নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ আগস্ট৷৷ ত্রিপুরায় মাধ্যমিকের মতো উচ্চ মাধ্যমিকেও পাশের হার যেমন বেড়েছে, তেমনি উচ্চ মাধ্যমিকেও মেয়েরাই ছেলেদের টেক্কা দিয়ে এগিয়ে গেছে৷ মেয়েদের এই ধারাবাহিক সাফল্য নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য বলেই সকলে মনে করছেন৷ আজ রবিবার ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা ফাজিল-এর ফলাফল ঘোষণা করেছে৷ প্রকাশিত ফলাফলে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হার বেড়ে হয়েছে ৯২.২৯ শতাংশ৷ নিয়মিতদের পাশের হার বেড়ে হয়েছে ৯৫.২০ শতাংশ৷ তেমনি মাদ্রাসা ফাজিল আর্টসে পাশের হার বেড়ে ৮৭.৫০ শতাংশ এবং থিওলজিতে পাশের হার বেড়ে ৮৮.২৪ শতাংশ হয়েছে৷
আজ বিকেলে পর্ষদ কার্যালয়ের কনফারেন্স হল-এ এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা ফাজিল-এর ফলাফলের ঘোষণা করেছেন ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি ড় ভবতোষ সাহা৷ তিনি জানান, উচ্চ মাধ্যমিকে জেলাস্তরে পাশের হারে শীর্ষে রয়েছে উত্তর ত্রিপুরা জেলা৷ আগামী শনিবার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মার্কশিট বিলি করবেন পর্ষদ কর্তৃপক্ষ৷ মাধ্যমিকের মতো উচ্চ মাধ্যমিকেও ১০০ শতাংশ পাশ করেছে এমন সুকলের সংখ্যা ৪২৬৷
পর্ষদ সভাপতি বলেন, করোনা পরিস্থিতির দরুন দেশ, রাজ্য সহ গোটা বিশ্ব এখন উদ্বেগে রয়েছে৷ যে কারণে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে রাজ্যের সুকলগুলিতে পঠনপাঠন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে৷ তবে অনলাইন এবং বিভিন্ন বৈদ্যুতিন মাধ্যমে কিছু ক্লাশের ব্যবস্থা হয়েছিল৷ তিনি বলেন, ২০২১ সালের পরীক্ষা মার্চের পরিবর্তে মে মাসে হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু কোভিড পরিস্থিতি অবনতির জেরে গত ১ মে পরীক্ষা স্থগিত রাখার ঘোষণা করা হয়েছিল৷ তবে এর পরও কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় রাজ্য সরকার কর্তৃক নিযুক্ত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির সুপারিশ এবং পর্ষদ কর্তৃক পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের পরীক্ষা সম্পর্কিত জনমত যাচাইয়ের ভিত্তিতে ১৬ মে পর্ষদের পরীক্ষাগুলি বাতিল করা হয়েছে৷
তিনি জানান, পরীক্ষাগুলি বাতিলের পর ২১ জুন ১০ সদস্যের এক বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছিল৷ বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পর্ষদ এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা ফাজিল-এর ফলাফল প্রকাশ করেছে৷ পর্ষদ সভাপতি বলেন, এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২৭,১৫৪ জন৷ সেই অর্থে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় গড় পাশের হার ৯২.২৯ শতাংশ৷ গত বছর গড় পাশের হার ছিল ৭৬.৫৩ শতাংশ৷ এ বছর নিয়মিতদের পাশের হার ৯৫.২০ শতাংশ৷ গত বছর নিয়মিতদের পাশের হার ছিল ৮০.৮০ শতাংশ৷ তিনি বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকে এডিসি এলাকায় অবস্থিত সুকলগুলিতে পাশের হার ৯২.৩৭ শতাংশ৷ যা গত বছর ছিল ৭৩.৬৮ শতাংশ৷ এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকে এসটি এবং এসসিদের পাশের হার যথাক্রমে ৯২.০৯ এবং ৯৫.২৩ শতাংশ৷ উচ্চ মাধ্যমিকে জেলাস্তরে সবর্োচ্চ পাশের হার উত্তর ত্রিপুরা জেলায়৷ এই জেলায় পাশের হার ৯৬.৪৭ শতাংশ৷ উচ্চ মাধ্যমিকে জেলাস্তরে সর্বনিম্ন পাশের হার গোমতি জেলায়৷ এই জেলায় পাশের হার ৯২.৪৭ শতাংশ৷
ড় সাহা বলেন, বাকি জেলাগুলির মধ্যে ধলাই জেলায় পাশের হার ৯৪.০১ শতাংশ, খোয়াই জেলায় পাশের হার ৯৩.৮৮ শতাংশ, দক্ষিণ জেলায় পাশের হার ৯৬.১৬ শতাংশ, সিপাহিজলা জেলায় পাশের হার ৯৬.২৯ শতাংশ, উনকোটি জেলায় পাশের হার ৯৪.৬৮ শতাংশ এবং পশ্চিম জেলায় পাশের হার ৯৫.৮৯ শতাংশ৷ পর্ষদ সভাপতি জানান, আরবিক, হিন্দি ম্যানেজমেন্ট, মিজো, মিউজিক, সোসিওলজি, এই ছয়টি বিষয়ে ১০০ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাশ করেছে৷
তিনি বলেন, এ বছর ২০১৯-২০ সালে রাজ্যের বিদ্যালয়গুলিতে চালু হওয়া এনসিইআরটি সিলেবাসের প্রথম ব্যাচের ছাত্রছাত্রীদের প্রথম বোর্ড পরীক্ষা ছিল৷ এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কলা বিভাগে পাশের হার ৯৮.৬৫, বিজ্ঞান বিভাগে ৯৮.২৮ এবং বাণিজ্য বিভাগে পাশের হার ৯৬.২২ শতাংশ৷ অপরদিকে মাদ্রাসা ফাজিল আর্টস বিভাগে পাশের হার ৮৭.৫০ এবং থিওলজি বিভাগে পাশের হার ৮৮.২৪ শতাংশ৷ পর্ষদ সভাপতি আরও জানান, প্রকাশিত ফলাফলে যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী সন্তুষ্ট হতে পারবে না, তারা ইচ্ছে করলে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর পরীক্ষা দিতে পারবে৷ আর সেই ফলাফলই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে৷ সেই সাথে এই পরীক্ষায় যারা কম্পার্মেন্টাল পাবে তারা এবং উচ্চ মাধ্যমিকে আজ যাদের ফল প্রকাশ হয়নি এমন সিঙ্গল সাবজেক্ট, ইক্যুইভেলেন্স এবং ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার্থীদেরও এই পরীক্ষা দিতে হবে৷ এর জন্য কোনও পরীক্ষা ফি দিতে হবে না৷
পর্ষদ সভাপতি বলেন, পাশের ক্ষেত্রে এবং গ্রেড পাওয়ার দিক দিয়ে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা সংখ্যায় অনেক বেশি৷ উচ্চ মাধ্যমিকে ১১,৮৭২ জন ছেলে পাশ করেছে এবং ৫৭৪ জন গ্রেড পেয়েছে৷ সেই তুলনায় ১২,৪১১ জন মেয়ে পাশ করেছে এবং ৮২৬ জন গ্রেড পেয়েছে৷