গুয়াহাটি, ২২ জুলাই (হি.স.) : বিভিন্ন নতুন রেলওয়ে লাইন প্রকল্পের কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির রূপান্তরের ক্ষেত্রে ভারতীয় রেলওয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে। রেলমন্ত্রকের রাজধানী সংযুক্তিকরণ প্রকল্পের অধীনে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবগুলি রাজ্যের রাজধানীকে সংযুক্ত করার জন্য নতুন রেলওয়ে লাইনের নির্মাণকাজ চলছে। এ ধরনের একটি প্রকল্প উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামকে দেশের অন্যান্য অংশের সাথে সংযুক্ত করার জন্য ভৈরবী-সাইরাং নতুন রেল লাইন প্রকল্প, যা সম্পূর্ণ হওয়ার শেষ পর্যায়ে।
এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হলে মিজোরামের মানুষের জন্য যোগাযোগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি গেম চেঞ্জার প্রকল্প হবে। সাশ্রয়ী এবং পরিবেশ অনুকূল এই রেলওয়ে পরিষেবাটি রাজ্যের প্রায় সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজে এক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ভৈরবী ও সাইরাঙের মধ্যে ৫১.৩৮ কিমি নতুন রেলওয়ে লাইনটি চারটি সেকশনে বিভক্ত করা হয়েছে, এগুলি যথাক্রমে ভৈরবী-হর্তকি, হর্তকি-কাওনপুই, কাওনপুই-মুয়ালখং এবং মুয়ালখং-সাইরাং। প্রকল্পটির অধীনে কাজের অগ্রগতি ইতিমধ্যে ৯৩ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
এ তথ্য দিয়ে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে জানান, কঠিন ভূখণ্ডে নির্মীয়মাণ ভৈরবী-সাইরাং রেলওয়ে প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে একাধিক টানেল এবং ব্রিজ। এই প্রকল্পে টানেলের মোট দৈর্ঘ্য ১২,৮৫৩ মিটার, যার মধ্যে ইতিমধ্যে ১২,৮০৭ মিটার টানেলের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রকল্পটিতে মোট ৫৫টি মেজর ব্রিজ এবং ৮৯টি মাইনোর ব্রিজ রয়েছে।
এ পর্যন্ত ৪৭টি মেজর ব্রিজ এবং ৮৭টি মাইনোর ব্রিজের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রকল্পটির সবচেয়ে উঁচু পিয়ার অর্থাৎ সাইরাং স্টেশনে প্রবেশের সময় ১৯৬ নম্বর ব্রিজের পিয়ার পি-৪ নির্মাণের কাজও সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। এই পিয়ারের উচ্চতা ১০৪ মিটার, যা কুতুব মিনারের তুলনায় ৪২ মিটার উঁচু। এছাড়া প্রকল্পটিতে পাঁচটি রোড ওভার ব্রিজ এবং ছয়টি রোড আন্ডার ব্রিজ রয়েছে। প্রকল্পের অধীনে রয়েছে চারটি স্টেশন যথাক্রমে হর্তকি, কাওনপুই, মুয়ালখং এবং সাইরাং।
তিনি জানান, এই প্রকল্পটির কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত ও দীর্ঘকালীন বর্ষার জন্য খুব কম কাজের সময়, জঙ্গলের মধ্য দিয়ে খুব কঠিন ও পাহাড়ি ভূখণ্ড, নিম্নমানের প্রবেশযোগ্যতা, মিজোরামে নির্মাণ উপকরণ ও দক্ষ শ্রমিকের অভাবের মতো একাধিক প্রত্যাহ্বান সত্ত্বেও উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে এই প্রকল্পটি দ্রুত চালু করার প্রতিশ্রুতি পূরণে সমস্ত প্রচেষ্টা করেছে।
নতুন এই রেল প্রকল্পটি মিজোরামের জনগণকে উন্নত সংযোগ ব্যবস্থা প্রদান করার পাশাপাশি অঞ্চলটিতে ক্ষুদ্র মাপের শিল্প বিকাশে সাহায্য করবে এবং রাজ্যের পর্যটন শিল্পকেও উৎসাহিত করবে।
প্রকল্পটি স্থানীয় জনগণের প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য পাহাড়ি রাজ্যটিতে যাত্রী ও বিভিন্ন উপকরণ তথা সামগ্রী পরিবহণের ক্ষেত্রে ব্যয়ের হার যথেষ্ট হ্রাস করাটা নিশ্চিত করবে। মিজোরামের রাজধানী এবং অসমের নিকটবর্তী স্থানগুলির মধ্যে ভ্রমণের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস হবে।
এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ দেশের দূরদূরান্তে যাওয়ার সুবিধা লাভ করবেন এবং অত্যাবশ্যক সামগ্রীর বাধাহীন সরবরাহ লাভ করবেন, বলেন উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে।