Conditional permission : রবীন্দ্রভবন চত্বরেই মিলল শর্তাধীন অনুমতি, পাঁচশ’র বেশী জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ অক্টোবর৷৷ তৃণমূলের জমায়তেকে ঘিরে রাজ্য এক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী রইল৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমায়েতের স্থান বদলের পুলিশি নির্দেশের প্রতিবাদ আদালত পর্যন্ত গড়াল৷ আদালত দীর্ঘ সওয়াল জওয়াব শেষে তৃণমূল কংগ্রেসকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা পূর্ব নির্ধারিত স্থান রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন প্রাঙ্গনেই আয়োজনের শর্তাধীন অনুমতি দিয়েছে৷ সর্বোচ্চ পাঁচশ লোকের জমায়েতে আদালতের অনুমতি মিলেছে৷ সাথে আরও কিছু শর্ত আদালত জুড়ে দিয়েছে৷ তবে, আজ শনিবার রাত বারোটার মধ্যে সমস্ত শর্ত মেনে পশ্চিম আগরতলা থানায় তৃণমূল কংগ্রেসকে মুচলেকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ সময়ের মধ্যে মুচলেকা দিতে ব্যর্থ হলে পুলিশকে জমায়েতের স্থান বদলের আদেশ কার্যকরে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে৷
প্রসঙ্গত, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভাস্থল বদল করবে না তৃণমূল৷ রবীন্দ্র ভবন প্রাঙ্গণে রাস্তায় অসমাপ্ত মঞ্চে দাঁড়িয়েই তিনি ত্রিপুরাবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন৷ আজ শনিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূলের এই দৃঢ় অবস্থানের ঘোষণা করেছিলেন দলের রাজ্য স্টিয়ারিং কমিটির কনভেনর সুবল ভৌমিক৷ অন্যদিকে এ-বিষয়ে বিজেপির প্রদেশ মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্য প্রশ্ণ তুলেছেন, স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে জনসভায় তৃণমূল আপত্তি করছে কেন, বুঝতে পারছি না৷ এতে মনে হচ্ছে, তাঁরা প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে বিশৃঙ্খলা সংগঠিত করতে চাইছে, বিষোদগার নবেন্দুর৷
জনসমাগমে করোনার সংক্রমণ ছড়াবে৷ তাই জন-নিরাপত্তার প্রশ্ণে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগামীকালের জনসভার স্থান পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছিল ত্রিপুরা পুলিশ৷ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন প্রাঙ্গণের বদলে বিবেকানন্দ ময়দানে প্রস্তাবিত জনসভার অনুমতি দিয়েছিল পুলিশ৷ এতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা জনসভার জন্য নির্মীয়মাণ মঞ্চের সামনে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন৷


প্রসঙ্গত, ৩১ অক্টোবর আগরতলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জনসভা করবেন বলে তৃণমূল সূচি নির্ধারিত করেছে৷ সে মোতাবেক প্রস্তুতিও চলছে জোর কদমে৷ তৃণমূলের দাবি, রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন প্রাঙ্গণে জনসভার জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল৷ এ-বিষয়ে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, সমস্ত নিয়ম মেনে জনসভার জন্য পুলিশের অনুমতি নেওয়া হয়েছে৷ সে মোতাবেক মঞ্চ তৈরির কাজও চলছে৷ অথচ এখন পুলিশ এসে মঞ্চ তৈরির কাজে বাধা দিচ্ছে৷ বিবেকানন্দ ময়দানে জনসভা করার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ৷ তাঁর দাবি, তৃণমূলের জনসভাকে বানচাল করার জন্যই এই জঘন্য পথ বেছে নিয়েছে বিজেপি, অভিযোগ করে বলেন তিনি৷
এদিকে, সদরের এসডিপিও রমেশ যাদব বলেন, তৃণমূলের জনসভা বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়নি৷ শুধু স্থান পরিবর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ তাঁর দাবি, রবীন্দ্র ভবন প্রাঙ্গণে তৃণমূলের জনসভার জন্য চার দিন আগে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু ওই জনসভায় জনসমাগমের অনুমান থেকে করোনার সংক্রমণ ছড়ানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে৷ তিনি বলেন, মূল শহরে প্রচুর মানুষের জমায়েত করোনা পরিস্থিতিতে কোনও ভাবেই অনুমতি দেওয়া যায় না৷ তাই, তাঁদের স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে জনসভার আয়োজন করার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷
তাঁর দাবি, দু-দিন আগে এ-বিষয়ে চিঠি দিয়ে তাঁদের জবাব চেয়েছিল পুলিশ৷ কিন্তু তাঁরা জবাব দিতে এক দিন সময় নিয়েছে৷ তাছাড়া, গতকাল টেলিফোনে এবং আজ সকালে আমি নিজে এসে মঞ্চ তৈরির কাজ বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি৷ কিন্তু নির্দেশ অমান্য করে মঞ্চ তৈরি করছিলের তাঁরা৷ তাই পুলিশ ওই কাজ বন্ধ করতে হস্তক্ষেপ করেছে৷


এদিকে স্থান পরিবর্তনের আদেশে তৃণমূল কংগ্রেস প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছে৷ তাঁরা নির্মীয়মাণ মঞ্চের সামনে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন৷ সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ সুস্মিতা দেব, ত্রিপুরায় তৃণমূলের স্টিয়ারিং কমিটির কনভেনর সুবল ভৌমিক, তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ, আশিসলাল সিংহ সহ আরও অনেকে৷
সন্ধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ আলোচনাক্রমে সিদ্ধান্ত নেন রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন প্রাঙ্গণেই আগামীকাল অসমাপ্ত মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন৷ তৃণমূলের ত্রিপুরা রাজ্য স্টিয়ারিং কমিটির কনভেনর সুবল ভৌমিক বলেন, জনসভার কয়েক ঘণ্টা আগে অনুমতি বাতিলের ঘটনা ভূ-ভারতে নজির স্থাপন করেছে৷ তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পূর্ব-নির্ধারিত স্থানেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জনসভায় অংশ নেবেন৷ তাঁর হুঙ্কার, প্রশাসনের অনৈতিক সিদ্ধান্ত মানছি না৷ সারা রাজ্য থেকে অগণিত মানুষ জড়ো হয়ে জনসভা সফল করার মধ্য দিয়ে বিজেপিকে কড়া জবাব দেবেন৷
এ-বিষয়ে বিজেপির প্রদেশ মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, করোনার সংক্রমণের আশঙ্কায় প্রশাসন তৃণমূলকে স্থান পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছে৷ সে মোতাবেক অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু তাঁরা প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে করোনার সংক্রমণ ছড়াতে চাইছেন৷ তিনি বলেন, প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক৷ তাঁর দাবি, বহিঃরাজ্য থেকে লোক এনে জনসভায় ভিড় দেখানোর উদ্দেশ্য তৃণমূলের সফল হচ্ছে না৷ তাই তাঁরা স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে জনসভায় ভয় পাচ্ছে৷ এজন্যই প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে শহরে বিশৃঙ্খলা ঘটাতে তাঁরা চাইছেন, তীব্র ভাষায় বিষোদগার করেছেন নবেন্দু৷


এদিকে, আজ রাতে তৃণমূল কংগ্রেস জমায়েতের স্থান বদলের পুলিশি নির্দেশের বিরোধীতায় উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে৷ জরুরী ভিত্তিক ওই মামলা বিচারপতি শুভাশিষ তলাপাত্রের বেঞ্চে শুনানী হয়েছে৷ বিচারপতি তলাপাত্র স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে জমায়েতের স্থান বদলে আপত্তির কারণ নিয়ে প্রশ্ণ তুলেন৷ তিনি জানতে চেয়েছেন ছোট্ট শহর আগরতলায় রবীন্দ্র ভবন প্রাঙ্গন থেকে স্বামী বিবেকানন্দ ময়দান পর্যন্ত স্বল্প দূরত্বে জমায়েতের আয়োজনে বিশেষ অসুবিধা হওয়ার কি কারণ রয়েছে৷ আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী শংকর লোধ সওয়াল করে বলেন, রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন প্রাঙ্গনে জমায়েতে সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে৷ রাজ্যে দলের যা পরিস্থিতি তাতে অল্প সময়ের মধ্যে জমায়েত স্থল পরিবর্তন করা সম্ভব নয়৷ কিন্তু, আদালত আবেদনকারীর কৌশলীর বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেননি এবং স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানেই জমায়েত করার পরামর্শ দেন৷ আবেদনকারীর পক্ষে অপর আইনজীবী সঞ্জয় বসু আদালতে আবেদন জানান, যেকোন শর্ত মেনে রবীন্দ্রভবন প্রাঙ্গনেই জমায়েত করতে প্রস্তুত তৃণমূল৷ কারণ, এত অল্প সময়ের মধ্যে জমায়েত স্থল পরিবর্তন হলে তার আয়োজন করা সম্ভব হবে না৷ এই নিয়ে আদালতে দীর্ঘ সময় সওয়াল হয়েছে৷ এডভোকেট জেনারেল সিদ্ধার্থ শংকর দে আদালতে সওয়াল করেন জেড প্লাস নিরাপত্তা নিয়ে রবীন্দ্র ভবন প্রাঙ্গনে জমায়েত নিরাপত্তার প্রশ্ণে ঝুকিপূর্ণ৷ তাছাড়া কোভিড বিধি মেনে সমস্ত নিরাপত্তা প্রদান খুবই সমস্যাদীর্ন৷ তাই পুলিশ সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে জমায়েত স্থল পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছে৷ কিন্তু, আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী তাতে প্রশ্ণ তুলেন, অনুমতি চাওয়ার সময়েই জেড প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে৷ কোন কিছু গোপন না রেখে পুলিশের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে৷ তবুও অনুমতি দেওয়ার পর জমায়েতের স্থান পরিবর্তনের আদেশ মেনে নেয়া মুশকিল৷
তিনি আদালতের কাছে প্রস্তাব রাখেন, যেকোন শর্ত মেনে রবীন্দ্র ভবন প্রাঙ্গনেই জমায়েত করতে প্রস্তুত আবেদনকারী৷ এক্ষেত্রে জমায়েতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা সাতশতাধিক অতিক্রম করবে না, তা নিশ্চিত করা হবে৷ সমস্ত সওয়াল শেষে আদালত শর্ত বেধে দিয়ে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন প্রাঙ্গনেই আগামীকাল জমায়েতের অনুমতি দেন৷ এক্ষেত্রে পাঁচশ এর অধিক জমায়েতে মানুষের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত৷ তাছাড়া, জমায়েতে অংশ নেওয়ার আগে অন্য কোথাও ভীড় একত্রিত হওয়া নিয়েও আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে৷ পুলিশকে অনুমতি দিয়েছে জমায়েত স্থলে যাওয়ার প্রবেশ পথে একাধিক নাকা পয়েন্ট গঠন করে অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতির হার নিরূপন করতে হবে৷ তাতে তৃণমূলের নেতারাও ওই নাকা পয়েন্টে উপস্থিত থেকে পুলিশকে সহযোগিতা করতে হবে৷ গাড়ি দাঁড়ানোর জন্য সেন্ট্রাল জেল মাঠ এবং নেতাজী সুকলের মাঠ ব্যবহারে অনুমতি দিয়েছে আদালত৷ সর্বোপরি শহরে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব তৃণমূলকেও নিতে হবে, নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ এছাড়া আজ শনিবার রাত বারোটার মধ্যে সমস্ত শর্ত মেনে পশ্চিম আগরতলা থানায় মুচলেকা দিতে হবে৷ মুচলেকা দিতে ব্যর্থ হলে আগামীকাল পুলিশকে জমায়েতের স্থান বদলের আদেশ কার্যকরে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে আদালত৷ আদালতের এই রায়ে তৃণমূল কংগ্রেস সন্তোষ ব্যক্ত করেছে৷