Even though Corona is chasing : করোনা তাড়া করলেও বিভিন্ন জায়গায় শারদোৎসবের মেজাজ

নিজস্ব প্রতিনিধি, চুড়াইবাড়ি/ বক্সনগর, ২৮ সেপ্ঢেম্বর৷৷ দরজায় কড়া নাড়ছে শারদীয় শারদোৎসব৷ কদিন পরেই দেবীপক্ষের সূচনা৷ হাতে গোনা আর কটা দিন তারপর বাঙ্গালীরা মেতে উঠবেন শারদীয় দুগর্োৎসবে৷ চতুর্দিকে পুজো পুজো গন্ধ৷ মৃৎশিল্পীরা দশভূজা দেবী দুর্গা প্রতিমা তৈরিতে চরম ব্যস্ত৷ প্রতিটি কুমোরপাড়ায় মৃৎশিল্পীদের দশভূজা দেবী দুর্গা প্রতিমা তৈরির প্রতিযোগিতা৷ মৃৎশিল্পীরা দিনরাত একাকার করে অতি সযত্নে দেবী দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে চলছেন৷ তবে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে তেমন মুনাফা পাচ্ছেন না মৃৎশিল্পীরা৷ একদিকে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি অপরদিকে ক্লাব ও সার্বজনীন পূজা কমিটি মূর্তির মূল্য বৃদ্ধি করছেননা৷ তার উপর রয়েছে করোনা আবহের ফলে আর্থিক মান্দা৷যদিও মৃৎশিল্পীরা উনাদের একমাত্র ভরসাই মূর্তি বানানো আর সেই মূর্তি বানিয়ে সংসার প্রতিপালন করেন৷


তাই উনাদের মুনাফা কম হলেও অতি সযত্নে দুর্গা প্রতিমা নির্মাণ করছেন৷শহরের উঁচু উঁচু দুর্গা প্রতিমাকে টেক্কা দিয়ে গ্রামাঞ্চলেও মৃৎশিল্পীরা উঁচু উঁচু দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন৷ উত্তর জেলার কদমতলা চুড়াইবাড়ি শনিছড়া বাগবাসা লালছড়া নতুনবাজার প্রেমতলা রানীবাড়ী,পানিসাগর সহ আশপাশের এলাকাগুলিতে প্রায় সত্তর জনের অধিক মৃৎশিল্পীরা দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন৷ সকলেরই একটি বক্তব্য, এবছর মাটি বাঁশ খের রং কাপড় সহ অন্যান্য সামগ্রীর অগ্ণি মূল্য৷কিন্তু মূর্তির দাম বৃদ্ধি হয়নি তাই মৃৎশিল্পীদের মুনাফা অনেকটাই কম৷
অপরদিকে রয়েছে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ৷ আর্থিক মান্দার বাজারে লাভের অংশটা অনেকটাই কম৷মৃৎশিল্পীরা পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া(বৃন্দাবন) ও অসম থেকে কারিগর এনে অতিযত্ন সহকারে মূর্তি তৈরি করছেন৷ মৃৎশিল্পীরা জানিয়েছেন উনাদের মূর্তি গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি ধর্মনগর শহর,পানিসাগর ও পার্শবর্তী রাজ্য অসমের করিমগঞ্জ জেলায় বিক্রি হয়ে থাকে৷কিছু কিছু মৃৎশিল্পীরা সরকারি এক হাজার টাকা ভাতা পেলেও অধিকাংশ মৃৎশিল্পীরা এই মৃৎ শিল্পীর ভাতা থেকে বঞ্চিত৷তাছাড়া পাননি সরকারি অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা৷বিশেষ করে দিনকে দিন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মূর্তির মূল্যবৃদ্ধি না হওয়াতে উনাদের পারিশ্রমিকটা অনেকটাই কমে গিয়েছে৷তাই নব প্রজন্ম এই মৃৎশিল্পটাকে ভুলে যাচ্ছে৷তবে কদমতলা এলাকার দিলু পাল নামে এক যুবক মৃৎশিল্পী জানান, মান্ধাতার আমল থেকে মৃৎশিল্পী পেশা বেছে নিয়েছিলেন এবং এই কাজের উপরই তাদের সংসার চলত৷তাই সেও এই পেশাটাকে বেছে নিয়েছে৷এই পেশার উপরে তাদের পরিবার প্রতিপালন হতো৷তাই মৃত শিল্পী দিলু পাল মান্ধাতার ঐতিহ্যকে ধরে রাখবে বলেও জানান৷


অপরদিকে কল্লোল মালাকার নামে এক মৃত শিল্পী জানান, আর্থিক মান্দার মাঝেও তাঁরা তাঁদের পেশাটাকে ঁকড়ে ধরে রেখেছেন৷তবে অনান্য বছরের তুলনায় এবছর মুনাফাটা কম হবে বলে জানান মৃত শিল্পী কল্লোল মালাকার৷তবে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সহযোগিতা পেলে উক্ত এলাকার মৃত শিল্পীরা ভবিষ্যতে আরেকটু স্বাবলম্বী হতে পারবেন বলে জানান৷
এদিকে, শরতের ভোরে আগমন ধানের কচি ডগায় শিশির বিন্দু গুলো যেন এক একটি মুক্তো৷ শিউলি ফুল কড়োনোর জন্য সাজি হাতে নিয়ে কচি কাঁচাদের কল তাসে দোলা দিচ্ছে কাশ ফুল, আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের ভেলা৷ প্রকৃতি যেন আজ নবরূপে সেজে ওঠেছে৷ দূর্গা পূজার প্রতিক্ষার বার দিন বাকি রইল৷ বাঙালির তের পার্বণের মধ্যে অন্যতম পার্বণ হচ্ছে শারদীয়া উৎসব৷ কুমোর বাড়িতে, পাল বাড়িতে, আচার্য্য বাড়িতে, ব্যস্ত মৃৎ শল্পীরা প্রতিমা তৈরীতে৷ কাঁচা মাটির ডেলা দিয়ে নানান রঙের মূর্তি বানান মৃৎশিল্পি কারিগররা৷ বক্সনগর এলাকার মধ্যে বহু পুরানো ঐতিহ্যবাহী মূর্তির কারিগর হিসেবে সর্ব প্রথম নামটি হচ্ছে মানিক্যনগর নিবাসী পাঁচ নং ওর্য়াডের বাসিন্দা নেপাল পাল৷ তিনি জানান, উনার জান্ম স্থান পূর্ব পাকিস্তান অধুনা বাংলাদেশ কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপজেলা ইউনিয়নভুক্ত নবীনগর থানা এলাকার ভোলাচং গ্রামে ১৯৩৯ সালে৷ ১৯৬৪ সনে আমার বাপ দাদার ভীটে মাটি ছেড়ে, কাকু এবং জ্যেঠুর সঙ্গে আগরতলা শিবনগর শরনার্থি কেম্পে ছিলাম৷


যখন আমার বয়ষ ১২ তখন থেকেই মৃৎশিল্পি কাজে বাবা দাদুর সঙ্গে হাতে খড়ি৷বিবাহ সুএে মানিক্য নগরের বাসিন্দা৷ বর্তমানে ৮২বছর চলছে, বয়সের ভারে নুজ্জ৷ তারপরেও সংসারের ঘানি টানতে মূর্তির কাজ করতে হচ্ছে৷ বাজারে চলছে দ্রব্যমূল্যের আকাশ ছোঁয়া৷ মূর্তি তৈরী করতে সাজসরঞ্জামগুলোর দাম দ্ধিগুন হয়ে গেছে৷ অতিমারী রাক্ষস করোনা পূর্বে মূর্তি বানিয়ে দুচারটা পয়সা উর্পাজন করেছিলাম ভালই৷ কিন্তু আজ দুবছর করোনা মহামারির গ্রাসে সংসারজীবন তছনছ হয়ে গেল৷ আগে আঠারো কুড়িটি দূর্গা কাঠামের বায়না আসতো৷ এই বৎসর মাএ সাতটি দূর্গা প্রতিমা তৈরির অর্ডার পড়েছে৷ সংসারের ছয়মাস চলে মূর্তির কাজ দিয়ে৷ আর বাকি ছয়মাস চলে কৃষি চাষাবাদ করে৷ পরিবারে ৬জন সদস্য৷ এখন মূর্তি কাজে লাভ নেই৷ তবুও ঐতিহ্যবাহী পেশা হিসেবে এটাই একমাএ কর্ম৷ বড়ই অভাবে দিন যাপন করছি৷ ভাতা পাই মাএ একহাজার টাকা৷


সরকারের নিকট তিন হাজার টাকা করে প্রদান করার জন্য অনুরোধ করেন৷ বক্সনগর এলাকার মধ্যে আরও একজন মৃৎশিল্পী হিসাবে নবীন বয়সে খ্যাতি অর্জন করছেন৷ তিনি হলেন উত্তর কলমচৌড়া বাগানবাড়ির এক নং ওর্য়াডের বাসিন্দা অতিনদ্র সরকার৷ তার বয়ষ মাএ চল্লিশ৷ উনার কনো মূর্তি তৈরির কাজ করতে শিক্ষা গুরু নেই৷ স্পূর্ণ মৃৎ শিল্পীর কাজটি তিনি নিজের দক্ষতা অভিজ্ঞতা ও চোখেঁর আন্দাজে নিজের দখলে নিয়েছেন৷ আট বছর ধরে প্রতিমা তৈরির সঙ্গে যুক্ত৷ সংসারে পাঁচজন লোক৷ ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা এবং অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী কেনাকাটা করে, আকাশ ছোঁয়া জিনিস পএ ক্রয় করে সংসার চালাতে খুবই কস্ট হয়৷ এখন পর্যন্ত দুটি মূর্তির কাঠামো বায়না এসেছে৷ কি যে হবে ভাবা যায় না৷ বাজার খুবই মন্দা৷ তবুও আশা নিয়ে প্রতিক্ষা বসে আছি শেষ তুলির টানে কিছু উর্পাজন হয় কিনা৷