BRAKING NEWS

করোনার প্রকোপে বৃদ্ধি, ত্রিপুরায় ১০ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত নৈশকালীন কারফিউ জারি

আগরতলা, ৯ জানুয়ারি (হি. স.) : ত্রিপুরায় করোনার লাগামহীন বৃদ্ধি মোকাবিলায় ১০ জানুয়ারি থেকে সারা রাজ্যে নৈশকালীন কারফিউ জারি করা হচ্ছে। ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ওই আদেশ বলবত থাকবে। আগামীকাল রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে। আজ সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এই ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, গত কয়েকদিনে করোনার সংক্রমনে মারাত্মক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, পুর নিগম এলাকায় সংক্রমণের হার ১৬.৯৫ শতাংশ।
এদিন তিনি বলেন, সারা দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। তার প্রভাব ত্রিপুরাতেও পড়তে শুরু করেছে। তাই, গতকাল এবং আজ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক হয়েছে। তিনি জানান, আজ মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকে মুখ্য সচিব সমস্ত বিষয় তুলে ধরেছেন। তাতে, কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।


তিনি বলেন গত দুই দিনে করোনার সংক্রমনে মারাত্মক বৃদ্ধি হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। কিন্ত, শুধু পুর নিগম এলাকায় সংক্রমণের হার ১৬.৯৫ শতাংশ হয়ে গেছে। তেমনি পশ্চিম জেলায় সংক্রমণ ১১.৫৬ শতাংশে পৌছে গেছে।


তাঁর দাবি, করোনা মোকাবিলায় নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ানো হয়েছে। বিমানবন্দর, রেলওয়ে স্টেশন, এবং চূড়াইবাড়ি চেকপোস্ট দিয়ে আসা সমস্ত যাত্রীদের করোনার নমুনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারীতে অতি মাত্রায় সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, করোনার তৃতীয় ঢেউ-এ ত্রিপুরায় সংক্রমণ ৩২ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হবেন প্রায় ১৬১৭ জন। তিনি আরও বলেন, তৃতীয় ঢেউ-এ শিশুদেরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এক্ষেত্রে ৩৮৮০ জন শিশু আক্রান্ত হবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে ১৯৪ জন শিশু মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।


তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী অভয় দিয়ে বলেন, পরিস্থিতি যতই জটিল হোক মোকাবিলায় ত্রিপুরা সরকার সব রকম ভাবে প্রস্তুত রয়েছে। প্রত্যেক জেলায় শুধু শিশুদের জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাতে শুধু আগরতলায় শিশুদের জন্য ২১৬টি শয্যা রয়েছে। এছাড়াও প্রত্যেক জেলায় অন্তত ৫০টি শয্যা প্রস্তুত রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


এদিন তিনি জানান, ত্রিপুরায় বর্তমানে করোনা চিকিত্সার সমস্ত সামগ্রী পর্যাপ্ত রয়েছে। সাথে টিকাকরণ জোরকদমে চলছে। তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের এখন পর্যন্ত ৭৭০৫৭ জন টিকা নিয়েছেন। লক্ষ্যমাত্রা ২.১৩ লক্ষ নেওয়া হয়েছে। এদিকে করোনার সংকট মোকাবিলায় চুক্তির ভিত্তিতে শ্যাশ্য কর্মীদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ত্রিপুরা সরকার। এক্ষেত্রে ৫০০-৭০০ চিকিত্সক সহ স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগ করা হবে তথ্য মন্ত্রী জানিয়েছেন।


আজ তিনি সকলকে সাবধানতা অবলম্বন করে থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, ১০ জানুয়ারি রাত ৯টা থেকে ২০ জানুয়ারি ভোর ৫টা পর্যন্ত সারা ত্রিপুরায় নৈশকালীন কারফিউ জারি করা হচ্ছে। তাতে, কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। যা প্রশাসন কঠোর পালন করবে। তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলায় মাক্স পরিধানের বিকল্প নেই। তাছাড়া সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা এবং ভিড় স্থান এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।


করোনা নৈশকালীন কারফিউ সংক্রান্ত মুখ্য সচিবের জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, বন্ধ ঘরে এক তৃতীয়াংশ জনসমাগম নিয়ে বৈঠকে অনুমতি রয়েছে। কিন্ত, প্রকাশ্যে সমস্ত ধরনের জনসমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সিনেমা হল, ক্রীড়াক্ষেত্র, পার্ক, বার ইত্যাদি স্থানে ৫০ শতাংশ মানুষের উপস্থিতিতে অনুমতি রয়েছে। জিম এবং সুইমিং পোলেও এক তৃতীয়াংশ মানুষকে অনুমতি দেওয়া হবে।


সমস্ত দোকান এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সাথে শপিং কমপ্লেক্স, বিউটি পার্লার, সেলন সকাল ৬টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। এক্ষেত্রে সামাজিক দুরত্ব অবশ্যই মানতে হবে। রেস্টুরেন্ট এবং ধাবাও রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত ৫০ শতাংশ মানুষের উপস্থিতির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে সব রকম মেলা এবং প্রদর্শনীতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তীর্থমুখ মেলায় করোনা বিধি মেনে পালনে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী স্থান থেকে জনসমাগমের জন্য এবছর সরকারী বাস দেওয়া হবে না। পাশাপাশি, আগরতলা পুর নিগম এলাকার ব্যবসায়ীকে ওই মেলায় গিয়ে স্টল না দেওয়ার জন্য ত্রিপুরা সরকার অনুরোধ জানিয়েছে।


এদিকে, বিয়ে বাড়িতে সর্বোচ্চ ১০০ মানুষের উপস্থিতির অনুমতি দেওয়া হবে। শেষকৃত্যে সর্বোচ্চ ২০ জন থাকতে পারবেন। সমস্ত ধর্মীয় স্থান খোলা থাকবে, কিন্ত করোনা বিধি অবশ্যই পালন করতে হবে। এদিন তথ্য মন্ত্রী জানিয়েছেন, পশ্চিম জেলা ছাড়া সিপাহীজলা জেলায় ১.৮৬ শতাংশ, খোয়াই জেলায় ০.৫২ শতাংশ, গোমতি জেলায় ১.৫১ শতাংশ, দক্ষিণ জেলায় ১.৩৯ শতাংশ, ধলাই জেলায় ০.৯৫ শতাংশ, ঊনকোটি জেলায় ১.৫৬ শতাংশ এবং উত্তর ত্রিপুরা জেলায় ১.৫১ শতাংশ সংক্রমণের হার রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *