প্রয়াত সিপিএম রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাশ, শোক ব্যক্ত মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সহ বহুজনের

আগরতলা, ১৬ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : কোভিড থেকে মুক্তি পেয়েও শেষ রক্ষা হল না। কলকাতায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সিপিএম-এর ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাশ আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রয়াত হয়েছেন। এদিন সকাল ৭:১৯ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন পোড় খাওয়া বাম নেতা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১। রেখে গেছেন স্ত্রী ও এক মেয়েকে। কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পরও তাঁর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা অত্যাধিক কমে যাওয়ায় তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি বলে সিপিএম পার্টি সূত্রে জানা গেছে। আজ বিকেলেই কলকাতা তাঁর মরদেহ আগরতলায় আসবে। তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক মহলে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় বিচার ও ক্ষমতায়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক গৌতম দাশের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সিপিএম পলিটব্যুরো এক বিবৃতিতে গৌতম দাশের প্রয়াণে পার্টির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে।

গত ২৫ আগস্ট সিপিএম ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাশ করোনায় আক্রান্ত হন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে তিনি বাড়িতেই আইসোলেশনে ছিলেন। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত ২৭ আগস্ট তাঁকে আগরতলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। শুরুতে চিকিৎসায় তিনি সাড়াও দিচ্ছিলেন। কিন্তু কিছুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর তাঁর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে শুরু করে। ফুসফুসের সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৬ সেপ্টেম্বর তাঁকে কলকাতায় স্থানান্তর করা হয়েছিল। কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন তিনি কোভিড নেগেটিভ হন। কিন্তু তাঁর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কিছুতেই বাড়ছিল না। বলা যায়, চিকিৎসকরা তাঁর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক করতে পারছিলেন না। ফলে, মঙ্গলবার কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পর তাঁকে পুনরায় ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। আজ সকাল ৭-টা ১৯ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সিপিএম পার্টি সূত্রের খবর, আজ বিকাল ৫-টা ২০ মিনিটের বিমানে গৌতম দাশের মরদেহ কলকাতা থেকে আগরতলায় আনা হবে। আগামীকাল তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাশের প্রয়াণে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি ফেসবুক বার্তায় বলেন, সিপিআইএম দলের রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাশের প্রয়াণে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। আমি প্রয়াতের বিদেহী আত্মার সদগতি কামনা করছি। ঈশ্বরের কাছে আমার প্রার্থনা, শোকসন্তপ্ত পরিবার ও প্রিয়জনদের এই দুঃখ সহ্য করার শক্তি প্রদান করুন। এছাড়া তাঁর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় বিচার ও ক্ষমতায়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক।

প্রতিমা বলেন, সিপিআই (এম)-এর রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাশের আকস্মিক প্রয়াণের সংবাদ শুনে আমি ব্যথিত। তাঁর স্মৃতির প্রতি আমার হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাচ্ছি। দীর্ঘদিন রাজ্যের রাজনৈতিক আঙিনায় আত্মবিনিয়োগ করে গেছেন তিনি। দুরূহ এই সময়াবর্তে ঈশ্বর তাঁর পরিবার পরিজন ও গুণগ্রাহীদের শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি প্রদান করুন। বিজেপির ত্রিপুরা প্রদেশ সভাপতি ডা. মানিক সাহা এক শোক বার্তায় বলেন, সিপিআইএম দলের রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাশের অকাল প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাহত। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার সদগতি কামনা করছি এবং পরিবার ও প্রিয়জনদের সমবেদনা জানাচ্ছি।

তাঁর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, প্রয়াত গৌতম দাশের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তাঁর স্ত্রী এবং কন্যা সহ পরিবার পরিজনদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, গৌতম দাশের অসুস্থতা চলছিল বহুদিন থেকে। কয়েক মাস আগেও হাসপাতালে ভরতি হয়ে তাঁকে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। কিন্তু এবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় অপ্রত্যাশিতভাবে অকস্মাৎ এভাবে চলে গেলেন, তা বিশ্বাস করতে অসুবিধা হচ্ছে।

মানিক সরকারের দাবি, দীর্ঘ পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে নিজেকে উৎসারিত করে দেওয়া সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মজীবনে মতাদর্শগত ও রাজনৈতিক উচ্চ চেতনা এবং প্রথম সারির একজন সংগঠক হিসেবে যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষর রেখে গেছেন গৌতম দাশ। তাঁর রেখে যাওয়া অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মস্মৃতিতে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। মানিক সরকারের কথায়, এই অসময়ে তাঁর চলে যাওয়া মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির জন্য, বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য নিঃসন্দেহে বড় ক্ষতি। মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি এবং বাম-গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সম্মিলিত ধারাবাহিক অন্তরিক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়েই এই ক্ষতি অতিক্রম করা সম্ভব হবে বলেই আমার বিশ্বাস।

আজ গৌতম দাশের প্রয়াণে সিপিএম পলিটব্যুরো এক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করে জানিয়েছে, কঠিন সময়ে তাঁর প্রয়াণ পার্টির অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। গৌতম দাশ ২৬ আগস্ট ১৯৫১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (অধুনা বাংলাদেশ) চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আগরতলার নেতাজি স্কুলে শিক্ষা শেষ করে সত্তরের দশকে তিনি স্নাতক স্তরে পড়ার জন্য এমবিবি কলেজে ভরতি হন। কলেজস্তরে পড়াশোনার সময়ই তিনি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ছাত্র ফেডারেশনের সাংগঠনিক কাজের পাশাপাশি পার্টির মুখপত্র ‘সাপ্তাহিক দেশের কথা’র সংবাদ বিভাগের সঙ্গে যুক্ত হন। ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত থাকার সময়ই ১৯৬৮ সালে তিনি পার্টির সভ্যপদ গ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালের ১৫ আগস্ট পার্টির দৈনিক মুখপত্র ‘ডেইলি দেশের কথা’ প্রকাশনার শুরুর দিন থেকে তিনি এই পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বভার নেন। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ২০১৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করে গেছেন। গৌতম দাশ ১৯৮৬ সালে পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য এবং ১৯৯৪ সালে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলির সদস্য হন। ২০১৮ সালে পার্টির ২২-তম সম্মেলনে তিনি পার্টির রাজ্য সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ২০১৫ সালে ২১-তম পার্টি কংগ্রেসে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন গৌতম দাশ।

আজ সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলির সভায় গৌতম দাশের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে সারা রাজ্যে পার্টির সমস্ত দফতরে আজ থেকে তিনদিন প্রয়াত গৌতম দাশের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং এই তিন দিন পার্টির সমস্ত কর্মসূচি স্থগিত রাখা হবে। আজ বিকেলে তাঁর মরদেহ কলকাতা থেকে আগরতলায় আসার পর সিপিএম-এর পশ্চিম জেলা কার্যালয়ে মরদেহ রাখা হবে। আগামীকাল দুপুর ১২টায় শোক মিছিল করে তাঁর মরদেহ বটতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্যের জন্য নেওয়া হবে। হিন্দুস্থান সমাচার\সন্দীপ