অসমে ১১,৫০০ শিল্পীর সমবেত সর্ববৃহৎ বিহু নৃত্যের প্রস্তুতি, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডভুক্তের প্রচেষ্টা, জানান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব

১৪ এপ্রিলের মূল অনুষ্ঠানে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী, আমন্ত্রণ বেশ কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল, জি২০ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে

গুয়াহাটি, ২৮ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : অসমে ১১,৫০০ জন শিল্পীর সমবেত সর্ববৃহৎ বিহু নৃত্যের প্রস্তুতি চালিয়েছে সরকার। লক্ষ্য গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে কৃতিত্ব নিবন্ধন। এজন্য জোরদার প্রচেষ্টা চলছে, জানান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

সাংস্কৃতিক পরিক্ৰমা এবং শিল্প ও বাণিজ্য দফতরের মন্ত্রী বিমল বরা এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, মেডিক্যাল এডুকেশন, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্ৰযুক্তি দফতরের মন্ত্রী কেশব মহন্তকে দুপাশে বসিয়ে আজ জনতা ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানান, পয়লা বৈশাখের আগের দিন আগামী ১৪ এপ্রিল রঙালি বিহু তথা বহাগ বিহুর দিন গুয়াহাটির সরুজাই স্টেডিয়ামে সর্ববৃহৎ বিহু নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে বিশ্ব রেকর্ড করার চেষ্টা চলছে। ওই অনুষ্ঠানে ১১,৫০০ জন নৃত্যশিল্পী এবং ঢোলক-বাদক সমবেতভাবে অসমের ঐতিহ্যবাহী লোকনৃত্য পরিবেশন করবেন। লক্ষ্য গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে কৃতিত্ব নিবন্ধন করা।

মুখ্যমন্ত্রীর আশা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। তিনি বলেন, এর একমাত্র লক্ষ্য, বিহুকে জনপ্রিয় করা এবং বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যাওয়া৷ ড. শর্মা বলেন, ৪০০ জন অভিজ্ঞ কোরিওগ্রাফার বিহু নৃত্যশিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেবেন৷ এজন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কলাক্ষেত্রে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে৷

১৪ এপ্রিলের মূল অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া, বেশ কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের পাশাপাশি জি২০ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। অতিরিক্তভাবে ওই নৃত্যোৎসবে রংঘর, এইমস গুয়াহাটি, পলাশবাড়ি এবং শুয়ালকুচি সেতুর উদ্বোধন কর্মসূচিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে, জানান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব।

তিনি জানান, গোটা কার্যক্রম মসৃণ এবং দক্ষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরিবেশিত পারফরম্যান্সের একটি ভিডিও গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ জমা দেওয়া হবে। শ্রীমন্ত শংকরদেব কলাক্ষেত্রে মাস্টার প্রশিক্ষকরা নির্দেশনা প্রদান করবেন। প্রশিক্ষণ সেশনে অংশগ্রহণ করবেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বিহু নৃত্যশিল্পীরা।

জানান, জেলা বিহু কমিটি অংশগ্রহণকারীদের বাছাই এবং প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে। আগামী ১৪ এপ্রিল পারফরম্যান্সের জন্য ৬ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ড্রেস রিহার্সাল হবে।

ড. শর্মা জানান, ১১,৫০০ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৭০ শতাংশ মেয়ে এবং ৩০ শতাংশ ছেলে৷ এঁদের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে৷ বিহু নৃত্যশিল্পীদের গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃক স্বতন্ত্র স্বীকৃতির সুবিধার্থে একটি ডেডিকেটেড পোর্টালে রেজিস্ট্রি করতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অংশগ্রহণকারীরা পরিবহণ ব্যয় বাবদ ৩০০ টাকা এবং পোশাক ভাতা বাবদ ৩,০০০ টাকা পাবেন৷ এছাড়া সরকার উপযুক্ত সাম্মানিকও প্রদান করবে তাঁদের।

আরও তথ্য দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিহুকে সর্বব্যাপী প্রচারের উদ্দেশ্যে সরকার আগামীকাল ১ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত পাওয়ার লুম গামোছা, মেখেলা-চাদর এবং পাওয়ার লুম অ্যারোনাইস (বড়ো জনজাতীয় উত্তরীয়) বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞাটি ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পের ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানো এবং মেশিনে তৈরি ওই সব সামগ্রী ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করার একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ।

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, আগামী বছরের শুরুতে সরুসজাই স্টেডিয়ামে সাত দিনের বিহু উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। ওই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঐতিহ্যমণ্ডিত অসমিয়া সংস্কৃতি এবং পারফরম্যান্স পরিবেশন করা হবে। এ বছরের একমাত্র ফোকাস, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিহুকে জনপ্রিয় করার পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক পর্যটককে আকর্ষিত করা৷মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রচারিত অনুষ্ঠানটি নিয়ে বিহু-উৎসাহী এবং অসমের মানুষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। যাঁরা অসমকে নিজের বাড়ি বলে মনে করেন, তাঁদের কাছে এই অনুষ্ঠান নিশ্চিতভাবে গর্বের মুহূর্ত। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বিশ্ব রেকর্ড গড়ার এই প্রয়াস রাজ্যের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে একটি বড় মাইলফলক হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে সক্ষম হবে।এছাড়া কোকরাঝাড়ের পাটগাঁওয়ে বড়ো সাহিত্য সভার ৬২-তম বার্ষিক সম্মেলনে যে অনুষ্ঠানের ঘোষণা করেছিলেন, তারও প্রস্তুতি অবিলম্বে শুরু হবে বলে আজ জানান মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *