BRAKING NEWS

বিজেপিকে ‘ভাওতাবাজ’ দল আখ্যা দিয়ে বরাক উপত্যকার সার্বিক উন্নয়নে শিলচরে তৃণমূল-প্রার্থী রাধেশ্যামকে বিজয়ী করার আহ্বান মমতার

– ইন্ডি জোট সরকারকে নেতৃত্ব দেবে তৃণমূলহাজার পাঁচেকের সমাবেশে দাবি নেত্রীর

শিলচর (অসম)১৭ এপ্রিল ( হি.স.) : বিজেপি একটি ‘ভাওতাবাজ’ দল। এই দলকে বরাকের জলে বিসর্জন দেওয়ার ডাক দিয়ে উপত্যকার সার্বিক উন্নয়নে তৃণমূল কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী রাধেশ্যাম বিশ্বাসকে নিৰ্বাচিত করে সংসদে পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তফশিলি জাতি সংরক্ষিত শিলচর সংসদীয় আসনে আজ বুধবার তৃণমূল কংগ্রেস-প্রার্থী রাধেশ্যাম বিশ্বাসের পালে হাওয়া তুলতে শিলচর এসেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস-সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টাউন ক্লাব ময়দানে আয়োজিত দলীয় নির্বাচনী জনসভায় স্বভাবসিদ্ধভাবে পায়চারি করতে করতে প্ৰদত্ত ভাষণে বিজেপিকে বরাক নদীর জলে বিসর্জন দেওয়ার ডাক দিলেন মমতা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপি জনগণের ভাবাবেগের সুযোগ নিয়ে মিথ্যাচারীতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এবারের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী ফের প্রধানমন্ত্রী হলে সমগ্র দেশ বিক্রি করে দেওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন তৃণমূল-সুপ্রিমো। ‘আমাদের অধিকার, আমাদের স্বাভিমান, ২৬ এপ্রিল করবো প্রমাণ’, এই স্লোগান দিয়ে ভোটারদের বিজেপির বিরুদ্ধে সতর্ক হতে বলেন তিনি।

তৃণমূল নেত্রী বলেন, শিলচরের হ্যাভিওয়েট নেতা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষমোহন দেব তাঁকে (মমতা) প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। তাই তিনিও এই পরিবারকে অনেক ভালোবাসেন। আর ভালোবাসেন বলেই সন্তোষ-তনয়া সুস্মিতাকে দু-দুবার রাজ্যসভার সদস্য মনোনীত করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থনে। তিনি বরাক তথা অসমে বসবাসকারী প্রত্যেক শ্রেণির মানুষকে ঈদ ও বিহুর শুভেচ্ছা জানিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে প্রকারান্তরে কটাক্ষ করে বলেন, অসমিয়া, মণিপুরি, নাগা প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীকে সম্বোধন করার প্রাথমিক জ্ঞান আছে। মোদীকে খোঁচা দিয়ে বলেন, টেলি প্রিন্ট দেখে কথা বলেন মোদী। ‘ময় অসমিয়া বুঝি পাঁও, কিন্ত কথা বলতে একটু অসুবিধে হতে পারে।’

বিহু ও বাসন্তী পূজোর অভিনন্দন জানিয়ে মমতা বলেন সন্তোষমোহনের মৃত্যুর পর অসমের পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু জনস্বার্থে তেমন উন্নয়ন ঘটেনি। তাই বরপেটা, লখিমপুর, কোকড়াঝাড় ও শিলচরে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে। চারটি আসনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে প্রার্থনা জানান তিনি।

মমতা বলেন, রেলমন্ত্রী থাকাকালে কামাখ্যা এক্সপ্রেস সহ উত্তরপূর্ব ভারতে রেলের আমূল পরিবর্তন করেছেন। সর্বধর্ম সমন্বয়ের মন্ত্রে উন্নয়নের কাজ করে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি মুখে সব-কা সাথ সব-কা বিশ্বাস ডায়ালগ দিলেও বাস্তবে দেশের জনগণের সঙ্গে চূড়ান্ত ভাওতাবাজি করছে বিজেপি সরকার।

‘এনআরসি, ক্যা, ডি ভোটার প্রভৃতির মাধ্যমে জনগণকে হয়রানি ও চরম দুর্ভোগের দিকে ঠেলে দিয়েছে বিজেপি। তৃণমূল কংগ্রেস একদিন দেশের ক্ষমতায় আসবে। ইন্ডি জোট-সরকারকে নেতৃত্ব দেবে তৃণমূল। তখন এনআরসি, ক্যা, ডি ভোটার প্রভৃতি নিয়ে জনগণকে আর যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে না। অসমের বাঙালি জনগণের পাশে সবসময় থাকবে তৃণমূল কংগ্রেস। বাঙালির সমস্যার সমভাগী হয়ে যাবতীয় দুর্ভোগের ইতি টানবে তৃণমৃল। ইউপি এবং গুজরাটে সাধারণ মানুষের রক্ত বয়েছে। বর্তমানে মণিপুরে রক্তের ধারা বইছে। হাহাকার পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার নীরব ভূমিকা পালন করছে। অসমের বাঙালি হিন্দু মুসলমান প্রত্যেকের সহাবস্থান ও সমন্বয়ে সার্বিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠা করতে চায় তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমল জিতলে এনআরসি, ইউনিফর্ম সিভিল কোড তুলে দেওয়া হবে। ডি সমস্যার ইতি টানা হবে। ভারতবর্ষকে জেলখানা বানিয়েছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ দশ লক্ষ পদ খালি রয়েছে। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার নিয়োগ দিচ্ছে না। বিজেপি জাতিগত হিংসা ছড়াতে ব্যস্ত, জাতি ও ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস মতুয়া, রাজবংশী, আদিবাসী, সংখ্যালঘু, তফশিল ভাতা, চা বাগান শ্রমিক, পার্বত্য উপজাতি প্রত্যেক শ্রেণির সমউন্নয়নে বিশ্বাস করে।’

বিজেপিকে দাঙ্গাবাজ, লুটতরাজ, ভাওতাবাজ আখ্যা দিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে সরব হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থী রাধেশ্যাম বিশ্বাসকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করার আহ্বান জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন বিজেপির বিরুদ্ধে একের পর এক কামান দাগলেও, এআইইউডিএফ নতুবা কংগ্রেস সম্পর্কে টু শব্দ করেননি মমতা।

এবার মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের গণতন্ত্র অর্থাৎ লোকতন্ত্রকে বিক্রি করে দেওয়া হবে বলে সতর্ক করেন মমতা। শিলচরের ভাষা আন্দোলনকে সবসময় সমর্থন করে পশ্চিমবঙ্গ। শিলচর তথা অসমের জনগণের ভাবাবেগকে সম্মান জানিয়ে পার্শ্ববর্তী রজ্য হিসেবে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

‘জয় বাংলা, জয় অসম’ ধ্বনি দিয়ে মমতা বলেন, এবার নির্বাচনে ট্রায়াল দিতে এসেছি। ফাইনাল খেলা বাকি আছে। খেলা হবে। তিনি এও বলেন, ‘আপনারা সরাসরি কিছু না দিলেও সুস্মিতাকে দুবার সাংসদ উপহার দিয়েছি। রাধেশ্যাম বিশ্বাসকে একবার সরাসরি জিতিয়ে দেখুন, আমি আপনাদের কী দিতে পারি।’ জোরদার দাবি নেত্রীর।

তৃণমূল কংগ্রেস-এর অসম প্রদেশ সভাপতি রিপুন বরা স্বাগত বক্তব্যে প্রথমে ঈদ ও বিহুর শুভেচ্ছা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘অগ্নিকন্যা’ আখ্যা দিয়ে বরাক তথা অসমের লাঞ্ছিত বঞ্চিত মানুষের পরিত্রাণের লক্ষ্যে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রীর নেতৃত্বে অগ্রসর হওয়ার জন্য সকলের কাছে আহ্বান জানান। সমগ্র দেশের সাধারণ জনগণের কাছে অগ্নিকন্যা হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে আরও শক্তিশালী করতে শিলচরের প্রার্থী রাধেশ্যাম বিশ্বাসকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করার অনুরোধ জানান রিপুন বরা।

শিলচরের প্রার্থী রাধেশ্যাম বিশ্বাস বলেন, এই নির্বাচন বরাকের জনগণের স্বাধিকার, স্বাভিমান ও আত্মসম্মানের লড়াই। বরাকে কোনও শিল্পপ্রতিষ্ঠান নেই। কাছাড় পেপার মিল বিক্রি করে দিয়েছেন মোদী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুবার করে সুস্মিতা দেবকে রাজ্যসভার সদস্য মনোনীত করেছেন। তাই এই অঞ্চলের শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং সর্বশ্রেণির মানুষের কল্যাণে তাঁকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান রাধেশ্যাম।

সাংসদ সুস্মিতা দেব বলেন, আগামী ২৬ এপ্রিলের লড়াই হচ্ছে অধিকারের লড়াই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় এ অঞ্চলের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে বিজেপিকে বরাকের জলে বিসর্জন দিয়ে তৃণমূল প্রার্থী রাধেশ্যাম বিশ্বাসকে বিজয়ী করতে আহ্বান জানান সুস্মিতা।

আদকের নির্বাচনী জনসভায় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস সহ দলীয় কর্মকর্তারা। সভায় আনুমানিক পাঁচ হাজারের মতো দলীয় কর্মী-সমর্থক অংশগ্রহণ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *