ঢাকা, ২২ অক্টোবর (হি.স.) : বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব বাংলাদেশের রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সমস্ত শাখা । সারাদেশে মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাংচুর, অগ্নি সংযোগ ও হিন্দুদের উপর সহিংসতার প্রতিবাদে শুক্রবার রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন পক্ষ থেকেও মানববন্ধনের আয়োজন করা হয় । মানববন্ধন শেষে ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ মহারাজ বলেন, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার কারণেই দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন হচ্ছে। সরকারের কঠোর মনোভাব এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করা হলে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর হবে না ।
এদিন স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ বলেন, যারা এ ধরনের হামলা ও নির্যাতন নিপীড়ন চালায়, তারা অসহিষ্ণু। তারা মনে করছে পৃথিবীতে একটিই ধর্ম থাকবে, অন্য কোনও ধর্ম থাকবে না। এই অসহিষ্ণুতার কারণেই সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেই চলছে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর যে নির্দেশে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল এবং তিনি বাংলাদেশের জন্য যে সংবিধান রচনা করেছেন সেখানে ধর্ম সহিষ্ণুতা ও ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা ছিল। বাস্তবে তা নেই, আমাদের মূলে হাত দিতে হবে।
হামলার ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপে হামলাগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে এটি পূর্ব পরিকল্পিত। হামলা হতে পারে এমন খবর পাওয়ার পর হাজীগঞ্জের রামকৃষ্ণ সেবা আশ্রমের পক্ষ থেকে পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয় এবং তাদের সহযোগিতা চাওয়া হয়। বিষয়টি দেখবেন বলেও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন কোন উদ্যোগ নেয়নি। আশ্রম ও থানার দূরত্ব খুব বেশি না হলেও এক ঘণ্টা ধরে আশ্রমে নির্বিচারে হামলা, ভাঙচুর ও অত্যাচার চালান হলেও প্রশাসনের কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। এটি দুঃখজনক।
তিনি বলেন, সরকার যদি কঠোর মনোভাব এবং অবস্থান নিতে পারত তাহলে এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়ানো যেত এবং অঙ্কুরেই বিনাশ করা যেত। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কঠোর বার্তা দেওয়ার পরও অব্যাহতভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলেছে। আমরা এক্ষেত্রে সরকারের কঠোর উদ্যোগ দেখতে চাই। কঠোর শাস্তি বলতে কঠোরতম শাস্তির কথাই আমরা বলছি। আমরা বলতে চাই, যা হয়ে গেছে আর যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।
এর আগে বেলা ১১টায় গোপীবাগে রামকৃষ্ণ মিশনের সামনের রাস্তায় কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালি, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ-প্রতিমা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বাড়িঘরে হামলা-লুটপাটের ঘটনার প্রতিবাদে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের যে শাখা রয়েছে সেখানেও একই সময়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ সময় মঠের অন্যান্য সন্ন্যাসী, বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), সারদা সংঘসহ সমমনা বিভিন্ন সংগঠন এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে নিজ নিজ ব্যানারে অংশ নেয়।