নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৮ মার্চ৷৷ এক বছরে মাত্র ৬৪ লক্ষ টাকা ঘাটতি কমাতে সক্ষম হয়েছে রাজ্য সরকার৷ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি দেখানে হয়েছে ১৮৮ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা৷ যেখানে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঘাটতি দেখানো হয়েছিল ১৮৯ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা৷ শুক্রবার অর্থমন্ত্রী তপন চক্রবর্তী রাজ্য বিধানসভায় ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের জন্য ১৫২৪৬৫২ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছেন৷ এতে ঘাটতি দেখানো হয়েছে ১৮৮৫৪ কোটি টাকা৷ বাজেটে নতুন কোন করের প্রস্তাব করা হয়নি৷ ফলে, ব্যয় সংকোচ, আরো ভালো কর ব্যবস্থাপনা এবং আয়ের আভ্যন্তরীণ উৎসগুলিকে ব্যবহারের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করতে হবে বলে অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট ভাষণে উল্লেখ করেছেন৷ এদিকে, ২০১৫-১৬ সালের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দের তুলনায় এবারের ব্যয় বরাদ্দের বৃদ্ধির হার ১৭৩৪ শতাংশ৷ তবে, স্বরাষ্ট্র বাদে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত সহ অন্য সমস্ত দপ্তরে গত বছরের তুলনায় এবছর বরাদ্দ কমানো হয়েছে৷
এদিকে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গ্রামোন্নয়ন, পঞ্চায়েত এবং কৃষিতে গত বছরের তুলনায় বরাদ্দ কমানো হয়েছে৷ রাজ্য সরকার কৃষি বিপ্লবের ঢোল পেটালেও গত বছর যেখানে ৬৫২ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল সেই জায়গায় তা কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ শতাংশ৷ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও ভগ্ণ দশা উদ্ধারে তেমন কোন দিশা পরিলক্ষিত হয়নি বাজেটে৷ গত বছর স্বাস্থ্য খাতে ৫৫৬ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল৷ এবছর মাত্র ৪৭১ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের জন্য৷ এদিন বাজেট ভাষেণে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে অর্থ দপ্তর ছাড়া সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়ী, সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা সহ শিক্ষা দপ্তরের জন্য৷ এই দপ্তরের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৮৮২ শতাংশ৷ অথচ গত বছর এই দপ্তরের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৯৫৪ শতাংশ৷ তাতে এবছর ০৭২ শতাংশ অর্থ কম বরাদ্দ রাখা হয়েছে এই দপ্তরের জন্য৷ এছাড়াও গ্রামোন্নয়ন এবং পঞ্চায়েত দপ্তরেও বরাদ্দকৃত অর্থ গত বছরের তুলনায় কম রাখা হয়েছে এবছর৷ বাজেটে দেখা গিয়েছে এবছর গ্রামোন্নয়ন এবং পঞ্চায়েত দপ্তরের জন্য ১৪৬০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে৷ কিন্তু, গত বছর এই দুটি দপ্তরের জন্য ১৫৩৭ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল৷ এবছর স্বরাষ্ট্র দপ্তরের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ গত বছরের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে৷ এবারের বাজেটে রাখা হয়েছে ৮২১ শতাংশ অর্থ স্বরাষ্ট্র দপ্তরের জন্য৷ গত বছর এর পরিমাণ ছিল ৭৫৪ শতাংশ৷ এদিকে, পূর্ত্ত দপ্তরেও বরাদ্দকৃত অর্থ গত বছরের তুলনায় এবছর কম রাখা হয়েছে৷ এবারের বাজেটে ১০২৭ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে পূর্ত্ত দপ্তরের জন্য যেখানে গত বছর বারদ্দ করা হয়েছিল ১১১৭ শতাংশ৷
অর্থমন্ত্রী আজ যে বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছেন তাতে পরিকল্পনা বহির্ভূত ব্যয় দেখানো হয়েছে ৮৬৩১৫৯ কোটি টাকা৷ ৬৬১৪৯৯৩ কোটি টাকা ধরা হয়েছে পরিকল্পনা খাতে৷ ২০১৫-১৬ সালের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দের তুলনায় বৃদ্ধির হার ৯৪৭ শতাংশ৷ ২০১৬-১৭ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে আয় ব্যয়ের যে চিত্র তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী তাতে রাজ্যের নিজস্ব কর রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১৪৩৯৯৮ কোটি টাকা৷ গত বছরে সংশোধিত বাজেট বরাদ্দের তুলনায় বৃদ্ধির হার ৮৮৯ শতাংশ৷ ২০১৬-১৭ সালে রাজ্যে কর বর্হিভূত রাজস্ব ধরা হচ্ছে ২৯৫১৪ কোটি টাকা, যা গত বছরের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দের তুলনায় বৃদ্ধির হার ৩৮৯ শতাংশ৷ কেন্দ্রীয় করের অংশ ধরা হচ্ছে ৪২৯৯০০ কোটি৷ গত বছরের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দের তুলনায় বৃদ্ধির হার ২৫০৯ শতাংশ৷
অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার আশা করছে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে নন প্ল্যান গ্যাপ গ্রান্টে ১০৮৯০০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে৷ ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে পাওয়া গেছে ১০৮৯০০ কোটি টাকা৷ কেন্দ্রীয় করের অংশ ছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে সেন্ট্রাল ট্রান্সফার খাতেত ৬৮৫১৮৬ কোটি টাকা প াওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ ওপেনিং ব্যালেন্সের সমন্বয় ছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে প্রস্তাবিত বাজেটে মোট প্রাপ্তি দেখানো হয়েছে ১৪৪৫৭৯৮ কোটি টাকা৷ মোট ঋণ দেখানো হয়েছে ১৫৭০০০ কোটি টাকা৷ এর মধ্যে খোলা বাজার থেকে সংগৃহীত ঋণ ১০০৩০০ কোটি টাকা এবং নিগোসিয়েটেড লোন ২০০০০ কোটি টাকা৷ কেন্দ্র থেকে পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে সহায়তা ধরা হয়েছে ১২৮০৫০ কোটি টাকা৷ ২০১৫-১৬ সালের সংশোধিত বাজেটে এই পরিমাণ ছিল ১২৫৭৬৫ কোটি টাকা৷ ২০১৬-১৭ সালের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে তাতে বেতন খাতে ২৮৩৩ শতাংশ, পেনশন যাতে ৮০০ শতাংশ, ঋণ পরিশোধ খাতে ৩৯৮ শতাংশ, সুদ দেবার খাতে ৬৫৬ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ৫৩১৩ শতাংশ ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে৷
2016-03-19