BRAKING NEWS

Chief Minister conveyed his condolences : প্রয়াত বামফ্রন্টের আহ্বায়ক বিজন ধর, শোক ও শ্রদ্ধা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ১১ অক্টোবর (হি.স.) : সিপিআই (এম)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, রাজ্য বামফ্রন্টের আহ্বায়ক এবং পার্টির প্রাক্তন ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর আজ সোমবার ভোরে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রয়াত হয়েছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী, একমাত্র মেয়ে, তাঁর আত্মীয় পরিজন ও অসংখ্য গুনমুগ্ধ।


আজই সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে তাঁর মরদেহ আগরতলা এমবিবি বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছে। আগামীকাল তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। তাঁর মৃত্যুতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রয়াতের বাসভবনে গিয়ে তাঁর মরদেহে পুস্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তাঁর পরিবারের সদস্যদের সমব্যথা জানিয়েছেন এবং সান্তনা দিয়েছেন। শোক প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার।


গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিজন ধর কোভিডে আক্রান্ত হয়ে জিবি হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন। তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণ জটিল আকার ধারণ করায় চিকিৎসকরা তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ১৯ সেপ্টেম্বর তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। হাসপাতালের চিকিৎসকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সেখানে তাঁর অবস্থার ক্রমশ অবনতি ঘটতে থাকে এবং আজ ভোর ৪.০৭-টায় তিনি প্রয়াত হন।


রাজ্যের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রয়াত অনন্তকৃষ্ণ ধরের পরিবারে ১৯৫১ সালের ৩ জানুয়ারি তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের (অধুনা বাংলাদেশ) কুমিল্লা জেলার বরোরা থানার অন্তর্গত শিয়ালোড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রাবস্থাতে রানিরবাজার স্কুলে পাঠরত অবস্থায় তিনি ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ছাত্রদের বিভিন্ন সমস্যা ও দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন সংগঠিত করা এবং তাঁদের একটি রাজ্যভিত্তিক সংগঠন গড়ে তোলার কাজে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ষাটের দশকে রাজ্যের উত্তাল ছাত্র আন্দোলনের অবিসংবাদী সংগঠন এসএফআই-এর সভাপতি ছিলেন বিজন ধর। ১৯৬৯ সালে তিনি সিপিআই (এম)-এর সভ্যপদ লাভ করেন। জরুরি অবস্থার সময় কমরেড বিজন ধর কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। কিন্তু পরে গ্রেফতার হয়ে জেলে অন্তরীণ ছিলেন বিজন ধর।


১৯৭৮ সালে পার্টির দশম রাজ্য সম্মেলনে তিনি পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য হন। দীর্ঘদিন তিনি পার্টির সোনামুড়া মহকুমা কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ সালে রাজ্য সম্পাদক মন্ডলিতে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। ২০০৮ সাল থেকে পর পর তিনটি রাজ্য সম্মেলনে তিনি পার্টির রাজ্য সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই গুরুদায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালে পার্টির ১৭-তম কংগ্রেসে তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। ২০১৮ সাল থেকে তিনি রাজ্য বামফ্রন্টের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে বামফ্রন্টের ঐক্য সুদৃঢ়, সংহত করা ও শরিক দলগুলোর মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক বজার রাখার ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত ধৈর্য ও আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন, এক বিবৃতিতে দাবি করেছে সিপিএম।


বিজন ধরের প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। এক শোক বার্তায় তিনি সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, সিপিআইএম দলের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক তথা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক বিজন ধরের প্রয়াণে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার সদগতি কামনা করছি। ঈশ্বরের কাছে আমার প্রার্থনা, শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের এই বিয়োগ-ব্যথা সহ্য করার শক্তি প্রদান করুন। শোক প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ। তিনি সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, সিপিআইএম দলের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক তথা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক বিজন ধরের প্রয়াণে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। ঈশ্বরের কাছে আমার প্রার্থনা, শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের এই কঠিন সময়ে সহ্য করার শক্তি প্রদান করুন। তাঁর বিদেহী আত্মার সদগতি কামনা করছি।


আজ সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে বিজন ধরের মরদেহ আগরতলা এমবিবি বিমানবন্দরে পৌঁছেছে। সেখান থেকে তাঁর মরদেহ কের চৌমুহনি, তার পর পার্টির মুখ্য কার্যালয় এবং সেখান থেকে বাধারঘাটে নিজের বাড়িতে নেওয়া হয়েছে। এদিন রাতেই তাঁর মরদেহ সোনামুড়া পার্টি অফিসে নেওয়া হবে। শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য আগামীকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত সোনামুড়া পার্টি অফিসেই থাকবে তাঁর মরদেহ। এর পর আগরতলার উদ্দেশ্যে আনা হবে তাঁকে। আগরতলায় দুপুর ১-টা পর্যন্ত তাঁর মরদেহ ভানু ঘোষ স্মৃতি ভবনে শায়িত থাকবে। দুপুর ১-টায় তাঁর মরদেহ নিয়ে শোক মিছিল করে শেষকৃত্যের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *