বিশ্ব সন্ত্রাসের কেন্দ্র পাকিস্তান, পহেলগামে হামলাই ছিল প্রকৃত উসকানি: বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রীর কড়া বার্তা

নয়াদিল্লি, ৮ মে : “পাকিস্তান এখন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্র বলেই পরিচিত এবং এই সুনাম তারা পেয়েছে একাধিক জঙ্গি হামলার মাধ্যমে”—আজ সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই জানালেন ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী।

তিনি সুর চড়িয়ে বলেন, “পহেলগামে ২৬ জন নিরীহ নাগরিকের মৃত্যু ঘটানো হামলাই ছিল প্রকৃত প্রথম উসকানি। পাকিস্তানের সাম্প্রতিক কার্যকলাপও সেই উসকানিরই ধারাবাহিকতা। ভারত যথাযথভাবে তার জবাব দিচ্ছে এবং আরও দেবে।”

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পহেলগামে হামলার আলোচনার সময় পাকিস্তানের ভূমিকার সমালোচনা করে মিস্রী বলেন, “যখন দ্য রেসিস্টেন্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) ওই হামলার দায়দায়িত্ব দু’বার স্বীকার করে, তখনও পাকিস্তান টিআরএফ-এর নাম বিবৃতিতে অন্তর্ভুক্ত করতে আপত্তি তোলে। এটি প্রমাণ করে তারা জঙ্গিদের আড়াল করতে চায়।”

তিনি আরও বলেন, “যে দেশে ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দেওয়া হয়, সেখানে সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটি গড়ে ওঠা আশ্চর্য নয়। পাকিস্তান এখনও লস্কর-ই-তইবা ও জইশ-ই-মহম্মদের মতো রাষ্ট্রসংঘ-স্বীকৃত জঙ্গিগোষ্ঠীর আশ্রয়স্থল।” বিদেশসচিব জানান, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ও প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রীরা সম্প্রতি নিজেই স্বীকার করেছেন যে তাঁরা এসব জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। মিস্রী এদিন ‘অপারেশন সিন্দুর’-এ নিহত জঙ্গিদের পাক রাষ্ট্রীয় সম্মানে শেষকৃত্যের ছবিও দেখান।

বিদেশসচিব উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, গতকাল পাকিস্তান ইচ্ছাকৃতভাবে জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চ অঞ্চলে একটি গুরুদ্বারায় হামলা চালায় এবং শিখ সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে হামলা করে। এতে শিখদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

সাংবাদিক বৈঠকে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং জানান, পাকিস্তান ড্রোন ও মিসাইলের মাধ্যমে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের একাধিক সামরিক স্থানে হামলার চেষ্টা করে। এসবের মধ্যে ছিল: আওন্তিপুরা, শ্রীনগর, জম্মু, পাঠানকোট, অমৃতসর, কপুরথলা, জলন্ধর, লুধিয়ানা, অধমপুর, ভাটিণ্ডা, চণ্ডীগড়, ফালাউদি, উত্তরলাই এবং ভূজ। তারা জানান, ভারতীয় ইন্টিগ্রেটেড কাউন্টার-ইউএএস এবং অন্যান্য আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে এসব আক্রমণ ব্যর্থ করে দেওয়া হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর কুপওয়ারা, বারামুলা, উরি, পুঞ্চ, মেন্ধর ও রাজৌরি সেক্টরে মর্টার ও ভারী কামানের সাহায্যে একতরফা গোলাবর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজন নারী ও পাঁচজন শিশু রয়েছে। ভারত বাধ্য হয়েই প্রতিরোধমূলক পাল্টা হামলা চালিয়েছে বলে জানান দুই সামরিক আধিকারিক। তবে তাঁরা বলেন, “ভারত কোনওরকম উত্তেজনা বাড়াতে চায় না, যদি পাকিস্তান সেনা তা সম্মান করে।” এই পরিস্থিতিতে, ভারতের পক্ষ থেকে সাফ জানানো হয়েছে—আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে জঙ্গিবাদে মদত বন্ধ করতে হবে।

এর আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বৃহস্পতিবার কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, যারা ভারতের ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে চাইছে, তাদের ‘গুণগত প্রতিক্রিয়া’র জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি সদ্য সম্পন্ন হওয়া ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর দিকেই ইঙ্গিত করেন। রাজনাথ সিং বলেন, “ভারত শান্তি চায়, কিন্তু যদি কেউ আগ্রাসন দেখায় বা দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে তাদের বুঝতে হবে যে আমরা শুধু প্রতিক্রিয়া জানাব না, সেই প্রতিক্রিয়া হবে যথার্থ এবং কার্যকর।” এই মন্তব্য আসে এমন এক সময়ে যখন ভারতের তরফে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামোর বিরুদ্ধে বড়সড় সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে। অপারেশন সিন্দুর-এর মাধ্যমে অন্তত ১০০ জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর এই বক্তব্যে ভারতের কড়া অবস্থান স্পষ্ট, যা ভবিষ্যতে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আরও জোরদার পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এইদিনই, বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ইরানের বিদেশমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। জয়শঙ্কর জানান, ভারত পরিস্থিতি আরও জটিল করতে চায় না, কিন্তু যদি কোনও সামরিক আগ্রাসন ঘটে, ভারত তাতে কড়া জবাব দেবে। ভারতের কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা স্তরে একযোগে হওয়া এই পদক্ষেপে, আন্তর্জাতিক মহলেও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *