই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করার জন্য ত্রিপুরা সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করুক৷ এদিন উগ্রপন্থী ইস্যুতে বামেরাই কার্যত তাঁর নিশানায় ছিলেন৷ তিনি বলেন, বাম জমানায় মন্ত্রী, বিধায়ক উগ্রপন্থার বলি হয়েছেন৷ বহু নেতা, কর্মী অপহৃত হয়েছেন৷ সেই কালো অধ্যায় ত্রিপুরায় আবারও ফিরে আসছে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে৷


তাঁর বক্তব্য, নির্বাচন এগিয়ে আসলেই ক্ষমতা দখলের চেষ্টায় উগ্রপন্থীদের ব্যবহার অতীতে ত্রিপুরাবাসী দেখেছেন৷ ত্রিপুরায় এক সময় উগ্রপন্থীরা অবাধে খুন, লুট চালিয়েছে৷ তাদের গুলিতে বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য খুন হয়েছেন৷ অথচ, ওই খুনের ঘটনায় গঠিত ইউসুফ কমিশনের রিপোর্ট আদালতের হস্তক্ষেপে বামফ্রন্ট সরকার বাধ্য হয়ে প্রকাশ করেছে৷ তিনি রিপোর্টের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, বৈরী হামলায় প্রয়াত প্রাক্তন মন্ত্রীর সাথে উগ্রপন্থীর যোগাযোগ ছিল, ইউসুফ কমিশনের রিপোর্টে সাফ উল্লেখ রয়েছে৷ সবচেয়ে আশ্চর্য্যের বিষয় হল, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত কিছু জেনেও মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন৷ সাথে তিনি যোগ করেন, উগ্রপন্থীদের সাথে রাজনৈতিক দলের যোগাযোগ রয়েছে ইউসুফ কমিশনের রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে৷ তাই, কমিশন গঠন করে উগ্রপন্থার মদতদাতাদের খুঁজে বের করা খুবই প্রয়োজন বলে মনে করি৷ পাশাপাশি, উগ্রপন্থী হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করার প্রস্তাব দেন তিনি৷


এদিন ওই বেসরকারী প্রস্তাবে আলোচনায় অংশ নিয়ে ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য দিবাচন্দ্র রাঙ্খল বলেন, অতীতে কার নির্দেশে উগ্রপন্থার জন্ম হয়েছে তা জানা খুবই প্রয়োজন৷ এক্ষেত্রে আত্মসমর্পনকারী বৈরীদের জিজ্ঞাসাবাদে সমস্ত রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে তিনি মনে করেন৷ ট্রেজারি বেঞ্চের আরেক সদস্য আশীষ দাসও উগ্রপন্থী হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করার প্রস্তাব দিয়েছেন৷ তবে, এদিন ওই বেসরকারী প্রস্তাবে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য শংকর রায় এবং অরুন চন্দ্র ভৌমিক৷ তাঁদের বক্তব্য, শুধু উগ্রপন্থী হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা দেওয়া হলে মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা যাবে৷ কারণ, দীর্ঘ বাম শাসনে বহু মানুষ রাজনৈতিক সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন৷ তাঁরাও পুনর্বাসনের সুযোগ পাওয়ার অধিকারী৷


ওই বেসরকারী প্রস্তাবের উপর আলোচনা শুনে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সকলকে আশ্বস্ত করেন, ত্রিপুরায় উগ্রপন্থার ব্যবসা এখন আর চলবে না৷ কারণ, মানুষের কাছে রোজগার পৌছে দেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরায় উগ্রপন্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জনজাতি অংশের মানুষ৷ তিনি এই পরিস্থিতির জন্য বামফ্রন্ট সরকারকে দায়ী করেছেন৷ তাঁর দাবি, উগ্রপন্থার জন্ম হলে উন্নয়নের জন্য কেউ চিত্কার করবে না৷ তাতে, উন্নয়নের অর্থ লুটেপুটে খাওয়া যাবে, এমনটাই মানসিকতা ছিল পূর্বতন সরকারের৷ তাঁদের মানসিকতা ছিল উগ্রপন্থার বাজার টিকিয়ে রাখা৷ তাতে, ভয় পরিবেশ কায়েম হবে৷ কিন্ত, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদী দায়িত্ব নেওয়ার পর উগ্রপন্থার শিকর উপরে ফেলা হয়েছে৷
তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রী মোদী উগ্রপন্থার ব্যবসা করার দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন৷ উগ্রপন্থী সমস্যার সমাধান করেছেন৷ তাই, উগ্রপন্থীদের সহায়তায় নির্বাচনে জয়ী হওয়া এখন সম্ভব নয়৷ তিনি বলেন, মানুষের কাছে রোজগার পৌছে দেওয়া হয়েছে৷ শিক্ষা, স্বাস্থ্যের সুবিধা মানুষের কাছে পৌছে যাচ্ছে৷ তাছাড়া, ২০২২ সালের মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্ত রাজ্যে সীমান্তে কাটা তারের বেড়া নির্মানের কাজ সমাপ্ত হয়ে যাবে৷ ফলে, ত্রিপুরায় উগ্রপন্থীদের নিয়ে রাজনীতি সম্ভব হবে না৷


মুখ্যমন্ত্রী এদিন আশ্বস্ত করেন, উগ্রপন্থী হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়-বিচারের জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দিয়ে তদন্ত কমিশন গঠনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে৷ তবে, কমিশন গঠন করে উগ্রপন্থা দমন সম্ভব হবে না৷ এদিন তিনি জোর গলায় বলেন, ত্রিপুরায় উগ্রপন্থার ব্যবসা আর সম্ভব হবে না৷ তাই, অযথা চিন্তিত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই, অভয় দিয়ে বলেন তিনি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *