গ্যাংটক, ১০ জুন: সিকিমের রাজ্যভুক্তির পঞ্চাশতম বার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের জাতীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া একটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ বিমানের নামকরণ করল ‘সিকিম’। এই উদ্যোগকে দেশজুড়ে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ও জাতীয় সংহতির প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিমানটির সামনে বড় অক্ষরে ‘সিকিম’ লেখা দৃশ্যমান থাকবে, যা একে কেবল পরিবহণের মাধ্যম নয়, বরং একটি উড়ন্ত শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে গৌরবান্বিত করছে।
সিকিমের মানুষের কাছে এই ঘটনা এক আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি করেছে। একটি ছোট, কিন্তু প্রাণবন্ত রাজ্য হিসেবে সিকিম এবার দেশের আকাশে ও কোটি মানুষের হৃদয়ে সম্মানজনক স্থান লাভ করেছে। গ্যাংটকের এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মা ভুটিয়া বলেন, “এটা শুধু একটি বিমান নয়, এটি স্বীকৃতি, এটি সম্মান, এটি পরিচয়। আমরা বহু বছর ধরে আমাদের মতো করে দেশের উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছি। আজ দেশ আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে।”
১৯৭৫ সালে ভারতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হওয়ার পর, সিকিম শিক্ষা, সামাজিক সম্প্রীতি ও পরিবেশ-সহায়ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক মডেল হিসেবে উঠে এসেছে। তাই এয়ার ইন্ডিয়ার এই বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্যকে একটি ‘সোনালী বার্ষিকী উপহার’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যা জাতীয় সংহতি ও ঐক্যের প্রতীক।
ভারতের মতো বিশাল ও বৈচিত্র্যময় দেশে, যেখানে প্রতিটি রাজ্য নিজস্ব ভাষা, ভূপ্রকৃতি ও সংস্কৃতি নিয়ে আলাদা পরিচয় বহন করে, সেখানে এই ধরনের পদক্ষেপ দেশের একতা ও অভিন্ন সত্তাকে সুদৃঢ় করে। পূর্বে এয়ার ইন্ডিয়া কেরালা, পাঞ্জাব ও গুজরাটের নামেও বিমান নামকরণ করেছে, তবে সিকিমের জন্য এই ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রায়শই বৃহৎ রাজ্যগুলির ছায়ায় থেকে জাতীয় আলোচনায় পিছিয়ে পড়া সিকিম এবার তার শান্ত প্রকৃতি ও সামাজিকভাবে সচেতন উন্নয়নের গল্প আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে। ‘সিকিম’ নামাঙ্কিত বিমানটি যখন আকাশে উড়ে চলে, তখন সেটি শুধু এক রাজ্যের নাম নয়—এটি তার মানুষ, তাদের স্বপ্ন, তাদের আত্মপরিচয়ের প্রতিনিধিত্ব করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বার্তাও বটে। দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় মূলস্রোতের বাইরে থেকে যাওয়া এই অঞ্চলের জন্য এটি একটি পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক, যেখানে ভারতের প্রতিটি কোণাকাঞ্চিকেও এখন গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।
এখন থেকে রানওয়ে থেকে আকাশে পাখা মেলবে ‘সিকিম’ নামাঙ্কিত বিমান। এটি শুধু একটি ধাতব দেহ নয়, বরং তা বহন করছে একটি রাজ্যের গর্ব, আত্মপরিচয় ও ভারতের ‘ঐক্যবদ্ধ বৈচিত্র্যের’ উজ্জ্বল বার্তা।