নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৭ জুলাই৷৷ বহিঃরাজ্য থেকে আগত সকলের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ত্রিপুরা সরকার৷ মঙ্গলবার মন্ত্রিসভা স্বাস্থ্য দফতরের এই প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে৷ এর দ্বারা ট্রেন, বিমান এবং বাসযাত্রী সকলকেই পরীক্ষা করা হবে৷ পর্যায়ক্রমে করোনা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়ও ওই পরীক্ষা করা হবে৷ আজ সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এই খবর জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ৷ তাঁর কথায়, আগামী সোমবারের মধ্যেই বহিঃরাজ্য থেকে আগতদের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হবে৷ এর পরই করোনা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের পরীক্ষা করা হবে৷
তিনি বলেন, রেপিড অ্যান্টিজেন কিট দিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে৷ ৪০ হাজার কিট দিয়ে পরীক্ষা করা হবে৷ ইতিমধ্যে ১৫ হাজার কিট এসে গেছে৷ আরও ২৫ হাজার কিট আসবে৷ তাঁর বক্তব্য, ওই কিট-এর সহায়তায় ১-২ ঘণ্টার মধ্যে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল জানা সম্ভব হবে৷ তাই, আপাতত বহিঃরাজ্য থেকে আগত সকলের নমুনা পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হবে৷ তাঁর দাবি, আজ মন্ত্রিসভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিমানবন্দরের বাইরে একটি স্থানে সকল যাত্রীকে ঘণ্টা দুয়েকের জন্য রাখা হবে৷ সেখানেই রেপিড অ্যান্টিজেন কিট দিয়ে তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হবে৷ রিপোর্ট পজিটিভ আসলে হাসপাতালে এবং নেগেটিভ হলে ওই যাত্রীকে বাড়িতে ১৪ দিনের জন্য একান্তবাসে থাকতে হবে৷ তাঁর সাফ কথা, ত্রিপুরায় সমস্ত প্রবেশদ্বারে ওই কিট-এর সহায়তায় পরীক্ষা করা হবে৷
তিনি বলেন, ওই কিট ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে৷ তাই আগামী সোমবার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে৷ তাঁর দাবি, আগামী সপ্তাহ থেকে করোনা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ওই কিট দিয়ে পরীক্ষা করা হবে৷ তাঁর মতে, ত্রিপুরায় বর্তমানে ২৮টি করোনা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ৭৬৩৯ জনের বসবাস রয়েছে৷ অধিকাংশই গোমতি জেলায় অবস্থিত৷ তাছাড়া, বাকি রয়েছে সীমান্ত এলাকায়৷ তাই এ-বিষয়ে মন্ত্রিসভায় বিস্তৃত আলোচনায় সারা ত্রিপুরায় রেপিড অ্যান্টিজেন কীট দিয়ে পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷
মন্ত্রীর কথায়, বহিঃরাজ্যের যাত্রী, করোনা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দা ছাড়া অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করোনা আক্রান্তের চিকিৎসার সাথে যুক্তদের ওই কিট দিয়ে পরীক্ষা করা হবে৷ প্রসঙ্গত, গত ২৭ জুন থেকে ত্রিপুরায় আগত সমস্ত বিমান যাত্রীর নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে৷
সাংবাদিক সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, রাজ্যে বর্তমানে সক্রিয় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী রয়েছেন ৪৩০ জন৷ তিনি জানান, রাজ্যে বর্তমানে ফেসিলিটি কোয়ারেন্টাইনে ৩০০ জন এবং হোম কোয়ারেন্টাইনে ৪,৯১৩ জন রয়েছেন৷ আজ পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ৭৫,৬২১ জনের৷ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৭৪,২০৭ জনের৷ এদের মধ্যে রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে ১,৬৯৩ জনের৷ এই পজিটিভদের মধ্যে সুুস্থ হয়ে ছাড়া পেয়েছেন ১,২৪৮ জন৷ আজ পর্যন্ত রাজ্যের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুুস্থ হওয়ার হার ৭৩.৭২ শতাংশ৷ প্রতি ১০ লক্ষ জনসংখ্যায় রাজ্যে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৮,৫৬২ জনের৷ আজকের দিনে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১,৪৭৪ জনের৷ নমুনা পরীক্ষা চলছে ৮৫০ জনের৷ আজ ২৯ জন রোগী সুুস্থ হওয়ার পর ছাড়া পেয়েছেন৷ এরমধ্যে ১২ জন লালসিংমুড়া পি এইচ সি, ১১ জন আমবাসা পলিটেকনিক, ৩ জন এ জি এম সি এবং ৩ জন কুমারঘাট পি আর টি আই থেকে ছাড়া পান৷ শিক্ষামন্ত্রী জানান, আজ চুড়াইবাড়ি চেকপোস্ট দিয়ে ৫৬৩ জন রাজ্যে প্রবেশ করেছেন৷ তাদের মধ্যে ১৯৪ জন ট্রাক ড্রাইভার ৭৯ জন রোগী এবং ২৯০ জন সাধারণ নাগরিক৷ এছাড়া ৩৬৪টি গাড়ি আজ চুড়াইবাড়ি দিয়ে রাজ্যে প্রবেশ করেছে৷ এরমধ্যে ৪৯টি ট্রাক এসেছে হটস্পট এলাকা থেকে৷ এছাড়া দামছড়া দিয়ে এসেছেন ১৫ জন এবং গাড়ি এসেছে ৮টি৷ তিনি জানান, গতকাল যে ১১২ জন পজিটিভ রোগী পাওয়া যায় তারমধ্যে গোমতীর ৪১ জন, খোয়াইয়ের ৪০ জন, পশ্চিম জেলার ১৪ জন, সিপাহীজলার ৯ জন, ধলাইয়ের ৩ জন, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার ৩ জন, উত্তর ত্রিপুরা জেলার ১ জন এবং ঊনকোটি জেলার ১ জন রোগী রয়েছেন৷