রাজ্যকে সিএএ ও এনআরসি সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন প্রত্যাহারের নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের

কলকাতা, ২৩ ডিসেম্বর (হি.স):  কলকাতা হাইকোর্টে বড়সড় ধাক্কা রাজ্য সরকারের । রাজ্য সরকারের তরফে নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির বিরোধিতা করে দেওয়া বিজ্ঞাপন প্রত্যাহারের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট । সোমবার এই নির্দেশ দেয় এই প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল ভাস্করণ নায়ার রাধাকৃষ্ণণ ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ ।

গত কয়েক দিন ধরে রাজ্য সরকারের তরফে একটি বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে টেলিভিশনে । যাতে দেখা যাচ্ছে রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র, কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা সহ রাজ্যের শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকরা রয়েছেন । এবং মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দিচ্ছেন, বাংলায় এনআরসি এবং ক্যাব হবে না । এদিন বিজ্ঞাপন দেওয়ার সাপেক্ষে রাজ্যকে যুক্তি দিতে বলা হয় । পাশাপাশি প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, পোর্টাল, সোশ্যাল মিডিয়া সব জায়গা থেকে বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট । যদিও রাজ্যের আডভকেট জেনারেল কিশোর দত্তের দাবি , বিজ্ঞাপন দেওয়ার অধিকার রয়েছে রাজ্যের । কিন্তু মামলাকারীর আইনজীবী স্মরজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘কোনও কেন্দ্রীয় আইনের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার বিজ্ঞাপন দিতে পারে না । এটা অন্যায় । ক্যাব অর্থাৎ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদের দুই কক্ষে পাশ হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি সই করে দিয়েছেন । সেটি এখন আইন হয়ে গেছে । রাজ্য সরকার কখনও এই ভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে আইনের বিরোধিতা করতে পারে না’।

তখন প্রধান বিচারপতি রাধাকৃষ্ণণ নির্দেশ দেন প্রিন্ট, টিভি, পোর্টাল, সমস্ত মাধ্যম থেকে এই বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করতে হবে । শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকারের নিজস্ব কোন ওয়েবসাইট বা পোর্টালে নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় প্রচার করা হয়, তাও প্রত্যাহার করতে হবে । অবিলম্বে রাজ্য জুড়ে সমস্ত এলাকায় ইন্টারনেট চালু করতে হবে ।  

নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় রাজ্য জুড়ে অশান্তির বিস্তারিত রিপোর্ট আজ সোমবারই চেয়েছিল হাইকোর্ট । কিন্তু আডভকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানান তারা আজ এই রিপোর্ট দিতে অপরাগ, তাদের সময় চাই । এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিস্তারিত রিপোর্টে রাজ্য জুড়ে পুলিশি নিস্ক্রিয়তা এবং অশান্তির ছবি বিস্তারিত থাকতে হবে ।   আগামী ৯ জানুয়ারি  ওই রিপোর্ট জমা দিতে বলেন প্রধান বিচারপতি।  

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির প্রতিবাদে  দেশের  বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ অব্যাহত । হিংসাত্মক আন্দোলনের জেরে বিপর্যস্ত স্বাভাবিক জনজীবন । আন্দোলনের জেরে কখনও ট্রেনে বাসে ভাঙচুর এমনকি অগ্নি সংযোগের মত ঘটনাও ঘটেছে । তার জেরে ক্ষতি হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি । পাশাপাশি নিজেদের সম্পত্তি রক্ষা করতে না পেরে এমনিতেই হাইকোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়েছে ভারতীয় রেল । এদিন প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল ভাস্করণ নায়ার রাধাকৃষ্ণণ ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকার, ভারতীয় রেল ও কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট তলব করে । পাশাপাশি আদালতের তরফ থেকে এনআরসি বিরোধিতায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য আলাদা করে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে । রেলকে বলা হয়েছে তাদের ক্ষয়ক্ষতির  পরিমান জানাতে ।
আজ প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল ভাস্করণ নায়ার রাধাকৃষ্ণণ ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে আরেকটি মামলায় আইনজীবী স্মরজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, গত ১৯ তারিখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রানী রাসমনি আভিনিউয়ের এক সভায় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রসঙ্ঘে যাবেন বলেছেন এবং  রাষ্ট্রসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে গণভোট চেয়েছেন । যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় থেকে তিনি এটা করতে পারেন না ।  

সওয়াল করতে গিয়ে মামলাকারীর আইনজীবী বলেন, ২০০৫ –এর ৪ আগস্ট লোকসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে মুসলিমরা এসে এই রাজ্যে জন সংখ্যা বাড়াচ্ছে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক । এবং এই নিয়ে সভায় আলোচনা হোক । লোকসভার তত্কালীন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় তাতে রাজি হন নি । তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই সঙ্ক্রান্ত কাগজপত্র স্পিকারের দিকে ছুঁড়ে মারেন । এবং কান্নায় ভেঙে পরেন । লোকসভা থেকে পদত্যাগও করেন । যদিও তখন তাঁর পদত্যাগ পত্র গৃহিত হয় নি । সেই সময় তিনি বিজেপির জোট সঙ্গী ছিলেন । এখন ১৪ বছর পরে ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো থেকে কেন্দ্রীয় আইনের বিরোধিতা করছেন । এর রহস্যও জানা দরকার । তখন প্রধান বিচারপতি রাধাকৃষ্ণণ আডভকেট জেনারেল কিশোর দত্তকে এই ব্যাপারেও রিপোর্ট দিতে বলেন ।

দুটি মামলারই পরবর্তী শুনানি আগামী ৯ জানুয়ারি । তাই আগামী ৯ তারিখ রাজ্য সরকার , কেন্দ্র সরকারও রেলকেও হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *