BRAKING NEWS

ত্রিপুরায় বিলুপ্তির পথে করবং সম্প্রদায়, স্বত:প্রনোদিত হয়ে জনস্বার্থ মামলা নিল উচ্চ আদালত

আগরতলা, ১৯ অক্টোবর (হি. স.) : বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে দাড়িয়ে করবং সম্প্রদায়। ত্রিপুরায় ১৯টি জনজাতি গোষ্ঠির অন্যতম হালাম জনগোষ্ঠির করবং সম্প্রদায়ে সাকুল্যে পরিবারের সংখ্যা ৫২। অবশ্য, প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। কারণ, অনেকেই অন্য সম্প্রদায়ে বিয়ের পর সেই পদবী গ্রহণ করে নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে করবং সম্প্রদায়ভুক্ত মোট পরিবারের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৭০ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ত্রিপুরা হাইকোর্ট তাঁদের সামাজিক, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জানতে স্বত:প্রনোদিত হয়ে জনস্বার্থ মামলা নিয়েছে। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ইন্দ্রজিত মোহান্তি এবং বিচারপতি শুভাশীষ তলাপাত্রের ডিভিশন বেঞ্চ ওই মামলায় নোটিশ জারি করে পরবর্তী শুনানির দিন ১২ নভেম্বর ধার্য্য করেছে। আদালত ৯ নভেম্বরের মধ্যে ত্রিপুরা সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দিষ্ট টিম গঠন করে করবং সম্প্রদায়ের বসবাসের এলাকা পরিদর্শন শেষে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে। ওই মামলায় আদালত বান্ধব আইনজীবী নিযুক্ত হয়েছেন হরেকৃষ্ণ ভৌমিক।


প্রসঙ্গত, ত্রিপুরায় রিয়াং, জমাতিয়া, ত্রিপুরী, নোয়াতিয়া, উচুই, চাকমা, মগ, লুসাই, কুকি, হালাম, মুন্ডা, কাউর, ওরাং, সাঁওতাল, ভুটিয়া, চাইমাল, গারো, খাসিয়া এবং লেপচা সব মিলিয়ে মোট ১৯টি জনগোষ্ঠী রয়েছে। করবং সম্প্রদায় হালাম জনগোষ্ঠির অন্তর্গত আছে। কিন্ত, ওই সম্প্রদায় ক্রমশ বিলুপ্ত হওয়ার পথে।


খোয়াই জেলায় তেলিয়ামুড়া মহকুমায় রূপাছরা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন পূর্ণ চন্দ্র করবং পাড়া, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় বড়মুড়ায় বনকুমারি এবং চম্পকনগর করবং পাড়া এলাকায় ওই সম্প্রদায়ের মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তাঁদের আয়ের প্রধান উত্স রিশা ও পাসরা তৈরী, জুম চাষ এবং রেগার কাজ। ২০১৬ সালে চম্পকনগর করবং পাড়া এলাকায় আদর্শ গ্রাম নির্মান করে তাঁদের বসবাসের স্থায়ী ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্ত, শিক্ষাগত দিক দিয়ে তাঁরা এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়নি। ফলে, আর্থিক দিক দিয়েও তাঁরা এখনো পিছিয়ে রয়েছেন।


আদর্শ গ্রামে পানীয় জল, রাস্তাঘাট এবং বিদ্যালয়ের সুবন্দোবস্ত রয়েছে। কিন্ত, করবং সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা শিক্ষার আলো থেকে দুরেই রয়েছে। এডিসি প্রশাসন ১৯৮৯ সালে করবং সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের জন্য বিদ্যালয় খুলেছিল। অবশ্য, বিদ্যালয় ১৯৯৩ সালে চালু হয়েছিল। তিনজন শিক্ষক এবং ১৫ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে ওই বিদ্যালয় শুরু হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সরকারী তথ্য অনুযায়ী ২০০২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার করবং সম্প্রদায়কে জনজাতি মর্যাদা দিয়েছিল। তাছাড়া, অন্যান্য জনগোষ্ঠির মতোই রেশনের চাল এবং রেগার কাজের সুযোগ-সুবিধা তাঁরা ভোগ করছেন।


এদিকে, সিএসআর কর্মসূচির অন্তর্গত ওএনজিসি করবং পাড়া আদর্শ গ্রামকে দত্তক নিয়েছিল। তাতে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয় জল সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়েছিল। তবুও, ওই সম্প্রদায় ভুক্ত পরিবারের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে, ওই সম্প্রদায় আগামীদিনে ত্রিপুরায় বিলুপ্ত হয়ে যাবে, এমনটাই আশংকা প্রকাশ করছেন রবি মোহন করবং। তিনি জানান, আর্থিক দৈন্যতার কারণে করবং সম্প্রদায়ের অনেকেই ভিন সম্প্রদায়ে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছেন। ফলে, বিয়ের পর তাঁরা পদবী বদল করে নিচ্ছেন। তাতে, করবং সম্প্রদায় ভুক্ত পরিবারের সংখ্যা কমেই চলেছে। তাঁর দাবি, সারা ত্রিপুরায় করবং সম্প্রদায়ের ৭০টি পরিবার রয়েছে। কিন্ত, ত্রিপুরা স্ব-শাসিত জেলা পরিষদের প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্যের দাবি, ত্রিপুরায় করবং সম্প্রদায়ভুক্ত পরিবারের সংখ্যা ৫২। তার মধ্যে চম্পকনগর করবং পাড়া আদর্শ গ্রামে ৩২ পরিবারের বসবাস রয়েছে।


ত্রিপুরা হাই কোর্ট করবং সম্প্রদায়ের বিলুপ্তি সংক্রান্ত প্রকাশিত খবরে স্বত:প্রনোদিত হয়ে জনস্বার্থ মামলা নিয়েছে। প্রধান বিচারপতি ইন্দ্রজিত মোহান্তি এবং বিচারপতি শুভাশীষ তলাপাত্রের ডিভিশন বেঞ্চে ওই মামলায় শুনানি হয়েছে। আদালত ত্রিপুরা সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার, জেলা শাসক, মহকুমা শাসক, এডিসি প্রশাসন এবং স্থানীয় সংবাদপত্রের সম্পাদককে নোটিশ দিয়েছে। আগামী ৯ নভেম্বরের মধ্যে সমস্ত তথ্য, প্রমাণ হলফনামার মাধ্যমে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সাথে ত্রিপুরা সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারকে টিম গঠন করে করবং সম্প্রদায়ের বসবাসের এলাকা পরিদর্শনের পর বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। ওই রিপোর্ট আদালত বান্ধব আইনজীবীকে দেওয়ার জন্যও আদেশ করেছে আদালত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *