নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২০ সেপ্ঢেম্বর৷৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আজ সচিবালয়ের ১ নং সভাকক্ষে অন্যান্য পশ্চাদপদ শ্রেণী কল্যাণ, সংখ্যালঘু কল্যাণ, স্বরাষ্ট্র (কারা, অগি নির্বাপক ও জরুরি পরিষেবা) এবং সমবায় দপ্তরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের পর্যালোচনা করেন৷ সভায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল উপস্থিত ছিলেন৷
সভায় অন্যান্য পশ্চাদপদ শ্রেণী কল্যাণ দপ্তরের কাজকর্মের পর্যালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের সরকারি ছাত্রাবাসগুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়ন সহ ছাত্রাবাসগুলির আনুষঙ্গিক অন্যান্য ক্ষেত্রগুলির সংস্কারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে আরও বেশি উদ্যোগী হয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন৷ তিনি বলেন, প্রতি তিন মাস অন্তর ছাত্রাবাসগুলির পর্যালোচনা করা প্রয়োজন৷ পাশাপাশি বেসরকারি বিদ্যালয় পরিচালিত ছাত্রাবাসগুলির পর্যালোচনা করার উপর মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেছেন৷ ওবিসি ছাত্রছাত্রীদের আগরতলায় থাকার সুুবিধার্থে আগরতলা বা আগরতলার আশপাশ এলাকায় একটি বড় প্রকল্প নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সভায় আলোচনাকালে মুখ্যমন্ত্রী অন্যান্য পশ্চাদপদ শ্রেণীভুক্ত মানুষের অর্থনৈতিক বিকাশে স্কিল ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সেই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রাথমিক ক্ষেত্র সহ আগর চাষের উপর বিশেষভাবে জোর দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন৷
পর্যালোচনা সভায় অন্যান্য পশ্চাদপদ শ্রেণী কল্যাণ এবং সংখ্যালঘু কল্যাণ দপ্তরের রূপায়িত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচিগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন দপ্তরের সচিব তাপস রায়৷ তিনি জানান, রাজ্যে ৪৪টি কমিউনিটিকে ওবিসি শ্রেণীভুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার৷ অন্যান্য পশ্চাদপদ শ্রেণী কল্যাণ দপ্তরের মাধ্যমে শিক্ষার বিকাশে যে সকল প্রকল্পগুলি রাজ্যে রূপায়িত হচ্ছে তা সচিত্র প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুলে ধরেন দপ্তরের সচিব৷ রাজ্যে ওবিসি ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নে প্রিমেট্রিক স্কলারশিপ, পোস্ট মেট্রিক স্কলারশিপ, আর্থিকভাবে দুর্বল মেধাবী ওবিসি শিক্ষার্থীদের জন্য এককালীন আর্থিক সহায়তা, ড. বি আর আম্বেদকর গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড, ড. বি আর আম্বেদকর মেরিট অ্যাওয়ার্ড ইত্যাদি রাজ্যে চালু রয়েছে বলে সচিব জানান৷ এছাড়াও সামাজিক বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মসূচি সমূহের মাধ্যমে ওবিসি শ্রেণীভুক্ত মানুষকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হচ্ছে বলেও সচিব উল্লেখ করেন৷
পর্যালোচনা সভায় সংখ্যালঘু কল্যাণ দপ্তরের সচিব তাপস রায় সংখ্যালঘু কল্যাণ দপ্তরের কাজকর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করেন৷ তিনি জানান, রাজ্যে ১৬.৪ শতাংশ সংখ্যালঘু অংশের মানুষ রয়েছেন৷ রাজ্যে সংখ্যালঘু কেন্দ্রীভূত ১২টি ব্লকে সংখ্যালঘুদের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে৷
সভায় সচিব সংখ্যালঘুদের কল্যাণে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা এবং সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে রূপায়িত বিভিন্ন কর্মসূচিগুলির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করেন৷ ওয়াকফ বোর্ডের সম্পত্তির উন্নয়ন এবং তার রক্ষণাবেক্ষণের উপরও সভার আলোচনায় প্রাধান্য পায়৷
সভায় সমবায় দপ্তর নিয়ে পর্যালোচনার সময় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, সমবায়ের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে দপ্তরকে সুুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে৷ গ্রামীণ এলাকার মানুষকে সমবায়ের সাথে যুক্ত করার উপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন৷ এক্ষেত্রে তিনি সমবায় দপ্তরকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন৷ রাজ্যে ফুল চাষের উন্নয়নেও সমবায় গঠনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন তিনি৷ সভায় আলোচনাকালে মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরা স্টেট কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে রাজ্যের বর্গাদার, বায়োফ্লক পদ্ধতি উৎসাহী মাছ চাষী সহ অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানে এগিয়ে আসতেও আহ্বান জানান৷ একই সঙ্গে জেনেটিক মেডিসিনের বিষয়ে সভার আলোচনায় প্রাধান্য পায়৷
পর্যালোচনা সভায় সমবায় দপ্তরের রূপায়িত বিভিন্ন প্রকল্প কর্মসূচি সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন সমবায় দপ্তরের বিশেষ সচিব অভিষেক চন্দ্রা৷ তিনি বলেন, বর্তমানে রাজ্যে ৩,৬৪১টি সমবায় সমিতি রয়েছে৷ ধলাই, ঊনকোটি এবং উত্তর জেলায় আইসিডি প্রকল্পে পরিকাঠামো উন্নয়নে বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করেন সচিব৷ তিনি আরও বলেন, ১১০টি সমবায় সমিতিকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে৷ এছাড়া সমবায় সমিতিগুলির সার্বিক উন্নতিকল্পে সমবায় দপ্তর কর্ত’ক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপগুলি সম্পর্কেও সভায় আলোচনা হয়৷
এদিনের সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব স্বরাষ্ট্র (জেল এবং অগি ও জরুরি পরিষেবা) দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচিগুলি নিয়েও পর্যালোচনা করেন৷ সভায় মুখ্যসচিব কুমার অলক, স্বরাষ্ট্র (জেল এবং অগি ও জরুরি পরিষেবা) দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, সমবায় দপ্তরের বিশেষ সচিব অভিষেক চন্দ্রা সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলির অন্যান্য উচ্চ পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন এবং আলোচনায় অংশ নেন৷

