কলকাতা, ১৩ এপ্রিল (হি. স.) : শীতলকুচির গুলি চালনার ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টে জোড়া জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। একটি মামলা দায়ের করেছে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ। অপর মামলাটি দায়ের করেছেন আমিনুদ্দিন খান। দুটি মামলাই মঙ্গলবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল ভাস্করণ নায়ার রাধাকৃষ্ণণের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তার আগেই হাইকোর্টের এক্তিয়ার ও এই মামলার ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠল।
মূলত প্রশ্ন উঠেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের হাতেই যখন নির্বাচনের সব দায়দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে এবং তার সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত বলে মেনে নেওয়া হচ্ছে সেখানে হাইকোর্ট কীভাবে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা গ্রহণ করল। আর যদি কমিশন সেই মামলায় দোষী সাব্যস্তও হয় তাহলেও হাইকোর্ট কিভাবে তাঁকে শাস্তি দেবে। এই প্রশ্নই তুলেছেন রাজ্যের আইনজীবিদের একাংশ।
এখন যে আইনজীবিরা এই মামলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁদের বক্তব্য, এক তো রাজ্য সরকারের তরফে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। তাই দ্বিতীয়বার আবার নতুন করে কোন ক্ষতিপূরণ কে দেবে বা হাইকোর্টই বা কাকে তা দিতে বলবে? তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নেওয়া হয় মামলা শেষে আদালত কমিশন বা কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপর সেই ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দিল, তাও কী মানা হবে? কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনী বিষয়টি নিয়ে তো সুপ্রিম কোর্টে চলে যাবে। সেখান থেকেই তাঁরা এই বিষয়ে স্থগিতাদেশ বার করে আনবে।
দ্বিতীয় প্রশ্ন উঠেছে, দোষীদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সেখানে সব থেকে বড় প্রশ্ন ঘটনার পরে তো কোনও তদন্তই শুরু হল না এখনও পর্যন্ত। এখন সামনে আসেনি ঘটনার কোনও ফুটেজ। সামনে আসেনি ওই দুই বুথে ওয়েবকাস্টিংয়ের ফুটেজও। যেখানে তদন্তই হয়নি সেখানে দোষী কে বা কারা দোষী হিসাবে শাস্তি পাবেন। আর হাইকোর্টই বা তাঁদের কী শাস্তি দেবে?
তাহলে এই দুই জোড়া জনস্বার্থ মামলার কী কোনও গুরুত্বই নেই। আইনজীবিদের দাবি, অবশ্যই আছে। যে তদন্ত এখনও শুরু হয়নি তা শুরু করার নির্দেশ দিতেই পারে আদালত। আর সেক্ষেত্রে কমিশনও উত্তর দিতে বাধ্য। এছাড়াও আদালত কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনী উভয়ের কাছেই জবাবদিহি চাইতেই পারে কেন গুলি চলেছিল বা ঘটনার কোনও ফুটেজ কেন পাওয়া যাচ্ছে না। আদালত এটাও জানতে চাইতে পারে যে কার নির্দেশে গুলি চালানো হয়েছিল আর গুলি চালনার ক্ষেত্রে কেন গাইডলাইনস মানা হল না।
চতুর্থ দফার ভোটে কোচবিহারের শীতলকুচিতে দুটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলি চালনার ঘটনায় মোট ৫জন মারা গিয়েছেন। সেই ঘটনার জেরেই কলকাতা হাইকোর্টে দুটি পৃথক পৃথক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। এদিনই তাঁদের একত্রে শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে। মামলা দুটি মূলত করা হয়েছে, মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে। মামলাকারীদের বক্তব্য, ‘ভোটদানের সময় ভোটারদের ওপর যেভাবে গুলি চালানো হয়েছে, তা বেআইনি এবং নজিরবহীন। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে৷ তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছেন। নিরীহ মানুষদের গুলি করে হত্যা করেছে।