ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে মহিলাকে গুলি করে হত্যা বিএসএফ জওয়ানের, উত্তপ্ত ধনপুর সীমান্ত

muder photoনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ জুলাই৷৷ ধর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়ে এক মহিলাকে গুলি করে হত্যা করল বিএসএফ জওয়ান৷ ঘটনা সোনামুড়া মহকুমার ধনপুর সীমান্তে৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র গোটা সীমান্ত এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷ পুলিশের নজরদারী বাড়ানো হয়েছে৷ থানায় মামলা ও পাল্টা মামলা করা হয়েছে৷
সংবাদে প্রকাশ শুক্রবার দুপুরে ধনপুরের সীমান্ত গ্রাম তারাপুকুরের মহিলা মায়া খাতুন গরু চড়াতে মাঠ যান৷ সেখানে তখন সীমান্তে পাহাররত বিএসএফ হাবিলদার রামপাল সিং মায়া খাতুনকে কুপ্রস্তাব দেয়৷ মায়া রামপালের ইশারায় সায় না দেওয়ায় তাকে ঝাঁপটে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা করে৷ মায়া রামপালের হাত থেকে বাঁচার জন্য চিৎকার শুরু করে৷ এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সঙ্গে সঙ্গেই রামপাল তার সার্ভিল রাইফেল থেকে গুলি ছুড়তে থাকে৷ একটি গুলি মায়া খাতুনের পেটে লাগে৷ সঙ্গে সঙ্গেই মায়া খাতুন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে৷ গুলির শব্দ শুনে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে৷ ততক্ষণে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রামপাল সিং দ্রুত তার বলেরঢেপা ক্যাম্পে চলে আসে৷ সে বিএসএফ ১৪৫ নম্বর ব্যাটেলিয়ানে কর্মরত৷ মায়ার খুনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা সীমান্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সীমান্তে ছুটে যায় পুলিশ৷ মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী৷ জানা গিয়েছে উত্তেজিত জনতা বিএসএফ ক্যাম্পে হামলা চালায়৷
এদিকে, বিএসএফের তরফে গ্রামবাসীদের অভিযোগ খন্ডন করা হয়েছে৷ বিএসএফ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য এদিন দুপুরে মায়া খাতুন সহ আরো কয়েকজন মিহলা পাচার সামগ্রী নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করে৷ তখন কর্তব্যরত বিএসএফ হাবিলদার রামপাল সিং মায়া খাতুন সহ অন্যান্য মহিলাদের সীমান্ত অতিক্রম করতে বারণ করে৷ তারা বিএসএফ জওয়ানদের কথা কোন কর্ণপাত করেনি৷ এরপর জওয়ানরা তাদেরকে আটাকানোর চেষ্টা করলে মহিলারা উত্তেজিত হয়ে সংঘবদ্ধ ভাবে রামপালকে আক্রমণ করে৷ তাদের হাতে ছিল দা ও লাঠি৷ প্রমিলা বাহিনীর রোষাণল থেকে বাঁচাতে হাবিলদার রামপাল এলোপাথারি গুলি চালাতে থাকে৷ তার সার্ভিস রাইফেল থেকে পরপর ছয় রাউন্ড গুলি ছুড়ে রামপাল৷ একটি বুলেট মায়া খাতুনের পেট এফোড় ওফোড় হয়ে বেরিয়ে যায়৷ ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে মায়া৷ বুলেট বিদ্ধ হওয়ায় মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়৷
এদিকে, গ্রামবাসীরা বিএসএফের এই বক্তব্য মানতে নারাজ৷ তারা রামপালের বিরুদ্ধে থানায় মায়া খাতুনকে ধর্ষণের চেষ্টা ও খুনের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করে৷ অন্যদিকে বিএসএফের পক্ষ থেকেও পাল্টা মামলা করা হয়েছে মায়া খাতুনকে পাচারকারী আখ্যা দিয়ে৷ মামলা ও পাল্টা মামলা নিয়ে পুলিশ রীতিমতো ধন্দে পড়ে গিয়েছে৷ নিহত মায়া খাতুনের পরিবার ও গোটা গ্রামের মানুষ বিএসএফ জওয়ান রামপালকে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য দাবী জানিয়েছেন৷ যদিও রাতে খবর লেখা পর্যন্ত পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেনি৷ এদিকে, পুলিশ মায়া খাতুনের মৃতদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় ময়না তদন্তের জন্য৷ ময়না তদন্তের পর মৃতদেহ নিকটাত্মীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে৷ এই ঘটনার পর গোটা ধনপুর সীমান্ত এলাকা উত্তেজনায় টগবগ করছে৷ পুলিশ ও টিএসআর জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে সীমান্ত গ্রামে৷