BRAKING NEWS

তথ্যের আলোকে ভোটের চিত্র ঃ ১৯৯৮ সালে সিপিএমকে ক্ষমতায় বসাতে সহায়ক ভূমিকা ছিল বিজেপির, এখন সেই পথে কংগ্রেস

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৫ ফেব্রুয়ারী৷৷ ১৯৯৮ থেকে ২০১৮৷ দীর্ঘ ২০ বছর একটানা ক্ষমতায় বামেরা৷ সময়ের সাথে পরিস্থিতিতে অনেক বদল হয়েছে৷ চাওয়া এবং পাওয়া মিলিয়ে রাজ্যবাসীর প্রত্যাশা কতটা পূরণ হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকা স্বাভাবিক৷ কিন্তু, আজ পরিবর্তন এবং প্রত্যাবর্তনের মাঝে বালিরেখা কে এঁকে দেবে তা নিয়ে আলোচনা যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক বলেই মনে হচ্ছে৷ ভোট বিভাজন আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করবে৷

অবশ্য ১৯৯৩ সাল থেকেই বামফ্রন্ট টানা ক্ষমতায়৷ তবে, ১৯৯৩ সালকে ভোটের প্রতিযোগীতার মাপকাঠিতে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ হবে বলে মনে করছে না রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল৷ কারণ, খোদ বামেরাও স্বীকার করছেন, ১৯৯৩ সালে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রয়োগ না হলে, কংগ্রেস জোট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব হতো না৷ বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভার অন্যতম প্রধান সদস্য বাদল চৌধুরী অকপটে স্বীকার করেছেন, রাষ্ট্রপতি শাসনই বামফ্রন্টকে ক্ষমতায় এনেছে৷ তাই, ১৯৯৩ সালের নির্বাচনকে বিশ্লেষণে আনা যাচ্ছে না৷ তবে, রাষ্ট্রপতি শাসন প্রয়োগ হলেও, বামেরা সেদিন অনায়াসে ক্ষমতায় আসেনি৷ বামেরা ৪৭টি আসন দখল করতে পেরেছিল৷ কংগ্রেস জোট সহ বিরোধী আসনে ১৩ জন বিধায়ক স্থান পেয়েছিলেন৷ অবাক করার ঘটনা হল, ১৯৯৩ সালের নির্বাচনে বামেদের তুলনায় বাম বিরোধী খাতায় ভোট বেশি পড়েছিল ৪০ হাজার ৫০টি৷ তাতে স্পষ্ট, ভোট বিভাজন সেদিনও বামেদের জিততে সহায়ক ভূমিকা নিয়েছিল৷ একা বিজেপি ২৭ হাজার ৭৮টি এবং নির্দল প্রার্থীরা পেয়েছিলেন ৮২ হাজার ৫৪১টি ভোট৷ সমালোচকদের মতে, কংগ্রেসের ভোট বিভাজনে তখন বিজেপিকে উৎসাহ দিত সিপিএম৷

কংগ্রেস জোট আমলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছিলেন বেকার এবং কর্মচারীরা৷ পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সরকারী চাকুরি হয়েছে৷ তাছাড়া, কর্মচারীদের বেতন কাঠামো ভদ্রস্থ হয়েছিল তখনই৷ কোষাগার শূণ্য হয়ে গিয়েছিল কর্মচারীদের পাওনা মিটিয়ে দিতে৷ কিন্তু, দূর্ণীতি এবং রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি কংগ্রেসকে কলংকিত করেছে৷

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, ১৯৯৩ সালে কিছু আসন কংগ্রেসের ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে বেকার এবং কর্মচারীদের ঢেলে সাহায্য করার জন্যই৷ কিন্তু, ১৯৯৮ সালের নির্বাচনের চিত্র অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল৷

ভোট বিভাজন ১৯৯৮ সালে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছিল৷ কারণ, ওই সময়ে একা বিজেপি ভোট পেয়েছিল ৮০ হাজার ২৭২টি৷ নির্দল প্রার্থীরা পেয়েছিলেন ৪৪ হাজার ৯৩০টি ভোট৷  জনতা দল, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, আমরা বাঙালী এবং সিপিআইএমএল মিলে ভোট পেয়েছিল ৮ হাজার ৫২৫টি৷

কংগ্রেস জোটের সাথে বামেদের ভোটের ব্যবধান ছিল লক্ষাধিক৷ ওই সময়ে বামেরা ৩৯টি আসন দখলে রেখে ক্ষমতায় টিকে ছিল৷ ভোট পেয়েছিল ৬ লক্ষ ৭০ হাজার ৭৯৭টি৷ কংগ্রেস জোটের তুলনায় ১ লক্ষ ৮ হাজার ৩৫৫টি ভোট বেশি৷ কিন্তু, লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, ১৪টি আসনে বামেদের জয়ের ব্যবধান ছিল হাজারের নীচে৷ ওই আসনগুলিতে মোট জয়ের ব্যবধান ৬৭৩০টি ভোট৷ কংগ্রেস জোট ওই নির্বাচনে ১৭টি আসন ছিনিয়ে নিয়েছিল৷ নির্দল প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন ২টি আসনে৷

নির্বাচন দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ১৯৯৮ সালের নির্বাচনে খয়েরপুর কেন্দ্রে ৪৮১, মজলিশপুর কেন্দ্রে ৮৬০, টাকারজলা কেন্দ্রে ৬, কমলাসাগর কেন্দ্রে ৬১১, গোলাঘাটি কেন্দ্রে ৯৪৯, সোনামুড়া কেন্দ্রে ৬৮৯, খোয়াই কেন্দ্রে ৬৩১, তেলিয়ামুড়া কেন্দ্রে ৩৩২, রাধাকিশোরপুর কেন্দ্রে ১৮৭, শান্তিরবাজার কেন্দ্রে ৯৩, ফটিকরায় কেন্দ্রে ৬৬৫, কূর্তী কেন্দ্রে ১৭৯, কদমতলা কেন্দ্রে ৭৬০ এবং যুবরাজনগর কেন্দ্রে ২৮৭ ভোটের ব্যবধানে বামেরা জয়ী হয়েছিল৷ এই কেন্দ্রগুলিতে জয়-পরাজয় নিশ্চিত করেছে ভোট বিভাজন, মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল৷ ১৯৯৮ সালের নির্বাচনে সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল, বামেদের তুলনায় বাম বিরোধী শিবিরে ভোট বেশি পড়েছে ২৫ হাজার ৩৭২টি৷

তবে, ২০০৩ সালের নির্বাচন থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বামেদের জয়ী হতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি৷ ২০০৩ সালে নির্বাচনেও বিরোধীরা একই সংখ্যক আসন ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন৷ কিন্তু, তার পরবর্তী নির্বাচনগুলিতে ক্রমশ আসন কমেছে বিরোধীদের৷

১৯৯৮ সালের নির্বাচনে বামেরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল৷ কুড়ি বছর বাদে আবারও কঠিন সময়ের মুখোমুখি বামফ্রন্ট৷ আজ বিজেপির হাওয়া চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের৷ টানা কুড়ি বছরে কর্মচারী বঞ্চনা, বেকার সমস্যা, দূর্নীতি বামফ্রন্টকে বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে এনে দাঁড় করেছে৷ কারণ, শান্তি সম্প্রীতি ছাড়া এখন বাম নেতাদের ভাষণে কোন কিছুই প্রাধান্য পাচ্ছে না৷ কোথায় ছিল রাজ্য এবং এখন কোথায় এসে পৌছেছে, সেই প্রচারও শান্তি সম্প্রীতি নিয়ে আলোচনায় চাপা পড়ে যাচ্ছে৷ কারণ, টানা ক্ষমতায় থেকেও আজও প্রত্যাশা পূরণে বামফ্রন্ট কতটা সাফল্য পেয়েছে, তা নিয়েই বিতর্ক রয়েছে৷ বামফ্রন্টের ঘাটতি আজ বিরোধীদের প্রচারের পূঁজি৷

কিন্তু, কুড়ি বছর বাদে পালা বদলে ভোট বিভাজন আবারও নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে বলেই মনে হচ্ছে৷ আসন্ন নির্বাচনে ৫৯টি আসনে ত্রিশঙ্কু লড়াই হবে৷ সাথে থাকছে নির্দল এবং অন্যান্য ছোটখাটো দল৷ ১৯৯৮ সালে বিজেপি জয়-পরাজয়ের বালিরেখা এঁকে দিতে পেরেছিল৷ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস একই ভূমিকায় থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে৷ সেদিন রাজ্যে সাইন বোর্ড সর্বস্ব ছিল বিজেপি৷ কিন্তু, আজ পরিস্থিতি বদলে সাইনবোর্ড সর্বস্বে গিয়ে পৌছেছে কংগ্রেস৷ কিন্তু, জয়-পরাজয়ের চিত্রপট রচনা করবে কংগ্রেসই৷ সেক্ষেত্রে পরিবর্তন না প্রত্যাবর্তন, এই সরল হিসাব সহজে অনুমান করা যাচ্ছে না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *