রাজ্যে সন্ত্রাস দমনের সাফল্যকে তুলনাহীন আখ্যা দিয়ে পুলিশকে আত্মসমীক্ষার পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ জানুয়ারি৷৷ ত্রিপুরা পুলিশের কাজকর্মে উৎফুল্ল মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মানিক সরকার৷ একই সঙ্গে তিনি পুলিশের

পুলিশ দিবস উপলক্ষে বুধবার আগরতলায় অরুণ্বুূতিনগর মাঠে কোচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ ছবি নিজস্ব৷

আত্মসমীক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেছেন৷ তিনি বলেন সাফল্যকে মূল্যায়ন করে আগামীদিনে কাজ করতে হবে পুলিশকে৷ পুলিশ বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে সমাজ শান্তি-সম্প্রীতি ও সুস্থিতি রক্ষা করা৷ এই দায়িত্ব তাদের কর্মজীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ আজ অরুন্ধতীনগরস্থিত পুলিশ লাইনে শহীদ মনোরঞ্জন দেববর্মা স্টেডিয়ামে পুলিশ দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার একথা বলেন৷ দুদিন ব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে আজ আয়োজিত হয় পুলিশ দিবস৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এ উপলক্ষে আয়োজিত রাজ্য পুলিশের বিভিন্ন বাহিনীর কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন৷ কুচকাওয়াজ-এ অংশ নেয় টি এস আর -এর ৬ টি বাহিনী, পশ্চিম জেলা পুলিশ, মহিলা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও হোম গার্ড বাহিনী৷

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার আরও বলেন, শান্তি-সম্প্রীতি ও সুস্থিতির স্থায়ীত্বের জন্য চাই উন্নয়ন৷ রাজ্যে এখন শান্তি-সম্প্রীতি ও সুন্তিস্থির পরিবেশ আছে বলেই রাজ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই উন্নয়ন ঘটছে৷ আজ এখানে পুলিশ পরিবারে যে সমস্ত মেধাবী ছেলে-মেয়েরা পুরসৃকত হলো তা সম্ভব হয়েছে রাজ্যে শিক্ষার সার্বিক বিকাশের জন্য৷ তিনি বলেন, রাজ্যে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ত্রিপুরা পুলিশ যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা তুলনাহীন৷ এখানে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক উল্লেখ করেছেন পাঞ্জাবের পরেই দেশের মধ্যে ত্রিপুরা দ্বিতীয় রাজ্য যে সন্ত্রাসবাদ দমনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে৷ এটা ঠিক, তবে ত্রিপুরা পুলিশ অন্যান্য আধা সাময়িক বাহিনীর সহায়তায় সন্ত্রাসবাদ দমনে যে সাফল্য পেয়েছে তা ব্যতিক্রমী ও তুলনাহীন৷ কারণ পাঞ্জাবের মতো আমাদের এখানেও পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর লোকক্ষয় হলেও সন্ত্রাসবাদ দমনে আমাদের পুলিশ বাহিনীকে পাঞ্জাবের মতো এতো শক্তি প্রয়োগ করতে হয়নি৷ এটা সম্ভব হয়েছে ত্রিপুরার শান্তিকামী মানুষের সহযোগিতায়৷ তা ভুলে গেলে চলবে না৷ জনগণকে বাদ দিয়ে পুলিশ নয়৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জনগণের পূর্ণ সহযোগিতা ছাড়া পুলিশের পক্ষে একা সাফল্য লাভ সম্ভব হবে না৷ তাই জনগণের সাথে পুলিশের নিবিড় সম্পর্ক থাকতে হবে৷ প্রয়াস কর্মসূচিকে আরো গতিশীল ও সক্রিয় করার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ সপ্তাহ ও পুলিশ দিবস উপলক্ষে ত্রিপুরা পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকেও শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান৷ তিনি বলেন, আজকের দিনটি পুলিশের কাছে আত্ম সমীক্ষারও দিন৷ রাজ্য পুলিশের যে সাফল্য তা গভীর ভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে৷ এই সাফল্যকে আগামী দিনেও ধরে রাখতে আরো আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে৷ পাশাপাশি যে সমস্ত দুর্বলতা আছে তাও চিহ্ণিত করতে হবে৷ এ সব দুর্বলতা দূর করার জন্য আগামী দিনে উদ্যোগ নিতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রীর তাদের আজকের কুচকাওয়াজের ভূয়সী প্রশংসা করেন৷ তিনি বলেন, রাজ্য পুলিশের বিভিন্ন বাহিনীর কুচকাওয়াজ ধারাবাহিক ভাবে উন্নতি হচ্ছে৷ অনুষ্ঠানে মুখ্য সচিব সঞ্জীব রঞ্জন পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান৷ তিনি পুলিশ দিবসের সফলতা কামনা করেন৷ স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশের মহানির্দেশক এ কে শুক্লা৷ তিনি বলেন, এই দিনটি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ রাজ্যে আইন-শৃংঙ্খলা রক্ষায় রাজ্য পুলিশ নিরলস ভাবে কাজ করছে৷ তিনি আশা প্রকাশ করেন পুলিশের কাজে সব সময়ে আমরা রাজ্যের জনগণের সহযোগিতা পাবো৷

অনুষ্ঠানে পুলিশ অব দি ইয়ার -২০১৭ এর পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় পশ্চিম ত্রিপুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কিশোর দেববর্মার হাতে৷ তাছাড়া শ্রেষ্ঠ বানিহীর পুরস্কার পেয়েছে টি এস আর নবম বাহিনী৷ শ্রেষ্ঠ থানার পুরস্কার পেয়েছে আমতলী থানা৷ দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেষ্ঠ থনার পুরস্কার পেয়েছে যথাক্রমে কমলপুর থানা ও কাঞ্চনপুর থানা৷ প্রয়াস কর্মসূচিতে শ্রেষ্ঠা থানার পুরস্কার পেয়েছে কুমারঘাট থানা৷ দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেষ্ঠা থানার পুরস্কার পেয়েছে বিলোনীয়া মহিলা থানা ও তেলিয়ামুড়া থানা৷ শ্রেষ্ঠ তদন্তকারী পুলিশ কর্মীর পুরস্কার পেয়েছেন এস আই রিম্পি দেববর্মা৷ দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেষ্ঠ তদন্তকারী অফিসারের পুরস্কার পেয়েছেন এস আই শ্রীকান্ত চক্রবর্তী ও এস আই বুদ্ধ দেববর্মা৷ তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ তাছাড়া অনুষ্ঠানে পুলিশ পরিবারের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের হাতেও পুরস্কার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পুরস্কার পেয়েছে প্রলয় ভৌমিক, রূপা দে, নবনীতা দাস, অনিকেত পাল, প্রীতম চক্রবর্তী, সাগরিকা দাস, ও রাকেশ দেবনাথ৷ অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ডি আই জি জি এম রাও৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *