নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৮ জুন৷৷ পাহাড় নিয়ে আপাতত খুব একটা চিন্তিত নয় সিপিএম রাজ্য কমিটি৷ সমতলে বিজেপি

এবং তৃণমূল কংগ্রেসের বাড়বাড়ন্তকেই গুরুত্ব দিতে চাইছেন দলীয় কর্তারা৷ ফলে, কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নামে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গুচ্ছ প্রচারাভিযানে নামছে সিপিআইএম রাজ্য কমিটি৷ মঙ্গলবার দলের দুদিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর জানিয়েছেন, আগামী ১১-১৭ জুলাই গোটা রাজ্যে বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারাভিযান চালানো হবে৷ শুধু তাই নয়, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস ইস্যুতে আগামী ১-৭ আগস্ট রাজ্যে সভা সংগঠিত করা হবে৷ তাতে, পশ্চিমবঙ্গের বামনেতৃত্বদেরও ঐ সভাগুলিতে বক্তব্য রাখার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে৷
এদিন তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, রাজ্য কমিটির বৈঠকে আইপিএফটি নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়নি৷ তাঁর বক্তব্য, সম্প্রতি অবরোধ আন্দোলনের নামে রাজ্য ভাগের দাবিকে কেউই সমর্থন করেনি৷ এই দাবি সমর্থনযোগ্য নয় বলেই তারা অবরোধ আন্দোলনে লক্ষাধিক মানুষ জড়ো করতে পারবে বলে দাবি করলেও ৫-৭ হাজার লোকের বেশি মানুষ টানতে পারেনি আইপিএফটি৷ কিন্তু বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস এখন সিপিএমের মূল চিন্তার বিষয় তা এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে বিজনবাবুর বক্তব্যে অনেকটাই স্পষ্ট৷ কংগ্রেস সম্পর্কে খুব একটা চিন্তা ব্যক্ত না করলেও, পশ্চিমবঙ্গে বাম ও গণতান্ত্রিক লাইন থেকে বঙ্গের নেতৃত্বদের বিচ্যুতি ঘটেছিল বলে তিনিও মেনে নিয়েছেন৷ সম্প্রতি কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম-কংগ্রেস জোট ইস্যুতে সায় দেননি ইয়েচুরিরা৷ বরং নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য বঙ্গ নেতৃত্বদের পরামর্শ দিয়েছে৷ এদিন, বিজনবাবুও কংগ্রেসের সাথে জোট গঠনের প্রশ্ণে সরাসরি দলের পার্টি লাইনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন৷
ফলে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজ্যে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করেই ময়দানে নামতে চলেছে সিপিএম রাজ্য কমিটি৷ এদিন বিজনবাবু বলেন, বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের দৌলতে দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, শিল্প বন্ধ হচ্ছে, বেকারত্ব বাড়ছে৷ এর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারাভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল৷ গোটা রাজ্যে ভিলেজ কমিটি, নগর পঞ্চায়েত এবং নগর এলাকাগুলির সমস্ত জায়গায় পদযাত্রা করা হবে৷ ১১ জুলাই থেকে শুরু করে ১৭ জুলাই পর্যন্ত গোটা রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দাবিতে এই পদযাত্রা সংগঠিত করা হবে৷ তাতে গুচ্ছ দাবি রেখেছে সিপিএম৷ দ্রব্য মূল্য কমাতে হবে, ভর্তুকি বাড়াতে হবে, বেকারদের জন্য প্রতিবছর দুকোটি চাকুরি যা বিজেপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল তা পূরণ করতে হবে৷ এর সাথে এরাজ্যের লাইফ লাইন আসাম-আগরতলা জাতীয় সড়কের বেহাল দশা পুনরুদ্ধারে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হবে৷ আগরতলা বিমান বন্দরকে অতি সত্বর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করা, কৈলাসহরে বিমানবন্দর চালু করা সহ রাজ্যের জঘন্য টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে দাবিতেই পদযাত্রা সংগঠিত করা হবে বলে বিজনবাবু জানিয়েছেন৷
এদিন রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের গজিয়ে উঠা সিপিএম পার্টিকে চিন্তায় ফেলেছে তা অনেকটাই বিজনবাবুর বক্তব্যে ফুটে উঠেছে৷ আধা ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে তৃণমূলকে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাসে সিপিএমের বহু কর্মী সমর্থক তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে আক্রান্ত হচ্ছেন৷ রাজ্যেও কংগ্রেস ভেঙ্গে যারা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তারা ত্রিপুরাতেও সন্ত্রাসের পরিবেশ কায়েম করতে পারেন বলে তিনি চিন্তা ব্যক্ত করেছেন৷ এজন্য পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এরাজ্যের বাসিন্দাদের অবগত করার লক্ষ্যে আগামী ১-৭ আগস্ট হলসভা এবং জনসভা সংগঠিত করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন৷ তাতে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরা হবে৷ ঐ সভাগুলিতে পশ্চিমবঙ্গের বাম নেতৃত্বদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে৷