নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৫ সেপ্টেম্বর।। ত্রিপুরায় থানার লকআপে আবারও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সিপাহীজলা জেলায় সোনামুড়া থানাধীন বলারঢেফা এলাকার বাসিন্দা জামাল হুসেন(৩৫) ডাকাতি এবং এনডিপিএস মামলায় অভিযুক্ত ছিল। পুলিশ তাকে গতকাল রাতে বাড়ি থেকে তুলে এনেছে। আজ সকালে লকআপের ভেতরেই তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছে পুলিশ। তাঁর পরিবারের অভিযোগ পুলিশ তাকে পিটিয়ে খুন করেছে। জেলা পুলিশ সুপার কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তীর দাবি, শারীরিক দিক দিয়ে জামাল অসুস্থ ছিল। তাঁর বুকে ব্যথা হচ্ছিল। তাই, তাঁকে পুলিশ ঔষুধ দিয়েছিল। কিন্ত, আজ তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, সোনামুড়া থানার পুলিশ গতকাল গভীর রাতে বলারঢেফা এলাকার বাসিন্দা জামাল হুসেনকে পূর্ব মামলায় গ্রেফতার করেছে। এ-বিষয়ে জামালের পরিবারের অভিযোগ, কোন অসামাজিক কাজের সাথে তার যোগাযোগ ছিল না। কয়েক বছর ধরে তিনি দুবাইতে রয়েছেন। সেখানেই রোজগার করেন। জামালের বোনের দাবি, তাঁর ভাই গত ৫ সেপ্টেম্বর দুবাই ফিরে যাওয়ার জন্য টিকিট ক্রয় করেছে। কয়েকদিনের মধ্যে তাঁর সেখানে যাওয়ার জন্য সমস্ত কিছুই প্রস্তুত ছিল। কিন্ত, গতকাল রাতে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ গতকালই বাড়ি থেকে জামালকে মারধর করে থানায় নিয়ে গেছে। আজ সকালে দেখা করতে চাইলে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। তিনি বলেন, জামালের জন্য সকালে খাবার এনেছিলাম। কিন্ত, পুলিশ দেখা করার অনুমতি দেয়নি। পরে খবর দিয়েছে, থানার লকআপে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
জামালের বোনের অভিযোগ, তাঁর ভাইকে পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে। কারণ, শারীরিকভাবে তাঁর কোন রোগ ছিল না। তিনি দাবি করেন, হত্যার ঘটনা পুলিশ এখন স্বাভাবিক মৃত্যু বলে সাজাচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশ মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য সোনামুড়া হাসপাতালে পাঠিয়েছে। জানা গেছে, জামালের দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। তাদের পুলিশ অনাথ করেছে বলে মৃতের পরিবারে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন।
ওই ঘটনায় সিপাহীজলা জেলা পুলিশ সুপার কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী বলেন, গতকাল রাতে জামাল হুসেনকে গ্রেফতারের পর মেলাঘর এবং সোনামুড়া হাসপাতালে তার শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। এরপর তাকে থানার লকআপে রেখেছে পুলিশ। তিনি বলেন, জামাল ডাকাতি এবং এনডিপিএস মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন। পূর্বের মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। তাঁর দাবি, শরীরিক অসুস্থতায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কারণ, গতকাল রাতেই বুকে ব্যথা হচ্ছে বলে পুলিশকে জানিয়েছিলেন জামাল। তাই, তাকে ঔষুধ দিয়েছিল পুলিশ। কিন্ত, আজ সকালে লকআপের ভেতরেই তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারী আগরতলায় বর্ডার গোলচক্কর এলাকার মিষ্টি ব্যবসায়ী সুশান্ত ঘোষকে এটিএম হ্যাকিং কাণ্ডে গ্রেফতার করে থানায় লকআপে রেখেছিল পুলিশ। লকআপেই রহস্যজনকভাবে তার মৃত্যু হয়েছিল। এখনো পর্যন্ত ওই মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন হয়নি। আদৌ রহস্য উন্মোচন হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এছাড়া ইতিপূর্বে একাধিক এমন ঘটনা রয়েছে। এভাবে থানার লকআপে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অন্যতম নজির বলেও মনে করা হচ্ছে। এ ধরনের মানবাধিকার বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।