আজ থেকে সাতদিন সীমান্ত এলাকায় সম্পূর্ণ লকডাউন

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/ কমলপুর/ সাব্রুম/ কৈলাসহর/ চড়িলাম, ১৬ জুলাই৷৷ শুক্রবার থেকে সীমান্ত এলাকায় কার্যকর হচ্ছে পুরোপুরি লকডাউন৷ রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুসারে গ্রামীণ এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এক কিলোমিটার দূরে শুক্রবার থেকে ১ সপ্তাহের জন্য পুরোপুরি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে৷ শহর এলাকায় সীমান্তবর্তী আধা কিলোমিটারের মধ্যে পুরোপুরি লকডাউন কার্যকর হচ্ছে৷ লকডাউন পুরোপুরি মান্য করার জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বসবাসকারী সকল জনগণের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে৷


উল্লেখ্য করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বিশেষ করে রাজ্যের আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকায় ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে৷ এই সব বিষয় পর্যালোচনা করার পরই রাজ্য সরকার আপাতত সীমান্ত এলাকায় ১ সপ্তাহের জন্য লকডাউনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে৷ প্রয়োজন বোধে লকডাউনের সময় সীমা আরও বাড়তে পারে৷ সীমান্ত এলাকায় লকডাউন যাতে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণ সঠিকভাবে পালন করেন সেইজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ বিএসএফ-এর পাশাপাশি পুলিশ টি এস আর সহ কেন্দ্রীয় বাহিনীকেও নিরাপত্তার কাজে নামানো হবে৷ লকডাউনের নিয়মকানুন অমান্য করা হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷ তবে জরুরিকালীন পরিষেবা অব্যাহত থাকবে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে৷


কোভিড-১৯ মহামারি সংক্রমণ প্রতিরোধে আগামীকাল থেকে সাতদিনের জন্য কমলপুর মহকুমার সীমান্ত এলাকায় সম্পর্ণ লকডাউন কার্যকর করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে মহকুমা প্রশাসন৷ রাজ্য সরকারের নির্দেশানুযায়ী সীমান্তবর্তী নগর পঞ্চায়েত এলাকায় দু’টি স্থানে এবং দুর্গা চৌমুহনী ব্লক এলাকার তিনটি প’ায়েত এলাকায় জায়গা চিহ্ণিত করে গেইট বসানো হবে৷ এই জায়গাগুলি হল মোহনপুর পঞ্চায়েতের নিকটবর্তী টিলাগাও, কালিবাড়িস্থিত মাঠের সন্নিকটে এবং মরাছড়া, বালিগাও ও মলয়াতে৷ সাতদিনের লকডাউন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সচেতনতামূলক প্রচার করা হচ্ছে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে৷ মহকুমা শাসকের কার্যালয় থেকে এই সংবাদ জানানো হয়েছে৷

কোভিড-১৯ মহামারি সংক্রমণ প্রতিরোধে রাজ্য সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী সারা রাজ্যের সাথে আগামীকাল সকাল ৭টা থেকে সাব্রুম মহকুমার সীমান্ত এলাকায় ৭ দিনের সম্পর্ণ লকডাউন শুরু হচ্ছে৷ তথ্য ও সংস্ক’তি দপ্তরের উদ্যোগে আজ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা সাবম, দৌলাবাড়ি, বজেন্দ্রনগর, মনুঘাট, আমলীঘাট, কাঁঠালছড়ি, বৈষ্ণবপুর সহ সমগ্র সীমান্ত এলাকায় মাইক যোগে প্রচার করা হয়েছে৷ লকডাউন চলাকালীন সময় সীমান্ত এলাকার ১ কিলোমিটারের মধ্যে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কোনও লোকজন চলাচল করতে পারবেন না, সমস্ত রকম সরকারি, বেসরকারি অফিস, ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকান, হোটেল, রেস্তোরা বন্ধ থাকবে৷ এছাড়াও সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার, ধর্মীয় স্থান, ধর্মীয় জমায়েত বন্ধ থাকবে৷ সব রকম সামাজিক, রাজনৈতিক, খেলাধূলা, বিনোদনমূলক, শিক্ষামূলক, সাংস্ক’তিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সভা সমিতি বন্ধ থাকবে৷ তবে ঔষুধ সহ অত্যাবশকীয় দোকান ও জরুরী পরিষেবা লকডাউনের আওতার বাইরে থাকবে৷ বন্ধ রাখা হচ্ছে সমস্ত গণ পরিবহণ ও ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল৷ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পড়া এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে৷ আগামীকাল সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৭ দিন পর্যন্ত এই লকডাউন কার্যকর হবে৷ মহকুমা প্রশাসন থেকে এই সংবাদ জানানো হয়েছে৷


করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ৫টা পর্যন্ত ভারতীয় ফৌজদারী দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারার অধীনে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷ পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক এক আদেশে জানিয়েছেন রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ৫টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ জারি থাকবে৷ এই বিধিনিষেধ আগামী ৩১ জলাই পর্যন্ত বলবৎ থাকবে৷

জেলাশাসকের আদেশে বলা হয়েছে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় পাঁচ ও ততোধিক ব্যক্তির জমায়েত করা যাবে না৷ সামাজিক, রাজনৈতিক, ক্রীড়া বিনোদন, শিক্ষা সংক্রান্ত, সাংস্ক’তিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না৷ সিনেমা হল, জিমন্যাসিয়াম, সুুইমিং পুল, বিনোদন পার্ক, মিলনায়তন প্রভ’তি চালু করা যাবে না৷ কনটেইনমেন্ট জোন ছাড়া এবং পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত ধর্মীয় স্থান বা উপাসনা কেন্দ্রে স্বল্প সংখ্যক মানুষকে অনুমতি দেওয়া হবে৷ আগামী ৩১ জলাই, ২০২০ পর্যন্ত সব সুকল, কলেজ, শিক্ষা এবং কোচিং কেন্দ্র প্রভ’তি বন্ধ থাকবে৷ হোটেল, রেস্টুরেন্ট, অন্যান্য আবাসিক পরিষেবা এস ও পি সহ অনুমোদন করা হবে৷ লাইসেন্স সহ আগেয়া’ বা যে কোনও ধরণের অ’ বহন করা নিষিদ্ধ৷ রাত ৯ টা থেকে পরদিন সকাল ৫ টা পর্যন্ত বিনা প্রয়োজনে মানুষের চলাফেরা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ৷ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত রাত ৭টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত নৈশকালীন কার্ফু বলবৎ রয়েছে৷ জরুরী পরিষেবা যেমন, শিল্প সংস্থায় বিভিন্ন শিল্পের কাজ, রাজ্য এবং জাতীয় সড়কে পণ্য ও যাত্রী চলাচল, পণ্য উঠানো নামানো, রেল, বিমান এবং বাসে আসা যাত্রীদের গন্তব্যে যেতে পারবেন৷ কাজের স্থানে মুখে আচ্ছাদন/মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক এবং এগুলি পর্যাপ্ত মজত রাখতে হবে৷ প্রকাশ্যে থুতু ফেলা এবং প্রাব করা দণ্ডনীয়৷ দোকানে ক্রেতাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং দোকানে একসঙ্গে পাঁচ জন থাকতে পারবেন না৷ আদেশে বলা হয়েছে আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷


কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে উত্তর জেলার জেলাশাসক এক আদেশে ভারতীয় ফৌজদারী দণ্ডবিধি ১৯৭৩-র ১৪৪ ধারা অনুযায়ী সমগ্র উত্তর ত্রিপুরা জেলায় রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ৫টা পর্যন্ত এবং জেলার অন্তর্গত ধর্মনগর ও কা’নপুর মহকুমার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ২ কিলোমিটার এলাকায় সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত নৈশ কার্ফ জারি করেছেন৷ এই আদেশে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ঐ সময়ে মানুষের চলাচলের উপর নিষেধা’া আরোপ করা হয়েছে৷ নৈশ কার্ফ চলাকালীন সময়ে কেবলমাত্র বিভিন্ন সিফটে কাজ চলে এমন শিল্প ক্ষেত্র সমূহ, রাজ্য এবং জাতীয় সড়কে পণ্য ও লোক চলাচল, পণ্য লোডিং-আনলোডিং-র কাজ এবং বাস, ট্রেন, বিমানে করে যে সব যাত্রী গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে যাবেন তারাই ছাড় পাবেন৷ এই আদেশে আরও বলা হয়েছে সুুইমিং পুল, পার্ক, বিভিন্ন হল, অডিটোরিয়াম এবং এ ধরণের জায়গা ৩১ জলাই ২০২০ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে৷ বিভিন্ন বিদ্যালয়, কলেজ, শিক্ষা ও কোচিং ইনষ্টিটিউশন ৩১ জলাই ২০২০ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে৷ সামাজিক, রাজনৈতিক, খেলাধূলা, বিনোদনমূলক, সাংস্ক’তিক, ধর্মীয় এবং অন্যান্য বড় জমায়েতমূলক অনুষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে৷ রাজ্য সরকারের আগাম অনুমতি ছাড়া এ ধরণের অনুষ্ঠান করা যাবেনা৷ বিয়ের অনুষ্ঠানে ৫০ জনের বেশী এবং শেষক’ত্যের অনুষ্ঠানে ২০ জনের বেশী জমায়েত করা যাবে না৷ এই সমস্ত বিধিনিষেধ ৩১ জলাই ২০২০ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে৷ এই আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আই পি সি’র ১৮৮ ধারা অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
করোনা মোকাবিলায় সিপাহিজলা জেলার ২৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং নগর পঞ্চায়েতের একটি ওয়ার্ডে সম্পূর্ণ লকডাউন লাগু করা হয়েছে৷ তেমনি, মেলাঘরকে করোনা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বলে ঘোষণার চিন্তাভাবনা চলছে৷


এ-বিষয়ে সিপাহিজলার জেলাশাসক চন্দন কুমার জমাতিয়া জানান, বাংলাদেশ সীমান্তের ১ কিমি এলাকা জুড়ে ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে৷ নতুন করে আরও কিছু এলাকায় লকডাউনের আজ বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে৷ তাঁর কথায়, কাঠালিয়ায় ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত, বক্সনগরে ১৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং সোনামুড়া নগর পঞ্চায়েতের ১টি ওয়ার্ডে সম্পূর্ণ লকডাউনের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে৷
এদিন তিনি জানান, মেলাঘরে করোনা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে৷ তাঁর কথায়, মহকুমাশাসক এ-বিষয়ে সমস্ত দিক পর্যালোচনা করে প্রস্তাব পাঠাবেন৷ ওই প্রস্তাবের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷


প্রসঙ্গত, সিপাহিজলা জেলায় করোনা-র প্রকোপ সব থেকে বেশি৷ সম্প্রতি, বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ ফলে, এই অতিমারীর সাথে মোকাবিলায় প্রশাসন আরও কঠোর হবে বলেই মনে করা হচ্ছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *