BRAKING NEWS

Tripura in a planned manner : ত্রিপুরার শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিকল্পিতভাবে বিঘ্ন ঘটানোর এক প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিধানসভায় উষ্মা প্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর

আগরতলা, ২৪ সেপ্টেম্বর (হি. স.) : অতি সম্প্রতি ত্রিপুরার শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিকল্পিতভাবে বিঘ্ন ঘটানোর এক প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ত্রিপুরা সরকার এ সমস্ত কার্যকলাপের বিরোধী। ত্রিপুরার সার্বিক উন্নতির স্বার্থে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকা প্রয়োজন। সাম্প্রতিককালে ত্রিপুরার ৬টি জেলায় বেশ কিছু রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। যা মোটেও কাম্য নয়। আজ বিধানসভার অধিবেশনে ত্রিপুরার আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে জনস্বার্থে আলোচনায় অংশ নিয়ে এভাবেই উষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।


এদিন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেই রাজ্যের স্বার্থে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষ্যে সরকার সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পুলিশের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অপরাধের ধরণ অনুযায়ী চারটি তদন্তকারী ইউনিট গঠন করা হয়েছে। তালিকা তুলে ধরে তিনি জানান, সিরিয়াস ক্রাইম ইউনিট, সাইবার ক্রাইম ইউনিট, ইকনোমিক অফেন্স ইউনিট এবং এন্টি নারকোটিকস ইউনিট গঠন করা হয়েছে। এই ইউনিটগুলিতে সাইবার ক্রাইম, অর্থনৈতিক অপরাধ, নেশাজাতীয় সামগ্রীর অপরাধ এবং অন্যান্য জঘন্য অপরাধ সম্পর্কে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং প্রতিটি বিভাগের দায়িত্ব একজন এস পি পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিককে দেওয়া হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, ত্রিপুরায় নেশা বিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে। বীট পেট্রোলিং পুলিশি সিস্টেম সারা ত্রিপুরায় চালু করা হয়েছে। সাথে তিনি যোগ করেন, ইমার্জেন্সি রেসপন্স সিস্টেম ব্যবস্থা প্রবর্তন করে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ করা হয়েছে। আগরতলা শহরে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পাশাপাশি, পুলিশ বিভাগে ন্যূনতম ১০ শতাংশ মহিলা পুলিশের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং পুলিশ বিভাগে প্রতিবছর অত্যাধুনিক সরঞ্জাম দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।


এদিন তিনি বলেন, এ সমস্ত ব্যবস্থা সহ আরও অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে ত্রিপুরায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। তার প্রমান মিলেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা এনসিআরবি (ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো) রিপোর্টে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী বিগত ৩ বছরে ত্রিপুরায় মোট ১৬,৭১৯টি বিভিন্ন অপরাধের মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ২০১৮ সালে ৬,০৭৮টি, ২০১৯ সালে ৫,৯৮৮টি এবং ২০২০ সালে ৪,৬৫৩টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। ২০২০ সালে ৭১.৭ শতাংশ মামলায় চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে। মহিলাদের উপর অপরাধের ক্ষেত্রেও অপরাধের সংখ্যা হ্রাস লক্ষ্য করা গেছে।


তাঁর দাবি, এনসিআরবি রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৯ সালে মহিলাদের উপর অপরাধের মোট ১,০৭০টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে এবং ২০২০ সালে তা হ্রাস পেয়ে নথিভুক্ত মামলার সংখ্যা হয়েছে ৮৭৪টি। তাছাড়া ২০১৯ সালে যেখানে ১৪৪টি হত্যার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে সেখানে ২০২০ সালে তা হ্রাস পেয়ে ১১৪তে দাঁড়িয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ত্রিপুরায় যখন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে তখনই রাজ্যে অতি সম্প্ৰতিকালে মূলত ছয়টি জেলায় বেশ কিছু রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এমন সংঘর্ষের ঘটনা ত্রিপুরা সরকারের কাছে কাম্য নয়।


তাঁর কথায়, দেখা গেছে অতি সাম্প্রতিককালে ত্রিপুরায় বিভিন্ন থানায় মোট ৪২টি মামলা লিপিবদ্ধ হয়েছে। যার মধ্যে ২৫টি মামলা সিপিআইএম দলের পক্ষ থেকে, ৭টি মামলা বিজেপি দলের পক্ষ থেকে, ৮টি মামলা পুলিশ নিজে থেকে এবং ২টি মামলা সংবাদপত্রের সম্পাদক থেকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তাঁর দাবি, প্রতিটি মামলায় সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করে এখন পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৯৫টি নোটিশ সিআরপিসি ৪১(এ) ধারার অধীনে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে ৪১টি মামলা তদন্তাধীন আছে এবং ১টি মামলা ক্রাইম ব্রাঞ্চের নিকট তদন্তের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্তের কাজ শেষ হলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, বিধানসভায় আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, ত্রিপুরার সামগ্রিক উন্নতির স্বার্থে যে কোনও পরিকল্পিত আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী ঘটনা অনভিপ্রেত এবং এইরকম ঘটনার যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রাজ্য সরকার দায়বদ্ধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *