করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সম্পূর্ণ লকডাউন রাজ্যে

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ জুলাই৷৷ করোনা-র সংক্রমণ প্রতিরোধে আগামীকাল ত্রিপুরায় সম্পূর্ণ লকডাউন-র সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ ৫ জুলাই রবিবার সকাল ৫টা থেকে ৬ জুলাই সকাল ৫টা পর্যন্ত সমগ্র রাজ্য সম্পূর্ণ লকডাউন থাকবে৷ লকডাউন চলাকালীন সময়ে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷ ওই নিয়ম উল্লঙ্ঘনে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ত্রিপুরা প্রশাসনের তরফে সতর্ক করা হয়েছে৷



সরকারি নির্দেশিকা মোতাবেক, জরুরী প্রয়োজন ছাড়া মানুষের চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে৷ সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শিল্প তার মধ্যে একমাত্র ক্রম চলমান প্রক্রিয়া ছাড়া, দোকানপাট, মুদির দোকান, সজি, মাছ মাংসের দোকান, সাপ্তাহিক বাজার বন্ধ থাকবে৷ তবে, শুধুমাত্র দুধ, শিশুখাদ্য ও ঔষধ বিক্রয় করা যাবে৷ আগামীকাল আন্ত:রাজ্য ও আন্তঃজেলা পরিবহন পরিষেবা বন্ধ থাকবে৷ সমস্ত ধর্মীয় স্থান জনসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে৷ এমনকি কোন ধর্মীয় জমায়েত করা যাবে না৷ এদিকে, সমস্ত সামাজিক, রাজনৈতিক, খেলাধুলা, বিনোদন, শিক্ষামূলক, সাংসৃকতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে নির্দেশ জারি হয়েছে৷



সরকারি নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, রাস্তাঘাটে তিন জনের অধিক লোকের জমায়েত হতে পারবে না৷ কৃষি, মৎস্য চাষ, পশুপালন, চা বাগান এবং বনায়ণের কাজ বন্ধ থাকবে৷  প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, নির্দেশিকা উল্লঙ্ঘন করলে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা আইন-২০০০ এবং আই পি এস সি-র ১৮৮ ধারায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷



এদিকে, রাজ্যবসীকে রবিবার ভোর পাঁচটা থেকে পরদিন ভোর পাঁচটা পর্যন্ত সম্পূর্ণ লকডাউন পালনের আহ্বান রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ শনিবার রাতে রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে এক ভিডিও বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একমাত্র অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা ছাড়া অন্যান্য সবকিছু এদিন বন্ধ থাকবে৷ সবাইকে অপ্রয়োজনে বাড়ি থেকে না বের হওয়ার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ একই সঙ্গে বাড়িঘরে যাদের বয়স্ক লোকজন রয়েছে তাদেরকে নিজের হাতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ জুস খাওয়ানোর পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷  তিনি বলেন এদিন যদি হাতের কাছে সেই ব্যবস্থাও না থাকে, তাহলে অল্প গরম জলে খানিকটা আদা বা তুলসী পাতা মিশিয়ে তাই যেন তুলে দেয়া হয় বয়স্কদের  সামনে৷ মুখ্যমন্ত্রী নিজেও তাঁর মাকে এদিন ফলের জুস খাওয়াবেন বলে উল্লেখ করেন৷ একই সাথে নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় তা শেয়ার করবেন৷ তিনি সবাইকে বলেন, তারাও যেন একই রকম ভাবে বয়স্কদের জুস খাওয়ানোর ছবি তুলে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন৷



রাজ্যে কেন একদিনের সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন বিগত মার্চ মাস থেকে কোন সময় জনতার কার্ফু, কোন সময় লকডাউন, কোন সময় লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ ৫ এপ্রিলের আগে ত্রিপুরাতে করোনা সংক্রমিত কোন রোগী ছিল না৷ পরবর্তী সময় রাজ্যের নাগরিক যারা বহি:রাজ্যে ছিলেন৷ তারা ফিরে আসার পর সেই সংখ্যা বেড়েছে৷  মুখ্যমন্ত্রী তথ্য দিয়ে বলেন শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত করোনা পজেটিভ রোগীর সংখ্যা ১৪৪১৷  তারমধ্যে ১১৯৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন৷ ত্রিপুরায় সুস্থ হওয়ার হার ৭৯.৫ শতাংশ৷ মৃত্যু ০.০৭৷ পার মিলিয়ন হিসেবে ন্যাশনাল রিকভার রেইটের প্রায় তিনগুণ বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান৷ একই সাথে সিপাহীজলা জেলার তিনটি ব্লককে কেন কনটেন্টমেন্ট জোন  ঘোষণা করতে হয়েছে তাও তুলে ধরেন৷ উত্তর ও গোমতী জেলাতেও পজিটিভ রোগীর সংখ্যা অনেকটাই বেশি রয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *