নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১০ সেপ্টেম্বর।। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জল জীবন মিশনে বাড়ি বাড়ি পানীয়জল পৌছাতে মাসে ত্রিশ হাজার সংযোগ দিতে হবে। আজ পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান দফতরের পর্যালোচনায় এই বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে। তাছাড়া, জলের উৎস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রাজস্থান, হরিয়ানা এবং সিকিমের থেকে অভিজ্ঞতা অর্জনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভিশন ডকুমেন্ট বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ত্রিপুরার প্রতিটি পরিবারে পরিশ্রুত পানীয়জল সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ত্রিপুরা সরকার। এজন্য মিশন মুডে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রত্যেক কর্মী ও অফিসারকে স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে। এই মিশন ১০০ শতাংশ সফল করার জন্য ত্রিপুরা সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহায়তা করা হবে। আজ প্রজ্ঞাভবনে জল জীবন মিশনের উপর আয়োজিত পানীয়জল ও স্বাস্থ্যবিধি দপ্তরের পর্যালোচনা সভায় একথা বলেন দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। পানীয়জল ও স্বাস্থ্যবিধি দপ্তরের মন্ত্রীর পৌরহিত্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাজ্যের আটটি জেলার কাজকর্ম পর্যালোচনা করা হয়েছে। সভায় উপস্থিত ছিলেন দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, দপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার রাজীব দেববর্মা এবং অধিকর্তা রাজীব মজুমদার।
সভায় মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী জনকল্যাণে গৃহীত সরকারি প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এবং গুণগতমান বজায় রেখে সম্পন্ন করার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। সভার শুরুতে উত্তর জেলার বিভিন্ন মহকুমায় জল জীবন মিশনের কাজকর্ম নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। সেখানে এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে পূর্ত দপ্তরের বিভিন্ন সাবডিভিশনের এসডিওগণ জল জীবন মিশনের কাজের অগ্রগতি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বাড়ি বাড়ি পানীয়জলের সংযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া কতদূর এগিয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়ণ করতে গিয়ে কি কি সমস্যা এবং প্রতিবন্ধকতা আসছে সে বিষয়গুলো তাঁরা তুলে ধরেছেন। দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী সমস্যাগুলো নিরসনে স্থানীয় প্রশাসনিকস্তরে কথা বলার পরামর্শ দেন। এরপর ঊনকোটি জেলা ও ধলাই জেলার কাজকর্ম পর্যালোচনা করা হয়েছে৷
২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে জল জীবন মিশনে বাড়ি বাড়ি পরিশ্রুত পানীয়জলের সংযোগ পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে দ্রুতগতিতে কাজ শেষ করতে পর্যালোচনা সভায় গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পানীয়জল ও স্বাস্থ্যবিধি দপ্তরের মন্ত্রী বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রাজ্যের প্রতিটি বাড়িতে পানীয়জলের সংযোগ দিতে হবে। লক্ষ্যমাত্রায় পৌছাতে আরও কিছু সময় বাকি থাকলেও এই প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে এবং চ্যালেঞ্জের সাথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাই প্রত্যেক আধিকারিক এবং কর্মীকে আরও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। মহকুমা স্তরের আধিকারিকদের স্বচ্ছতা এবং আন্তরিকতার সাথে নিজেদের কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘হর ঘর মাকান, হর ঘর পানি’। তার এই স্বপ্নকে দায়িত্ব নিয়েই বাস্তবায়ন করতে হবে। চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রত্যেককে কাজ করতে হবে। ডিভিশন, সাবডিভিশন পর্যায়ে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে। প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে৷
তিনি বলেন, পানীয়জল প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজস্থান, হরিয়ানা, সিকিম রাজ্যে কিভাবে কাজ হচ্ছে সেই অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এবং সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য দপ্তরের আধিকারিকদের পাঠানো হবে। নিজ নিজ এলাকায় জল জীবন মিশন প্রকল্প রূপায়ণে স্থানীয় বিধায়ক, এমডিসি, বিএসি চেয়ারম্যান, পঞ্চায়েত স্তরের জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক আধিকারিকদের সাথে সমন্বয় রেখে কাজ করতে ইঞ্জিনিয়ারদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ দেন তিনি।
সভায় দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে প্রত্যেক পাড়া বা এলাকায় পানীয়জলের স্থায়ী উৎস গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন। এক্ষেত্রে এক একটা উৎস যাতে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ বছর স্থায়ী হয় সেটা দেখতে বলেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি বাড়ি পানীয়জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার জন্য মাসে অন্তত ৩০ হাজারের অধিক সংযোগ প্রদান করতে হবে। সে লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করতে হবে। এই পর্যালোচনা সভায় জলের পাম্পগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য বিদ্যুৎ নিগমের সিএমডি এম এস কেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। পানীয়জলের উৎস সচল রাখতে প্রয়োজনে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপনের পরামর্শ দেন দপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার রাজীব দেববর্মা। সভায় রাজ্যের আটটি জেলা থেকে দপ্তরের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।