BRAKING NEWS

ঘাতক আমরি হাসপাতাল, কেড়ে নিল আড়াই বছরের ঐত্রির প্রাণ

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, আগরতলা, ১৭ জানুয়ারী৷৷ ঘাতক আমরি হাসপাতাল মুকুন্দপুর৷ কেড়ে নিল আড়াই বছরের ছোট্ট শিশু ঐত্রির প্রাণ৷ শুধু তাই নয়, শিশুর মৃত্যুর পর শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর বদলে শাসিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ এমনই অভিযোগ উঠেছে৷ মঙ্গলবার ভোরে ঐত্রির মৃত্যুতে তার পরিজনদের কান্নায় হাসপাতাল চত্বরের আকাশ ভারি হয়ে উঠেছিল৷ চিকিৎসায় গাফিলতির কারণেই ঐত্রির মৃত্যু হয়েছে, এই অভিযোগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং কর্তব্যরত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পূর্ব যাদবপুর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে৷ রাতে ময়না তদন্তের পর শিশুটির নিথর দেহ পরিবারের হাতে তোলা দেওয়া হয়েছে৷

আগরতলা কর্ণেল চৌমুহনী এলাকার বাসিন্দা জয়ন্ত দে এবং সম্পা পালের আড়াই বছরের শিশুকন্যা ঐত্রি দে জ্বর এবং শ্বাসনালীতে সমস্যা নিয়ে গত ১৫ জানুয়ারী ভর্তি হয়েছিল কলকাতা মুকুন্দপুরস্থিত আমরি হাসপাতালে৷ চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছিল ঐত্রি৷ মঙ্গলবার রাতেও খেলাধুলা করেছে ঐত্রি, জানিয়েছেন তার মা সম্পা পাল৷ কিন্তু, বুধবার ভোরেই ঘটে গেল হৃদয়বিদারক ঘটনাটি৷ কর্তব্যরত নার্স ইঞ্জেকশন দিতেই শ্বাস নিতে পারছিল না ছোট্ট শিশুটি৷ সন্তানের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে দেখে সাহায্যের আর্জি জানান তার মা৷ কিন্তু, মাক্সের অভাবে সময়মতো দেওয়া যায়নি অক্সিজেন৷ ফলে, কাতরাতে কাতরাতে ঐত্রি মায়ের কোলেই মারা যায়৷ এই মৃত্যুর জন্য গাফিলতি হয়েছে, তা ঢাকা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঐত্রি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে দাবি করেন৷

এদিন ভুল চিকিৎসায় শিশু-মৃত্যুর জেরে উত্তেজনা ছড়ায় মুকুন্দপুরের আমরি হাসপাতালে৷ শিশুর মৃত্যুতে অনুতপ্ত হওয়ার বদলে হাসপাতালের ইউনিট হেড জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায় শিশুটির পরিবারকে শাসিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷ ঐত্রির বাবা জয়ন্ত দে জানিয়েছেন, ইউনিট হেড জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায় নিজেকে হাসপাতালের মস্তান বলে দাবি করেছেন৷

ঐত্রির মা সম্পা পাল জানিয়েছেন, ভুল এন্টিবায়োটিক প্রয়োগের কারণেই তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে৷ ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরপরই দীর্ঘশ্বাস নিতে থাকে তাঁর মেয়ে৷ তা ভালো লাগেনি মায়ের৷ সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি চিকিৎসকদের জানান তিনি৷ তাঁর অভিযোগ, সন্তানের অবস্থা ভাল নয় জানানোর পরও ব্যবস্থা নেয়নি হাসপাতাল৷ এমনকি অক্সিজেন দেওয়া যায়নি মাক্সের অভাবে৷ কিছুক্ষনের মধ্যেই কাতরাতে কাতরাতে মায়ের কোলেই মারা যায় ঐত্রি৷ শিশুর মৃত্যুর খবর আসতেই হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন মৃতের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় পরিজনেরা৷ তখন তাঁদের হাসপাতালের ইউনিট হেড জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায় শাসিয়েছেন৷ অভিযোগ, শিশুটির মাকে তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, মস্তানি করবেন না৷ আমার থেকে বড় মস্তান কে আছে৷ এই বলে তিনি ধাক্কা দেন শিশুটির মাকে, জানিয়েছেন শম্পা পাল৷ এই ঘটনায় হাসপাতালে উত্তেজনা বেড়ে যায়৷ বিক্ষোভের আঁচ করতে করতে পেরে জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায় আত্মগোপন করেন৷ শেষপর্যন্ত বিকেলে তিনি ক্ষমা চাওয়ার ভান করে বেরিয়ে আসেন এবং দায়সারা ক্ষমা চাওয়ার নামে তিনি অভিযোগ করেন, তাঁকেও নাকি ধাক্কা দেওয়া হয়েছে৷ তাঁর হাত মুড়ে দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন৷ এরপর উত্তেজনা আরও বাড়তে শুরু করে৷ হাসপাতালের সিসিটিভ ফুটেজ খতিয়ে দেখার দাবি তোলে শিশুটির পরিবার৷ তাঁদের দাবি, একজন ইউনিট হেড হয়ে তিনি কী ভাষায় কথা বলেছেন, সহমর্মিতা না দেখিয়ে কী ভাষায় হুমকি দিয়েছেন তা খতিয়ে দেখা হোক৷

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এদিকে ভুল চিকিৎসায় শিশুটির মৃত্যুর ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে চেষ্টা শুরু করে দেয়৷ হাসপাতালের গ্রুপ সিইও অমিত বড়ুয়ার দাবি, ভুল চিকিৎসায় নয়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে৷ কিন্তু, ময়না তদন্তের রিপোর্ট না আসার আগেই তিনি কিভাবে এই দাবি করছেন, প্রশ্ণ তুলেছেন শিশুটির বাবা জয়ন্ত দে৷ তাঁর বক্তব্য, ঐত্রির হৃদযন্ত্রে কোন সমস্যা ছিল না৷ কিছুদিন আগেই অন্য একটি হাসপাতালে তার সমস্ত পরীক্ষা করা হয়েছে৷ তাতে হৃদযন্ত্রে কোন সমস্যা রয়েছে বলে রিপোর্টে বলা হয়নি৷ তাঁর কথায়, নিজেদের দোষ ঢাকতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখন গল্প সাজাচ্ছেন৷ তিনি পূর্ব যাদবপুর থানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং কর্তব্যরত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন৷ পাশাপাশি তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছেও করুণ আর্জি জানিয়েছেন তাঁর সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *