BRAKING NEWS

গ্রাম ত্রিপুরার দিকে সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে নজর দিতে হবে ঃ মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৯ জানুয়ারি৷৷ রাজ্যের ক্রীড়া জগতের মানচিত্রে যুক্ত হলো আরও একটি পালক৷ আজ দুপুরে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে

মঙ্গলবার আগরতলায় এনএসআরসিসি’তে ইন্ডোর স্টেডিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ ছবি ঃ নিজস্ব৷

মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এন এস আর সি সি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন৷ এক সময় রাজ্যের হয়ে যারা বিভিন্ন খেলার মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তারা যেমন এই অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকতে হাজির হয়েছিলেন তেমনি দলে দলে ভিড় জমিয়েছিলো খুদে খেলোয়াড়রা যাদের চোখে একরাশ স্বপ্ণ৷ খেলার অঙ্গণে ত্রিপুরাকে আরও উঁচুতে তুলে ধরার প্রত্যয় এবং অঙ্গীকারও উচ্চারিত হয়েছে এই অনুষ্ঠান থেকে৷ এই স্টেডিয়াম দেখে নিজের উচ্ছ্বাস যেমন চাপে রাখতে পারেননি রাজ্যের সোনার মেয়ে দাপী কর্মকার তেমনি এই স্টেডিয়ামের প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন এক সময় লন টেনিসে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা জয়দীপ মুখার্জী৷

স্টেডিয়ামটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেন, যে উৎকৃষ্টমানের ক্রীড়া পরিকাঠামো তেরী হলো তার সদ্ব্যবহার করে ভবিষ্যতে আমরা যাতে আরও সফল ক্রীড়াবিদ ত্রিপুরা থেকে ভারতবর্ষকে উপহার দিতে পারি তার প্রয়াস আন্তরিকভাবে জয়ী রাখতে হবে৷ তা করা না গেলে সমস্ত প্রয়াস অসম্পূর্ণ থেকে যাবে৷ এর জন্য আজ এই অনুষ্ঠান থেকে শপথ নিতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সারা রাজ্যেই ক্রীড়া পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে নানা ধরণের কাজ চলেছে৷ আরও কিছু নতুন কাজ হাতে নিতে হবে৷ এ প্রসঙ্গে আসাম রাইফেলস ময়দানের বিষয়টি উল্লেক করে তিনি বলেন, এই মাঠটিকে খেলাধূলার জন্য ব্যবহার করতে ক্রীড়াপ্রেমীদের দাবীর বিষয়টি বার বার কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টিতে নেওয়া হচ্ছে৷ কিন্তু নানা অজুহাতে এই মাঠটিকে ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না৷ এই মাঠটি পরিবর্তে বিকল্প হিসেবে আসাম রাইফেলস কর্তৃপক্ষকে আরও তিনটি বিকল্প মাঠ দেখানো হলেও তাদের কাছ থেকে কোনও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না৷ রাজ্য সরকার তাদের দাবী থেকে সরে আসবে না বলে দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই মাঠকে ব্যবহার করার দাবী ত্রিপুরার ক্রীড়াপ্রেমীদের দীর্ঘ দিনের৷

দশরথ দেব স্পোর্টস কমপ্লেক্সের উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই কমপ্লেক্সেটিকে আধুনিকমানের করে গড়ে তোলার জন্য ও এন জি সি’র সঙ্গে কথা হয়েছে৷ এই স্টেডিয়ামটি নির্মাণে ২৫০ কোটি টাকার মতো ব্যয় হবে৷ তিনি বলেন, ও এন জি সি যে টাকা দিতে সম্মত হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম৷ ও এন জি সিকে বলা হয়েছে কাজ শুরু হোক, রাজ্য সরকারও অর্থ দেবে৷ এ বিষয়ে কেন্দ্রের সহায়তাও চাওয়া হবে৷ কেন্দ্রীয় সরকার টাকা না দিলে রাজ্য সরকার তার সামর্থ অনুযায়ীই স্টেডিয়ামে নির্মাণ করবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই জায়গাতেই লন টেনিসের একটি আধুনিকমানের কমাপ্লেক্স গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, রাজধানীর পর জেলা সদর এবং এরপর মহকুমায় এই পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, খেলাধূলা হচ্ছে শিক্ষার অঙ্গ৷ শিক্ষার জন্যই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে৷ একইভাবে জোর দেওয়া হয়েছে সংসৃকতি চর্চার উপরও৷ এক সময় এই রাজ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিকাঠামোর অভাব থাকলেও এখন তা নেই৷ তিনি বলেন, আমাদের প্রশিক্ষকদের মণপ্রাণ ঢেলে দিয়ে সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করতে হবে৷ দীপা কর্মকার, বিশ্বেশ্বর নন্দীতেই আমরা থেমে থাকতে চাই না৷ রাজ্যকে খেলাধূলার ক্ষেত্রে উপরের দিকে তুলে দরার জন্য ৬টি ইভেন্টকে বেছে নেওয়া হয়েছে৷ যোগাসনে ত্রিপুরা এই মুহুর্তে ভারতের পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে রয়েছে৷ তিনি বলেন, গ্রাম ত্রিপুরার দিকে সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে নজর দিতে হবে৷ ওই সমস্ত জায়গায় অনেক সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে৷ প্রশিক্ষকদের ছেলে মেয়েদের তাদের সন্তানের মতো যত্ন নিতে হবে৷ মাঠে যার যা দায়িত্ব তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে সমস্ত প্রয়াস সার্থক হবে৷

সভাপতির ভাষণে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের মন্ত্রী সহিদ চৌধুরী বলেন, সারা রাজ্যে খেলাধূলার পরিকাঠামো উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে৷ একই সঙ্গে গ্রামে যে সমস্ত প্রতিভা চড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাদের তুলে এনে ভালো খেলোয়াড় তৈরি করার  জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার দিকে নজর দেওয়া হয়েছে৷ দীপা কর্মকার ছাড়া অন্য খেলোয়াড়রাও যাতে রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে সেজন্য প্রশিক্ষকদের বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে৷

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আগরতলা পুর নিগমের মেয়র ড প্রফুল্লজিৎ সিনহা বলেন, আগরতলা শহরের উন্নয়নের মানচিত্রে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে এই স্টেডিয়াম৷ পর্যটকদের দ্রষ্টব্য স্থানগুলির মধ্যে এই স্টেডিয়ামেটিও জায়গা করে নিতে পারে বলে তিনি মনে করেন৷ আন্তর্জাতিক অঙ্গণে রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করা সোনার মেয়ে দীপা কর্মকার এই স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মনে হচ্ছে স্বপ্ণের জায়গায় দাড়িয়ে আছে৷ আন্তর্জাতিকমানের যে কোনও স্টেডিয়ামের সঙ্গে এই স্টেডিয়ামটি সমতুল্য৷ দীপার প্রশিক্ষক দ্রোণাচার্য পুরস্কার প্রাপ্ত বিশ্বেশ্বর নন্দী বলেন, আজ খুবই আনন্দের দিন৷ এখন সবার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে৷ রাজ্যের আরেক অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত জিমন্যাস্ট মন্টু দেবনাথ বলেন, আজ মনে হচ্ছে সত্যিই স্বপ্ণ পূরণ হলো৷ প্রাক্তন টেনিস খেলোয়াড় জয়দীপ মুর্খার্জী এই স্টেডিয়ামটির ভূয়সী প্রশংসা করে রাজ্য থেকে আরও দীপা কর্মকার তৈরী করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানান৷

ত্রিপুরা ক্রীড়া পর্ষদের সচিব দিলীপ চক্রবর্তী বলেন, সবার দায়িত্ব থাকবে খেলাধূলার উন্নয়নের জন্য যে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে তা রক্ষা করার৷ ক্রীড়া পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান বিমল রায় চৌধুরী বলেন, এই পরিকাঠামো সঠিকভাবে ব্যবহার করা গেলে রাজ্যের মুখ অরও উজ্জ্বল হবে৷ পর্ষদের প্রাক্তন সচিব কমল সাহা এই পরিকাঠামোর সদ্ব্যবহার করার জন্য খেলোয়াড়দের প্রতি আহ্বান জানান৷ অনুষ্ঠানে এছাড়া বক্তব্য রাখেন পূর্ত দপ্তরের মুখ্য বাস্তুকার অসিত ভৌমিক৷ স্বাগত ভাষণে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের সচিব সমরজিৎ ভৌমিক জানান, এই স্টেডিয়ামটি গড়ে তুলতে ৪৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে৷ ৩৭২৬ স্কোয়ার মিটার এলাকা নিয়ে পুরো কমপ্লেক্সটি গড়ে উঠেছে৷ খেলার মাঠটির মোট আয়তন হচ্ছে ১২০০ স্কোয়ার মিটার৷ এতে মোট ২১০০ জন দর্শক বসে খেলা দেখতে পারবেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *