নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/ খোয়াই/ গন্ডাছড়া, ৩০ জুলাই৷৷ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে লকডাউনের মধ্যে বাজারহাট জমজমাট ছিল৷ বহু বাজারে সিংহভাগ দোকানপাট খোলা ছিল৷ রাজধানী আগরতলা শহরের বড় বাজারগুলিতে লোক সমাগম লক্ষ্য করা গিয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি৷ যদিও মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এক তৃতিয়াংশ দোকানপাট খোলা রাখা হবে৷ কিন্তু, বাজারগুলিতে দেখা গিয়েছে সিংহভাগ দোকান খোলা৷ তাতে করে যে লক্ষে লকডাউন তার উদ্দেশ্য কতটা সফল হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে৷
যাত্রীবাহী টমটম, অটো, রিক্সা এবং দ্বি-চাকার যান চলাচল করতে দেখা যায়৷ মহারাজগঞ্জ বাজার তিন ভাগের একবার দোকান খোলা থাকার নির্দেশ থাকলেও বাজারে মাছ, মাংস, সবজি, গ্রোসারি সমস্ত পাইকারি এবং খুচরা দোকান খোলা ছিল৷ লকডাউনে দোকান খোলা রাখার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসা করলে কোন কোন ব্যবসায়ী জানান লকডাউন যে পুনরায় ঘোষণা হয়েছে সে বিষয়ে অবগত নয়৷
খোয়াই মহকুমায় জনগণ বনাম প্রশাসনের লড়াই বেশ জমে উঠেছে৷ একদিকে প্রশাসনের খাম খেয়ালিপনা অন্যদিকে খোয়াইয়ের সচেতন নাগরিক এবং ব্যবসায়ী মহল৷ এমতাবস্থায় দিশেহারা জনসাধারণ আজ প্রায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করেন৷ আর বিত্তশালী মানুষ তামশা দেখছেন৷ ঘটনার সূত্রপাত খোয়াই সুভাষপার্ক বাজারে৷ এই করোনা মহামারীর মধ্যে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের উদাসীনতায় স্থানীয় বাজার ব্যবসায়ী সমিতি উদ্যোগ নিয়ে তিনদিন সুভাষপার্ক বাজার বন্ধ রেখেছিলেন৷ কিন্তু টানা তিনদিন বাজার বন্ধ থাকার পর পুনরায় প্রশাসন তিনদিন বন্ধের ডাক দেয়৷ তাও খোয়াইয়ের সচেতন জনগণ মেনে নেন৷ কিন্তু আজ যখন প্রশাসন লকডাউনের ঘোষনা দেয় তখনই জনগণ ক্ষেপে যায়৷
সমগ্র জেলায় জনগণ থেকে ব্যবসায়ী সবাই বাজার-হাঁট, টমটম-অটো সহ সাধারন ব্যবসায়ীরা দোকান খোলে বসে৷ জনগণকেও দেখা যায় রাস্তায়৷ জনসাধারণের অভিমত হলো, প্রশাসন কেন এক বা দু’’দিন সময় দেয়নি৷ খোয়াইতে যেহেতু আজ ৮দিন যাবত বাজার, হাঁট, ব্যবসা বন্ধ, হঠাৎ করে লকডাউনের ঘোষনা রাতে দেওয়া হল৷ অথচ জনগণ বিশেষ করে কৃষক, কাঁচামাল বিভিন্ন সবজি ক্ষেত থেকে তুলে নেন৷ তাহলে লক্ষ লক্ষ টাকার সবজি নষ্ট হয়ে যাবে৷ এমনিতেই কৃষক ফসলের দাম পাচ্ছে না৷ ধার দেনা করে কৃষককুল পথে বসে যাচ্ছে৷ জলের দরে বিক্রি হচ্ছে সবজি৷ দিন আনি দিন খাই অবস্থার মধ্যে বন্ধন ব্যাঙ্ক লোন, মহাজনী ধার নিয়ে কৃষক থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং আম জনতা দিশেহারা৷ জনগণ বলছেন ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন খোয়াইয়ের ৮০ ব্যবসায়ী৷ এরমধ্যে প্রশাসনের এই পরিকল্পনাবিহীন লকডাউনে দিন আনি দিন খাই অবস্থায় থাকা মানুষগুলোর এখন রুদ্ধশ্বাস৷ করুন অবস্থা৷ আজ খেয়ে বেঁচে থাকার লড়াইটাই বড়ো৷ জনগণের প্রশাসনের কাছে আবেদন, পরিকল্পিতভাবে লকডাউন দেওয়া হউক৷ তা না হলে ক্ষুধা আর ঋণের যন্ত্রণায় মারা যাবে অনেক৷ পরিণাম করুনার প্রভাব থেকেও ভয়ানক হবে বলে অভিমত জনসাধারণের৷
লক ডাউনকে অপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার গন্ডাছড়া বাজারে প্রচুর লোকের সমাগম৷ প্রশাসনের ভূমিকায় সচেতন নাগরিক মহলে ক্ষোভ৷ জানা যায় প্রথম দপায় তিন দিনের লক ডাউন শেষে ৩০ জুলাই বৃহস্পতিবার থেকে দ্বিতীয় দপার পাচঁ দিনের লক ডাউন শুরু হয়েছে৷ এই সময় জরুরি পরিষেবা গুলো ছাড়া রাস্তায় কোন ধরনের যানবাহন চলাফেরা করতে পারবে না৷ কিন্তু দেখা যায় এদিন মহকুমার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে গাড়ি বোঝাই করে এই সব এলাকার গিরিবাসীরা তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারে নিয়ে আসে আবার কেউবা হাট বাজার করতে বাজারে ছুটে আসে৷ বৃহস্পতিবার ছিল গন্ডাছড়া বাজারের সাপ্তাহিক হাটবার৷ স্বাভাবিক ভাবেই হাটবার দিন বাজারে ভিড় লক্ষ্য করা যায়৷ এদিন আগে থেকেই যদি প্রশাসন ব্যবসা গ্রহন করত তাহলে হয়তোবা বাজারে ভিড় এড়ানো সম্ভব হত৷ তবে এদিন গন্ডাছড়া বাজার ব্যবসায়ীরা দোকান পাট বন্ধ রাখে৷ বাজার ব্যবসায়ীর এক কর্মকর্তা জানান রাজ্য সরকারের নির্দেশ মত প্রথম দপায় তিন দিনের লক ডাউনের সময় এক তৃতীয়াংশ দোকান খোলা ছিল৷ তবে দ্বিতীয় দপার লক ডাউনে এক তৃতীয়াংশ দোকান খোলা নিয়ে কিছু কিছু ব্যবসায়ীদের মধ্যে মত বিরোধ থাকায় এদিন বাজারের সমস্ত দোকান পাট বন্ধ ছিল৷
করোনা ভাইরাসে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে সরকার রাজ্য জুড়ে ফের আরো একবার ৫ দিনের সম্পূর্ণ লক ডাউনের সিদ্ধান্ত নিলেও বৃহস্পতিবার শহরের ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র৷ সর্বত্র ছিল উন্মুক্ত৷ শহরের অলিগলিতে সকাল থেকে বাড়তে থাকে মানুষের আনাগোনা৷ শহরে রাস্তাঘাটে বের হয়ে পরে ছোট মাঝারি যান৷ পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা ছিল সম্পূর্ণ উদাসীন৷ শহরে নাকাগুলিতে ছিলনা কোন পুলিশি ব্যবস্থা৷
রাজ্য সরকার উদ্ভূত করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে রাজ্য জুড়ে ৫ দিনের জন্য ফের সম্পূর্ণ লক ডাউন বৃদ্ধি করা হয়৷ আর এক্ষেত্রে পূর্বের ন্যায় কিছু বিধি নিষেধ বেঁধে দেয় সরকার অর্থাৎ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সামগ্রী যেমন মুদির দোকান, ওষুধের দোকান, শাক সব্জি, দুধ, মাছ , মাংস ইত্যাদির দোকান খোলা থাকবে৷ তবে এই ক্ষেত্রে একটি বাজারের তিন ভাগের এক ভাগ দোকান খোলা রাখা যাবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল৷ আর পূর্বের ন্যায় বাজার কমিটি ঠিক করে দেবে কোন দিন কোন দোকান খোলা থাকবে৷ আর গোটা রাজ্যে অভ্যন্তরে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকারও নির্দেশ রয়েছে৷ জরুরী পরিষেবা লকডাউনের আওতার বাইরের থাকবে৷ এমনকি লকডাউনের দিনগুলিতে বেসরকারি যান বাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শহরে যত্রতত্র ভাবেই শুরু হয় যান চলাচল৷ বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় বের হয়ে পড়ে মানুষ৷
আবার কিছু কিছু ব্যবসায়ী জানান, বাজার কমিটির পুনরায় যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সে মোতাবেক দোকান খোলা রাখা হবে৷ এদিকে শহরের বিনা বাধায় চলাচলকারী অটোচালক এবং টমটম চালকদের লকডাউনে চলাচলের কারণে জিজ্ঞাসা করতে তারা জানায়, লকডাউনে ঘরে বসে থাকলে চলবে না৷ পেটের তাগিদে এবং পরিবার পরিচালনার জন্য ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে তাদের৷ আর এমনকি পুলিশও কোনরকম বাধা দেয় নি রাস্তায় বের হওয়া যান চালকদের৷ এটা সত্যি শহরে এদিন পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা ছিল না বলে চলে৷ পাশাপাশি আশ্চর্য বিষয় হলো বটতলা বাজারে এদিন কাপড় ব্যবসায়ীদের দোকানও খোলা থাকতে দেখা যায়৷ সেই সব কাপড় ব্যবসায়িদের লকডাউনের মধ্যে দোকান খোলার কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়িরা জানান, আগামী ১ আগস্ট ঈদ৷ আর এদিন মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষ নতুন কাপড় পরিধান করে৷ তাই সরকারি নির্দেশ অবজ্ঞা করে দোকান খোলার তাগিদ দেখালেন একাংশ ব্যবসায়িরা৷ অবশেষে দুপুরের নাগাদ মহারাজগঞ্জ বাজারে ত্রিপুরা হোলসেল গ্রোসারি মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় লকডাউন এর দিনগুলোতে সরকারি নির্দেশ মেনে তিন ভাগের এক ভাগ দোকান খোলা রাখা হবে৷তবে এদিন লকডাউনের আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের কোনরকম ধরপাকড় ছিলনা৷ লকডাউন নিয়ে প্রশাসন এবং শহরবাসীর এ ধরনের অসচেতনতা সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে৷