করিমগঞ্জে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন এআইডিএসও এবং মহিলা সংগঠন এআইএমএসএসের

করিমগঞ্জ (অসম), ২১ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে ছাত্র সংগঠন অল ইন্ডিয়া ডিএসও এবং মহিলা সংগঠন অল ইন্ডিয়া এমএসএস-এর করিমগঞ্জ জেলা কমিটি।

এদিন সকাল ৯-টায় সংগঠনের জেলা কার্যালয় প্রাঙ্গণে অস্থায়ী শহিদ বেদীতে মাল্যার্পণ, পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। প্রথমে মহিলা সংগঠনের জেলা সম্পাদিকা পিকলু দাস দে এবং ছাত্র সংগঠনের জেলা কমিটির অন্যতম সদস্য তথা শহর কমিটির সম্পাদক জয়দীপ দাস সহ সংগঠনের অন্যান্য কর্মী সংগঠকরা মাল্যার্পণ ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।

উপস্থিত ছাত্রছাত্রী এবং কর্মীদের সামনে বক্তব্য পেশ করেন মহিলা সংগঠনের জেলা সম্পাদিকা পিকলু দাস দে। তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে ভারত বর্ষ থেকে বিভক্ত হয়ে যাওয়া পাকিস্তানের মধ্যে পূর্বপাকিস্তান বলে পরিচিত ছিল আজকের বাংলাদেশ। পাকিস্তানের প্রধান জনগোষ্ঠী উর্দু ভাষাভাষী হলেও পূর্ব-পাকিস্তানের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। কিন্তু পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী জোর করে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের উপর উর্দু ভাষা চাপিয়ে দিতে চায়। তাই স্বাভাবিকভাবে জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ আন্দোলনে ফেটে পড়েন।
দেশভাগের পর থেকেই পাকিস্থানে বাংলা ভাষার উপর জোরজুলুম তীব্রতর হতে থাকে এবং তার প্রতিবাদে দুর্বার হয় ভাষা আন্দোলনও। ১৯৫২ সালে এই আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে। ওই বছরেই ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের ওপর পুলিশের নির্মম গুলিবর্ষণে কয়েকটি তাজা প্রাণ অকালে ঝরে যায়। তাঁদের মধ্যে অন্যতম রফিক, জব্বার, সালাম, শফিউল, বরকত সহ অনেকে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকারিভাবে এই দিনটাকে শহিদ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই মহান দিনকে স্মরণ করে ২০১০ সালে রাষ্ট্রসংঘ এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেই থেকে সারা বিশ্বে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। বিশ্বের যেখানেই ভাষার উপর আগ্রাসন হয় সেখানেই গণতান্ত্রিক ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকল স্তরের মানুষ একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে যথার্থভাবে পালনের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন আগ্রাসনের নগ্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার অঙ্গীকার গ্রহণ করে।
এই দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতেই অসমের বরাক উপত্যকায় রক্ত ঝরানো দুটি পবিত্র দিন উনিশে মে এবং একুশে জুলাই যথাযোগ্য মর্যাদা সহকারে ভাষা শহুদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

এদিকে ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র জয়দীপ দাস বলেন, অসম সরকার অবিরত উগ্র প্রাদেশিকতাবাদি শক্তির মদতে কোনও সময় প্রত্যক্ষভাবে আবার কোনও সময় সুকৌশলে এবং সুচতুরভাবে ভাষা আইন অমান্য করে বরাক উপত্যকায় অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে দিচ্ছে অথবা চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। এভাবে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের ভাষার প্রশ্নে মৌলিক অধিকার হরণ করার গভীর চক্রান্ত চলছে। তাই এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া কোনও বিকল্প রাস্তা আমাদের সামনে আর খোলা নেই।
শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে মাল্যদান করেন এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) দলের করিমগঞ্জ জেলা কমিটির প্রবীণ সদস্য কমরেড পরিমল চক্রবর্তী।