দুর্গাপুর, ১১ ফেব্রুয়ারি (হি. স.) : ক্ষতিপুরণ না দিয়ে কাজ করার অভিযোগ। পাইপ লাইন বসানোর ক্ষতিপুরণে বৈষম্য। আর তাতেই কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলে গ্যাস পাইপ লাইন বসানোর কাজ বাধা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করল চাষীরা। শনিবার ঘটনাকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল বুদবুদের মানকর গ্রামে। এদিন প্রায় ৫০ জন চাষী পাইপ বসানোর কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। অভিযোগ উঠেছে, জমির ক্ষতিপুরণ বন্টনের বৈষম্য ও অনিয়মে।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রালয় সুত্রে জানা গেছে, প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপ লাইন গ্রীড তৈরীর কাজটি করছে গেইল। জগদীশপুর থেকে হলদিয়া পর্যন্ত ২৬৫০ কিলোমিটার পাইপ লাইন পাতার প্রথম পর্যায়ে অনুমোদন হয় ১২ হাজার কোটি টাকা। তাতে উত্তরপ্রদেশের কিছুটা অংশ, বিহার, ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ওড়িষ্যা পর্যন্ত পাইপলাইন বসবে। পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগে উত্তর-পুর্ব ভারতের সমস্ত রাজ্যে গ্যাস পাইপ লাইনের গ্রীড বসানোর কাজ। এবং তাতে ৭০০ কিলোমিটারের বেশী পাইপলাইন পাতার জন্য আরও ৩৩১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। ইতিমধ্যে দুর্গাপুর, পানাগড় পর্যন্ত গ্যাসের পাইপলাইন বসেছে। ২০২১ সালে ৭ ফেব্রুয়ারী হলদিয়া থেকে ভার্চুয়ালে উর্জা গঙ্গা প্রজেক্টের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মুলত, দেশের ৫ টি সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা। যার মধ্যে ১ বেসরকারী পানাগড়ে ম্যাট্রিক্স। বাকি দুর্গাপুরে হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজার, বিহারের বারাউনি, ঝাড়খন্ডের সিন্দরী, উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুর। এছাড়াও গ্যাস গ্রিড থেকে বিভিন্ন শিল্পকারখানা জ্বালানীর জন্য গ্যাস সংযোগ নিতে পারবে। তাছাড়াও গ্যাস চালিত যানবাহনের সুবিধার জন্য বিভিন্ন শহরে বসবে ফিলিং স্টেশন। এবং পরবর্তীকালে স্মার্ট সিটিগুলিতে নলবাহিত গ্যাস পৌঁছাবে গৃহস্থের রান্নাঘর। কিন্তু, গেইলের পাইপ লাইন পাতার কাজে জমির ক্ষতিপুরন বন্টনের ধরনে অসন্তুষ্ট ও বিরক্ত চাষীরা। দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছে চাষীরা।
শনিবার বুদবুদের মানকর রাইপুর মৌজায় পাইপলাইন পাতার কাজের উদ্যোগ নেয়। খবর পেয়ে বঞ্চিত চাষীরা সেখানে জমায়েত করে কাজ আটকে দেয়। সংস্থার গাড়ীর সামনে বসে বিক্ষোভ শুরু করে চাষীরা। অঙ্কন দত্ত, ভুতো ঘোষ, মিহির মিস্ত্রি, প্রবীর ঘোষ, বলরাম মজুমদার প্রমুখ চাষীদের অভিযোগ,” বছরখানেক আগে গেইল বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। সেই মত জমির ক্ষতিপুরনের দামে আপত্তি জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়। পানাগড় শিল্পতালুক লাগোয়া রাস্তার পাশে জমি। সেখানে বসতবাড়ী, দোকান ব্যাবসা করা যাবে। তাই ওই জমির ভালো বাজার মূল্য রয়েছে। অথচ গেইল নামমাত্র দাম দিতে চাইছে। তাতেই আপত্তি।”
চাষীরা জানান,” জাতীয় স্বার্থে জমি দিতে রাজি। পাইপ লাইন বসানোর পর ওইজমিতে কোনরকম নির্মান করা যাবে না। একপ্রকার অকেজ হয়ে যাবে। তাই নাহ্য বাজার দরে জমির ক্ষতিপুরন দিতে হবে। তার আবেদন বহুবার জানিয়েছি। কিন্তু কোনরকম তাতে গুরুত্ব না দিয়ে হুমকি দিয়ে জোরপুর্বক কাজ করার চেষ্টা করছে। কোনরকম জমির নাহ্য দাম না দিয়ে কাজ করতে আসায় বাধা দিয়েছি। জমির বাজার মূল্যে ক্ষতিপুরন চাইছি। ক্ষতিপুরন না দেওয়া পর্যন্ত কাজ করতে দেবো না।” বছর দুয়েক আগে কাঁকসা ও আউশগ্রাম ব্লক এলাকায় একইরকমভাবে পাইপ বসানোর কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল চাষীরা। জমির ক্ষতিপুরনে দ্বিচারিতার অভিযোগ উঠেছিল। পাশাপাশি মৌজা, অথচ জমির দাম দু-রকম দেওয়ায় আউশগ্রাম ব্লকের গোবিন্দপুর গ্রামের চাষীরা পাইপ বসানের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। বছরখানেক আগে মানকর মৌজায় ক্ষতিপুরনে বৈষম্য থাকায় এখনও কাজে বাধা দিয়েছিল চাষীরা। একইরকম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল, গলসী-১ নং ব্লকের নুরকোনা এলাকায়। এছাড়াও কয়েকদিন আগে জমির মালিককে বিনা নোটিশে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধন করা একটি কারখানায় হাইটেশন বিদ্যুৎ পরিবহনের কাজ শুরুর অভিযোগ ওঠে। তার প্রতিবাদে পানাগড় শিল্পতালুকের শিল্পনিগমের অফিসের গেটে বিক্ষোভ দেখায় চাষীরা। তারপর এদিনের ঘটনায় রাজ্যে জমি অধিগ্রহনের পদ্ধতিতে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে। একইরকমভাবে প্রশ্ন উঠেছে, গেইলের জমি অধিগ্রহনের পদ্ধতি ও ক্ষতিপুরণ বন্টনে। জমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী জাতীয় স্বার্থে জমি অধিগ্রহণ করতে পারে। তবে আইনকে মানত্যা দিয়ে অধিগ্রহন করতে হবে।
প্রশ্ন, ক্ষতিপুরণ না মিটিয়ে কিভাবে পাইপ বসানোর কাজ করতে চাইছে ওই সংস্থা? যদিও এদিন ক্ষোভের মুখে পড়া গেইল কর্তৃপক্ষের আধিকারিকরা কোন মন্তব্য করতে চায়নি। তবে গলসী-১ বিডিও দেবলিনা দাস জানান,” জমির দামে আপত্তি রয়েছে চাষীদের। চাষীদের সঙ্গে আলোচনা করে মিটিয়ে নেওয়া হবে।”