আগরতলা, ৮ অক্টোবর : নাগরিক পরিষেবা প্রদান থেকে নিয়োগ সবেতেই স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করছে সরকার। নাগরিকদের স্বনির্ভর মানসিকতা স্বনির্ভর রাজ্য নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে। রাজ্যে তৈরি হওয়া স্বনির্ভর মানসিকতা রোজগারের নতুন পথ খুলে দেওয়ার পাশাপাশি আত্মনির্ভর যুবরাই তৈরি করছে রোজগারের সুযোগ। আজ ধর্মনগর কালীবাড়ির পুণ্যদীঘির সংস্কার ও নবরূপে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। এদিন সস্ত্রীক মুখ্যমন্ত্রী প্রথমেই দীঘি সংলগ্ন ধর্মনগর কালীবাড়ি মন্দিরে প্রার্থনা করেন। অনুষ্ঠানে প্রায় ১,২০০ শিল্পী ও ছাত্রছাত্রীরা সমবেত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা থেকে শুরু করে সমস্ত ক্ষেত্রেই উন্নয়নের নিরিখে সফলতা এসেছে। সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই আগামীদিনে ইউপিএসসি থেকে করে জাতীয়মানের প্রবেশিকা পরীক্ষায় সাফল্যের নজির তৈরি করতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় প্রয়োজন রয়েছে এমন প্রতি পরিবারে পাকা ঘর পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় গ্রামীণ এলাকার প্রতি পরিবারে পানীয়জল পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি নগর এলাকার প্রতি বাড়িতেও পানীয়জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে সমস্ত অংশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে কাজ করছে সরকার। রাবার, আগরের মতো ত্রিপুরায় উপলব্ধ সম্পদ ও নানান উদ্ভাবনী ভাবনায় বড়মাত্রায় রোজগারের সুযোগ উন্মোচিত হয়েছে। রাজ্যে তৈরি হওয়া স্বনির্ভর মানসিকতার ফলে নিজেরা আত্মনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি যুবরা নিজেরাই অন্যদের কাজের সংস্থান তৈরি করছেন। মহিলা স্বশক্তিকরণের লক্ষ্যে রেশনশপের মালিকানা মহিলাদের দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। যার অন্যতম লক্ষ্য মহিলাদের রোজগার বৃদ্ধি ও অর্থনীতিতে অংশীদারিত্ব বাড়ানো। মহিলাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যতিরেখে সমগ্র রাজ্যের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মহিলা ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে একাধিক পরিকল্পনা সফলভাবে রূপায়িত হচ্ছে। বেড়েছে রেগার শ্রমদিবস।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যে করোনা পরিস্থিতিকে সামনে রেখে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন ও পরিষেবার বিকেন্দ্রীকরণে সাফল্য এসেছে। নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে আইসিইউ, ভেন্টিলেটর সহ উন্নত ও আধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবা রাজ্যের সর্বত্র সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। যাতে করে সমস্ত অংশের মানুষের কাছে উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা সুনিশ্চিত করা যায়। রাজ্যে তৈরি হওয়া অক্সিজেন প্ল্যান্টগুলি করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে উন্নত করবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে তুলনামূলক কম সময়ে করোনা ভ্যাকসিনের স্বদেশি টিকা দেশবাসীর জীবন সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। এরফলে রাজ্যের পজিটিভিটি রেট নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে দীর্ঘদিন স্থগিত হয়ে থাকা রাজ্যের সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আবারও খুলে গেছে। আত্মনির্ভর ত্রিপুরা নির্মাণের লক্ষ্যে সবার সর্বাঙ্গীন অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে উপাধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন বলেন, নগরোন্নয়ন দপ্তর এবং বিধায়ক উন্নয়ন তহবিলের অর্থানুকূল্যে এই সংস্কার কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় ধর্মনগর কালীবাড়ির পুণ্যদীঘির সংস্কার ও আধুনিকীকরণের কাজ দ্রুততার সাথে সম্পন্ন হয়েছে। ধর্মনগরের উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি। এই দীঘিতেই সম্প্রতি স্থাপিত হয়েছে মহাদেবের পূর্ণাবয়ব বিগ্রহ। উপাধ্যক্ষ জানান, এই কালীবাড়ির দীঘিতে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিদিন মঙ্গল আরতি করার পরিকল্পনা রয়েছে। ধর্মনগর শহরকে স্বচ্ছ, নির্মল এবং সবুজায়নের লক্ষ্যে সবার সর্বোত সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।
এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী জায়া তথা পূর্বোদয় সামাজিক সংস্থার সম্পাদিকা নিতি দেব, উত্তর ত্রিপুরা জেলার জিলা পরিষদের সভাধিপতি ভবতোষ দাস, এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব রসিক রঞ্জন গোস্বামী, সমাজসেবী রত্না রায় চৌধুরী (সেন) প্রমুখ।