করিমগঞ্জ (অসম), ৩ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : সমগ্র দেশ ও রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত জি-২০ সামিট উপলক্ষে রাজ্যের মহাবিদ্যালয়গুলিতে বিভিন্ন সচেতনামূলক কার্যসূচির আয়োজন করা হচ্ছে। এরই অঙ্গ হিসেবে ৩ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার করিমগঞ্জ কলেজের ইন্টারন্যাল কোয়ালিটি অ্যাসিয়োরেন্স সেল বা আইকিউএসি, এনএসএস ও এনসিসি-র ব্যবস্থাপনায় এবং করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় “সবুজ ভারতের দিকে একটি পদক্ষেপ” এই ধারণার উপর ক্ষুদ্র উদ্যোগ উন্নয়ন ও টেকসই চাষাবাদ বিষয়ে জেলার কর্ণমধুস্থিত বাজার ঘাট জিপি কার্যালয় প্রাঙ্গণে এক দিবসীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ওই এলাকার কৃষক, জনগণ ও ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় পৌরোহিত্য করে করিমগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ ড. রামানুজ চক্রবর্তী জি-২০ সামিটে থাকা দেশগুলির ক্ষুদ্র উদ্যোগ ও কৃষিকার্য সম্পর্কে এবং আমাদের দেশে এর উন্নয়ন ও সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি স্পষ্টভাবে উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন।
এতে অংশগ্রহণ করে আকবরপুর কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রধান ও মুখ্য বিজ্ঞানী ড. পুলকাভা চৌধুরী জানান যে কোভিড মহামারীর পরিস্থিতিতে যখন সমগ্র বিশ্ব ও দেশের শিল্পোদ্যোগগুলি সংকট পূর্ণ পরিস্থিতিতে ছিল, তখন আমাদের দেশে কৃষি ক্ষেত্রে কিন্তু তার ব্যতিক্রমী উন্নয়ন হয়েছে। তিনি কৃষিতে ব্যবহৃত নিত্যনতুন যন্ত্র ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং কৃষি বিপ্লবের কথা উল্লেখ করে বলেন যে আমাদের দেশ তৃতীয় সবুজ বিপ্লবের জন্য তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি মাশরুম, শাক-সবজি, সুপারি, মাছ ইত্যাদি চাষ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত করান। তিনি রাসায়নিক সারের সাথে জৈবিক সার প্রয়োগের পরামর্শ দেন এবং জৈবিক সার প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও নেনো ফার্টিলাইজার সম্পর্কে পরামর্শ দেন এবং উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে আহ্বান রাখেন।
কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ড. হিমাংশু মিশ্র এদিনের কর্মশালায়, এক বছরে একই জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ করার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনিও জৈবিক সার প্রয়োগ করতে পরামর্শ দেন।
কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের অপর বিজ্ঞানী ড. পুরবি তামুলি ফুকন হর্টিকালচারের উপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে খাদ্যের ঘাটতিও বেড়ে যায় তাই তিনি কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে আহবান জানান। তিনি বলেন কৃষিতে অনেক সময় লোকসান হলেও হর্টিকালচারের মাধ্যমে তা পূরণ করা সম্ভব হয়। জায়গা থাকলে নার্সারি গড়ার পরামর্শ দেন। তিনি ফ্লরিকালচার, ফুড প্রসেসিং ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন। ইচ্ছুক কৃষকদের যে কোন সমস্যার জন্য কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ড. অলকেশ ডেকা পশু পালন সম্পর্কে কৃষকদের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন। এতে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের অন্য আরেকজন বিজ্ঞানী ড. রাইসিংজা ইংলেংপি সবুজ বিপ্লব গড়ে তুলতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি সঠিক সার প্রয়োগ করতে, বেশি সার প্রয়োগের ফলে শাক-সবজি এবং প্রকৃতির উপর ঘটে যাওয়া এর অপকারিতা ও বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি কৃষি ক্ষেত্রের মাটি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন এবং জৈবিক ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে বলেন। ভার্মি কম্পোস্ট সেটআপ করে কৃষকদের আয় বাড়াতে উৎসাহিত করেন।
এদিনের কর্মশালায় লিড ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার অশোক দেব উপস্থিত কৃষক ও অন্যান্যদেরকে ভর্তুকিযুক্ত ঋণের জন্য সঠিক প্ল্যান ও দলিল পত্র জমা করতে আহ্বান জানান। সবশেষে করিমগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ ড. রামানুজ চক্রবর্তী কর্মশালায় উপস্থিত কৃষক, জনগণ, ছাত্র-ছাত্রী এবং কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিজ্ঞানীদেরকে ধন্যবাদ জানান। তিনি ”জব সিকার না হয়ে জব প্রোভাইডার” হতে আহ্বান রাখেন।