পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের পরেই ত্রিপুরার রাজনীতিতে ঝড় বহিয়া যাইতে পারে৷ ঝড় তুফান যেমন একদিকে ধবংস করে, ভাঙ্গিয়া তছনছ করিয়া দেয় অন্যদিকে সব গ্লানি, কালিমা ধুইয়া মুছিয়া সাফ করিয়া দেয়৷ পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসকে হঠাইতে বাঘে গরুতে একঘাটে জল খাইতেছে৷ নির্বাচন কমিশনও অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসনিক রদবদল ঘটাইতেছে৷ নারদের ভিডিও ফুটেজ নিয়া বিরোধীরা আসর গরম করিয়াছেন৷ এই নির্বাচনে শেষ পর্য্যন্ত ফলাফল কি দাঁড়াইবে তাহাই বড় কথা৷ সিপিএমের সঙ্গে এই মিতালী যে ত্রিপুরায় কংগ্রেসকে নিশ্চিহ্ণ করিয়া দিবে সে বিষয়ে বোধহয় কোনও সন্দেহ নাই৷ ত্রিপুরায় প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এখন একেবারেই সাইনবোর্ড সর্বস্ব হইয়া পড়িবে? রাজ্যের সর্বত্রই কংগ্রেস কর্মীরা এতদিনে বুঝিয়াছেন, হাইকমান্ড তলে তলে, এতকাল কিভাবে প্রতারণার রাজনীতি চালাইয়া গিয়াছে৷ পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের প্রচারে নামিয়া কংগ্রেস নেতারা সিপিএম দলের কাস্তে হাতুড়ি তাঁরা মুদ্রিত কাপড় গলায় জড়াইয়া ফেলিয়াছেন৷ তৃণমূলকে হঠাইতে গিয়া এমন মিতালী কি সত্যিকারের কংগ্রেসীরা মানিয়া নিতে পারিবে? আজ ত্রিপুরায় এই প্রশ্ণই ঘুরপাক খাইতেছে৷ রাজ্যের বেশ কয়েকজন নেতা আগেভাগেই বিজেপি’র ঘরে আশ্রয় নিয়াছেন৷ কিন্তু এই দলের প্রচন্ড দূর্বল প্রদেশ নেতৃত্ব দলকে জনমনে আস্থা ও বিশ্বাস নিয়া যাইতে পারিবে না তাহা জোর দিয়া বলা যায়৷ কংগ্রেসের জনবিচ্ছিন্ন নেতারাই এই গেরুয়া আশ্রয় নিয়া দেখা স্বপ্ণও যে এখনই চুরমার হইয়া যাইতেছে তাহা আজ ভাবিবার বিষয়৷ বিজেপি প্রদেশ সভাপতি আর এস এস এর একনিষ্ট সৈনিক৷ তাহার উপর আর এস এস এর পূর্ণ মদত থাকিবারই কথা৷ তবু, এ রাজ্যে বিজেপিতে জনঢল নাই৷ মাটির কাছাকাছি না গিয়া এখন আর নেতা হওয়া যায় না৷
বিজেপির পরীক্ষাও প্রায় সম্পন্ন৷ কংগ্রেসের জায়গা নিতে পারিবে কিনা সন্দেহ৷ এই অবস্থাতে বাম বিরোধী মানসিকতায় বর্ধিত মানুষ কোথাই দাঁড়াইবে? কোন্ দলের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখা যাইতে পারে? এই দুদুল্যমানতার মাঝেই রাজনীতির চক্র ঘুরপাক খাইতেছে৷ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে কংগ্রেস সিপিএম মিতালী হইয়াছে৷ ত্রিপুরার অবাম অংশের মানুষকে এখন অপেক্ষা করিতেই হইবে৷ পশ্চিমবঙ্গে যদি তৃণমূল কংগ্রেস ব্যাপক আসন নিয়া ফিরিয়ে আসিতে পারে তাহা হইলে শুধু ত্রিপুরা নহে পশ্চিমবঙ্গেও কংগ্রেস মুছিয়া যাইবে৷ শতবর্ষ প্রাচীন এই দলের এই পরিণতির কথা তো কংগ্রেসের তাবড় কর্মীরা ভাবিতে পারেন নাই৷ কংগ্রেসের বর্তমান বিধায়কদের বড় অংশই দল ছাড়ার ব্যাপারে মনস্থির করিয়া ফেলিয়াছেন৷ কংগ্রেসে থাকিলে তাহাদের ভবিষ্যত যে একেবারে অন্ধকার তাহা স্পষ্ট হইয়া গিয়াছে৷ পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস সিপিএম জোট ভাল করিলেও এরাজ্যে কংগ্রেসের ভাগ্য প্রসন্ন হইবে না৷ আর তৃণমূলের জয়জয়কার হইলে তো ত্রিপুরায় মমতাই প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হইলে আশ্চর্য্যের হইবে না৷ রাজনীতির এই চুলচেরা হিসাব চালাইয়া এরাজ্যের তাবড় কংগ্রেস নেতারা একেবারেই বিমর্ষ, বিধবস্ত৷ তাই, ত্রিপুরার রাজনীতির ভবিষ্যত পরিণতি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলই বলিয়া দিবে৷ রাজনীতির ক্ষেত্রে ত্রিপুরার মানুষ এখন আশা নিরাশার দোলায় আছেন৷ অস্থির রাজনীতি দেশের বা রাজ্যের ভাগ্যকে বিড়ম্বিত করে৷ মনে হয়, সেই পথেই রাজ্য রাজনীতির গতিমুখ তৈরীর অপেক্ষায় আছে৷
2016-03-20